Advertisement
২০ মে ২০২৪

বালির ট্রাকে বেহাল বহু রাস্তা, ক্ষোভ

নিষেধের মধ্যেও অভিযোগ উঠছিল, তবে গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিধি উঠে যেতে বালি তোলা যেন বাঁধ ভেঙেছে। সঙ্গে দামোদর ও অজয়ের বিভিন্ন খাদান থেকে বালি তুলে প্রতিদিন কয়েক’শো বালির ট্রাক যাতায়াতে বেহাল হয়ে পড়ছে খাদান লাগোয়া রাস্তা।

ভারী ট্রাক যাতায়াতে খন্দ নলা গ্রামের রাস্তায়, জল জমে হাল আরও খারাপ।

ভারী ট্রাক যাতায়াতে খন্দ নলা গ্রামের রাস্তায়, জল জমে হাল আরও খারাপ।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

নিষেধের মধ্যেও অভিযোগ উঠছিল, তবে গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিধি উঠে যেতে বালি তোলা যেন বাঁধ ভেঙেছে। সঙ্গে দামোদর ও অজয়ের বিভিন্ন খাদান থেকে বালি তুলে প্রতিদিন কয়েক’শো বালির ট্রাক যাতায়াতে বেহাল হয়ে পড়ছে খাদান লাগোয়া রাস্তা। প্রতিবাদে কখনও রাস্তা কাটছেন গ্রামবাসীরা, কখনও পঞ্চায়েতের কর্তারা নিজেই নেমে গিয়েছেন বালির গাড়ি ধরতে। কিন্তু ভবি ভুলছে না।

কাটোয়ার ফুলবাগান থেকে চুড়পুনী কিংবা মঙ্গলকোটের শ্যামবাজারের রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, কোঁয়ারপুর, খেঁড়ুয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামে বালি খাদান রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু খাদানের বৈধ কাগজপত্রও নেই। তার উপর, দিনের পর দিন বালিবোঝাই গাড়ি চলাচল করায় ওই সব রাস্তায় পিচের আস্তরণ উঠে কোথাও বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, কোথাও আবার পাথর উঠে সাইকেল আরোহী, বাস যাত্রীদের কাছে বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তা। নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, “গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে বালির বড় বড় ডাম্পার যাওয়াই এই হাল। ইষ্টনাম জপতে জপতে রাস্তা পেরোতে হয়।’’ মঙ্গলকোট ছাড়া বেহাল রাস্তার জন্য রায়না, গলসি, খণ্ডঘোষের বাসিন্দারাও বালির ট্রাক বা ডাম্পারকেই দায়ী করছেন।

কাটোয়ার ফুলবাগান থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রাস্তাও বেহাল। নিজস্ব চিত্র।

সপ্তাহখানেক আগে আউশগ্রামের মোড়বাঁধ-নওয়াপাড়ার বাসিন্দারা বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য একজোট হয়ে রাস্তা কেটে দিয়েছিলেন। যাতে গ্রামের ভিতর দিয়ে বালি বোঝাই গাড়ি কমানো যায়। কিন্তু গাড়ির যাতায়াত কমানো তো দূর, উল্টে মাফিয়ারদের হাতে কয়েকজন গ্রামবাসীকে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ছিল, খাদান থেকে খেত জমির উপর রাস্তা তৈরি করে বালি বোঝাই গাড়ি যাচ্ছে। ফলে, খেত জমির দফারফা হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় গ্রামবাসীরাই একজোট হয়ে প্রতিবাদের রাস্তায় নেমেছিলেন।

অক্টোবরের গোড়ায় আবার আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগর পঞ্চায়েতের কুড়ুল, পল্লিশ্রী (সংসদ নম্বর ১৬) গ্রামের চাষিরা জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতি বছরই তাঁদের গ্রাম বন্যার কবলে পড়ে। চাষে প্রচুর ক্ষতি হয়। ২০০০ সালের বন্যার পর গ্রামের একটা অংশ কার্যত তলিয়ে যায়। এ ছাড়া নদীর একটা বাঁক তৈরি হওয়ায় বৃষ্টি হলেই গ্রামের ভিতর জল ঢুকে যায় বলেও তাঁদের দাবি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সময় নদীর খাতে বালি খাদান তৈরি হয়। তারপর থেকে যথেচ্ছ বালি তোলায় নদীর স্রোত এখন গ্রামের পাশ দিয়ে বইছে। সেচ দফতরের বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাস, ব্লক দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।

দক্ষিণ দামোদর এলাকাতেও বালি কারবারিদের দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী নমিতা রায় বেআইনি বালি খাদান বন্ধের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। আগেও তিনি দলবল নিয়ে রাতে অভিযান চালিয়ে বালি খাদান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নমিতাদেবীর অভিযোগ, জামালপুরের দুটি খাদানে কোনও নথি ছাড়াই বালির কারবার চলছে। পুলিশ প্রশাসনও কার্যত চুপ করে রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। সে জন্যই বেআইনি বালি খাদান বন্ধের জন্য প্রশাসনের কর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছি।” ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত সমিতির অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই দুটি খাদানে গিয়ে বালি তোলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন নমিতাদেবী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বেশ কয়েকটি ট্রাক, ডাম্পার আটকও করেছিল।

তাহলে কী সত্যিই প্রশাসন চুপ? জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, ‘‘গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও আমরা নিয়মিত বালি বোঝাই গাড়ি ধরপাকড় করছি। নির্দিষ্ট নথি না থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ গত কয়েক দিনে কয়েকশো বালিবোঝাই গাড়ি আটক করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vehicles Sand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE