Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩

নজরদারিতে খামতি, চলছে বালি পাচার

তা ছাড়া প্লাস্টিকে বালি ঢেকে তার উপরে মাটি চাপিয়েও অনেক সময় পাচার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। সেই বালি পৌঁছে স্থানীয় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কাছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৬
Share: Save:

অবৈধ বালির কারবার রুখতে জেলার নানা জায়গায় প্রায়শই চলছে অভিযান। কিন্তু বৈধ বালির কারবারি থেকে এলাকাবাসী সকলেরই অভিযোগ, নানা কারণে অভিযানের ‘রুট ম্যাপ’-এ ব্যতিক্রম, কাঁকসার শিবপুর থেকে বসুধা পর্যন্ত অজয়ের পাড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা। গত বুধবার বিএলএলআরও (কাঁকসা) মার খাওয়ার ঘটনা এই অভিযোগকেই ফের সামনে এনেছে।

Advertisement

কিন্তু এই কুড়ি কিলোমিটার এলাকাতেই বালি মাফিয়াদের রমরমা কেন? এলাকাবাসীর অভিযোগ, এর নেপথ্যে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথম অভিযোগ, প্রশাসন যখন এই এলাকায় কালেভদ্রে অভিযান চালায়, সেই সময়ে খবর পৌঁছে যায় বালি মাফিয়াদের কাছে। ফলে দ্রুত বালি তোলার যন্ত্র-সহ নানা জিনিসপত্র সরিয়ে ফেল বালি মাফিয়ারা। মাস খানেক আগেই এই এলাকায় অভিযান চলাকালীন স্থানীয় দেউল ঘাটে গিয়ে কারও দেখা পাননি প্রশাসনের কর্তারা। দ্বিতীয় অভিযোগ, এই এলাকার যেখানে অবৈধ বালিঘাটগুলি রয়েছে ভৌগলিক ভাবে সেখানে পৌঁছনাটা বেশ সময় সাপেক্ষ। কী রকম তা? প্রশাসনেরই এক কর্তা জানান, অবৈধ বালিঘাটগুলিতে যাওয়ার জন্য রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে। সাতকাহনিয়া, দেউল, বসুধা লাগোয়া একাধিক অবৈধ ঘাট এই ‘ভৌগলিক সুযোগ’ নিয়েই চলছে অভিযোগ।

বালি তুলে পাচার করার ক্ষেত্রে পুলিশের নজর এড়াতে বেশ কিছু ‘পন্থা’ নিচ্ছে এই এলাকার মাফিয়ারা। এক পুলিশ কর্তার অভিজ্ঞতা, অনেক সময়েই দেখা যায়, বীরভূমের বৈধ বালিঘাটের ‘চালান’ জাল করে বালি পাচার করছে অবৈধ বালির কারবারিরা। সম্প্রতি এমনই একটি বালিবোঝাই ডাম্পারকে আটকও করে কাঁকসা থানার পুলিশ। তা ছাড়া প্লাস্টিকে বালি ঢেকে তার উপরে মাটি চাপিয়েও অনেক সময় পাচার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। সেই বালি পৌঁছে স্থানীয় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কাছে।

এই কারবারে ‘মুনাফা’ও নজরকাড়া বলে নানা এলাকার যুবকদের একাংশ এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলেও দাবি বৈধ বালি ব্যবসায়ীদের। কী রকম তা? এক বালি ব্যবসায়ী জানান, একটি বৈধ ঘাট থেকে তোলা একশো কিউবিকফিট বালির দর ছশো থেকে সাতশো টাকা। অবৈধ বালিঘাট থেকে বালি নিলে সেই দাম অনেকটাই কম। সেখানে এক ট্রাক্টর বালির প্রথমবার দাম নেওয়া হয় ৬০০ টাকা। পরে যতবার বালি নেওয়া হবে ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। ফলে এই ধরনের ‘অবৈধ’ বালির ভাল বাজার রয়েছে। ই-টেন্ডারে বালি তোলার বরাত পাওয়া এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, ‘‘এর ফলে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।’’

Advertisement

এক দিকে লাভ, অন্য দিকে ‘নজরদারি’তে দুর্বলতা, এই জোড়া কারণে কাঁকসা ব্লকের অন্তত সাতটি জায়গা থেকে অবৈধ উপায়ে বালি তোলা হচ্ছে বলে দাবি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তার। সেই ঘাটের দখল নিয়ে অনেক সময়েই নানা গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল, বোমাবাজি হয়েছে অতীতে। তা হলে উপায়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এই এলাকায় বালির অবৈধ কারবার রুখতে স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে কাজ হবে না। অভিযানে নামাতে হবে উচ্চপর্যায়ের বাহিনী।

মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। সরকারি ভাবে অন্য কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.