Advertisement
E-Paper

‘চিৎকার করলেই গুলি’, হুমকি দিয়ে ডাকাতি দোকানে

ভরদুপুরে দুর্গাপুরের কোকআভেন থানা এলাকার এসবি মোড়ের কাছে জেসি অ্যাভিনিউয়ের একটি গয়নার দোকানে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৭
ঘটনার পরে তদন্তে পুলিশ। রবিবার দুর্গাপুরের গয়নার দোকানে। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরে তদন্তে পুলিশ। রবিবার দুর্গাপুরের গয়নার দোকানে। নিজস্ব চিত্র

দুপুর আড়াইটা। দোকানে ক্রেতা নেই। কর্মীরা গল্পে মশগুল। আচমকা তিন জন ‘ক্রেতা’ এসে দেখতে শুরু করল গয়না। খানিক বাদেই আওয়াজ। তার পরেই হুড়মুড়িয়ে দোকানে ঢুকল আরও দু’জন। মুহূর্তে তারা কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ডাকাতি করল। রবিবার ভরদুপুরে দুর্গাপুরের কোকআভেন থানা এলাকার এসবি মোড়ের কাছে জেসি অ্যাভিনিউয়ের একটি গয়নার দোকানে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

দোকানের কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দুপুরে ওই সময়ে তাঁরা পাঁচ জন ছিলেন। আচমকা তিন জন যুবক ‘ক্রেতা’ পরিচয় দিয়ে আংটি দেখতে চায়। কর্মীরা জানান, আঙুলের মাপ মিলতে সমস্যা হচ্ছিল। এই ভাবে বেশ খানিকটা সময় কেটে যায়। আচমকা, ওই কর্মীরা গেটের দিক থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পান। সে দিকে তাকাতেই দেখা যায়, দোকানের একমাত্র নিরাপত্তা কর্মী ছিটকে পড়ছেন। সঙ্গে সঙ্গে দোকানে ঢোকে আরও দু’জন। সকলেই মুহূর্তের মধ্যে জামার তলা বা পকেট থেকে বার করে আগ্নেয়াস্ত্র। প্রত্যেক কর্মীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে দুষ্কৃতীরা। দোকানের কর্মী কুণাল সূত্রধর বলেন, ‘‘আমাদের হাত মাথার উপরে তুলতে বলা হয়। ওরা বলে, চিৎকার করলেই গুলি করে দেবে। আমরা ভয়ে চুপ করে যায়।’’

দোকানের কর্মীরা জানান, প্রথমে তাঁদের সবাইকে দোকানের সামনে একটি ছোট ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তাতে সকলের জায়গা হয়নি। তার পরে শো-রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের ঘরে ওই পাঁচ কর্মীকেই হাত বেঁধে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুষ্কৃতীরা জেনে নেয়, নগদ টাকা কোথায় থাকে, ভল্ট কোথায় রয়েছে ইত্যাদি খুঁটিনাটি তথ্য। সেই তথ্য ঠিক কি না জানতে দু’জন কর্মীকে নিয়ে ভল্ট, নগদ টাকা রাখার জায়গা পরীক্ষা করায় দুষ্কৃতীরা। তার পরে ওই ঘরে ফের দু’জন কর্মীকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা টেনে দেওয়া হয়। এবং বলা হয়, ঘর থেকে বেরনোর চেষ্টা করলেই গুলি চলবে।

ওই পাঁচ কর্মী পুলিশকে জানিয়েছেন, কাঁচের আলমারি ভেঙে গয়না বার করার আওয়াজ পাওয়া যায়। এমনকি, দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে হিন্দি ও বাংলায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও শোনা যায়। কর্মীরা জানান, মিনিট কুড়ি পরে আচমকা সব শান্ত হয়ে যায়। তার পরেই বাইরে থেকে শুরু হয় চিৎকার। এর পরে ওই কর্মীরা ঘরে থেকে বেরিয়ে দেখেন, দোকানের প্রায় সর্বস্ব হাওয়া।

দোকানের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে কয়েক কেজি সোনা, হিরে ও কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। দোকানকর্মীরা পুলিশকে জানান, প্রথমে দোকানে ঢোকা তিন দুষ্কৃতীর হাতে ব্যাগ ছিল না। তাঁদের অনুমান, শেষে যে দু’জন ঢুকেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ব্যাগ ছিল।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। দোকানের সামনে রাখা কয়েকটি ফুলের টব ভাঙা পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দার পুলিশকে জানান, একটি বড় সাদা রঙের গাড়িতে চড়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। তবে কী ভাবে ওই পাঁচ জন এলাকায় পৌঁছয় তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এলাকায় এসেছিল পুলিশ জানায়, যাওয়ার সময়ে দুষ্কৃতীরা সিসি ক্যামেরার ‘ডিভিআর বাক্স’টি নিয়ে পালিয়েছে। ফলে সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, রীতিমতো নজর রেখে ছক করে দোকানে ডাকাতি হয়েছে। আর তাই ডাকাতির সময় হিসেবে দুপুরকে বেছে নেওয়া হয়। কারণ, সেই সময়ে ক্রেতাদের ভিড় থাকে না। তা ছাড়া বড় গয়নার দোকান হলেও সেখানে এক জন মাত্র নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। কিন্তু তাঁর হাতে বন্দুক ছিল না।

তবে জনবহুল এলাকায় কী ভাবে হল ডাকাতি? লাগোয়া দোকানদারেরা জানান, দুপুর হওয়ায় অনেকেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ক্রেতাও প্রায় ছিল না। বেশ কিছু দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া গয়নার দোকানের অবস্থান-সহ অন্য নানা কারণে দোকানের ভিতরের অবস্থা দেখা যায় না। তা ছাড়া মূল রাস্তা থেকে খানিকটা ভিতরে দোকানটি। দোকানের সামনে বড় চাতাল রয়েছে, যেখানে গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। এই সমস্ত কারণেই দোকানের ভিতরে কী চলছে, তা হঠাৎ করে বোঝা সম্ভব নয়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘বিহার বা ঝাড়খণ্ডের কোনও দুষ্কৃতীদল এই ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। আসানসোল দক্ষিণ থানার আড়াডাঙায় একটি গাড়ি মিলেছে। মনে হচ্ছে, ডাকাতির সঙ্গে এই গাড়িটির যোগ রয়েছে। গাড়ি থেকে দু’টি ছুরি ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। দুষ্কৃতীদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। স্থানীয় কেউ জড়িত কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’

Robbery Jewelry Shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy