একটানা বৃষ্টির জেরে এখনও রায়না, মেমারি, খণ্ডঘোষ-সহ জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন। কোথাও রাস্তা, বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, কোথাও বা নষ্ট হয়েছে ফসল। মঙ্গলকোটের গ্রামে শনিবার দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন এক ব্যক্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার থেকে ত্রাণ বিলিতে জোর দিল প্রশাসন। জরুরি ভিত্তিতে এ দিন খোলা রাখা হয় সেচ দফতরও।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার জানান, শনিবার পর্যন্ত রায়না, খণ্ডঘোষ, মেমারি, বর্ধমান, গলসির বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২৪০০ মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাতারের নাসিগ্রাম, কাশীপুর, গুসকরা, আউশগ্রামের গেঁড়াই ভাতকুণ্ডা প্রভৃতি জায়গার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সব্জি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিদের দাবি। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই আমন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের ৮০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এরপরেও বৃষ্টি না থামলে বীজতলার ক্ষতি হতে পারে বলে চাষিদের আশঙ্কা। রায়নার শ্যামসুন্দর গ্রামের আনিসুর রহমানের আশঙ্কা, ‘‘এ রকম চলতে থাকলে চাষে বড়সড় ক্ষতি হতে পারে।’’ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বৃষ্টি কম হয়েছে। কিন্তু গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি।
টানা বৃষ্টির জেরে বেশ কয়েকটি জায়গায় যোগাযোগের ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত বলে জানা গিয়েছে। ভাতারের কাছে বর্ধমান-কাটোয়া রোডের উপর খড়ি নদীর উপর সেতুটির একাংশ ভেঙে যাওয়ায় তার পাশ দিয়েই চলছিল যাতায়াত। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত যান চলাচল। বাস মালিকদের তরফে তুষারকান্তি ঘোষ জানান, এর জেরে প্রায় ১৬০টি বাসকে প্রতিদিন ১০কিলোমিটার ঘুরে কুড়মুন হয়ে বর্ধমান থেকে কাটোয়া যেতে হচ্ছে। জল পার করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা কাটতে হয়েছে। এর জেরে গুসকরা-বলগনা রুটের বাসগুলিকে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শনিবার বিকেল থেকে বর্ধমান-কাটোয়া রোডে বাস চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডল বলেন, ‘‘শুনেছি বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তা কাটা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে পূর্ত দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’
এ দিনই গোয়াল ঘরে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান মঙ্গলকোটের কুলশুনো গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম শেখ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। সেলিমকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর পড়শি খালেকুজ্জমান শেখ তড়িদাহত হন। তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল শেখ, খাঁদু শেখরা জানান, গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টির জেরেই দেওয়াল আলগা হয়ে গিয়েছিল।

কুলশুনো গ্রামে ভেঙে পড়েছে বাড়ি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৮ হাজার কিউসেক ও শনিবার সকালে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে মোট ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া রয়েছে। এর জেরে জলস্তর বেড়েছে ডিভিসি সেচ ক্যানেল, কুনুর, বাঁকা, ব্রাহ্মণী নদীতে। তবে জল এখনও বিপদসীমার উপর নেই বলেই দাবি সেচ দফতরের।
পরিস্থিতি সামাল দিতে খণ্ডঘোষ ব্লকের ৫০ জন এবং ভাতার ও রায়নার ১৭৩ জনকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। ভাতারের ব্লক প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বর্ধমান কাটোয়া রোডের উপর নরজার সেতুটি নতুন করে তৈরির চেষ্টা চলছে। খণ্ডঘোষ, রায়না, ভাতার-সহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামগুলিতে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। এখনও পর্যন্ত হাজার তিনেক ত্রিপল বিলিও করা হয়েছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। আরও ৩০ হাজার ত্রিপলের আবেদন জানানো হয়েছে।
তবে প্রশাসনের তরফে ত্রাণে জোর দেওয়া হলেও ভাতারের বাসিন্দা মানসী কর্মকারদের মতো অনেকেই জল না সরা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বলে জানান।