Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Shelter for Vagabonds

শীতে কাঁপছেন ভবঘুরেরা, তবু অর্ধেক ফাঁকা ‘অভয়াশ্রম’

কেউ বা আগুন পোহাচ্ছেন। অথচ, পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ‘অভয়াশ্রম’ নামে ২০১৭-য় দেড় কোটি টাকা খরচে তৈরি ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থলে ৬০ জন থাকতে পারেন। কিন্তু রয়েছেন অর্ধেক, ৩০ জন।

শীতে ভবঘুরে। দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে।

শীতে ভবঘুরে। দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫২
Share: Save:

ঠান্ডায় কুঁকড়ে গিয়েছিল শরীর। আক্ষেপ ধরা পড়ল গলায়, “আমাদের কথা কেউ ভাবে না।” অন্য এক জন পাশ থেকে আবার জানালেন, শুনেছেন তাঁদের জন্য না কি আশ্রয়স্থল তৈরি করেছে পুরসভা। কিন্তু সেখানে নানা নিয়ম। তাই যান না ওখানে।

— প্রথম জন, রাজকুমার বাল্মীকি। দ্বিতীয় জন রোহিস পাসি। দৃশ্যটা দুর্গাপুর স্টেশনের বাইরের চত্বর। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ১০-১২ জন ভবঘুরে রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও শুয়ে রয়েছেন। ভরসা, কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া কম্বল। কেউ বা আগুন পোহাচ্ছেন। অথচ, পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ‘অভয়াশ্রম’ নামে ২০১৭-য় দেড় কোটি টাকা খরচে তৈরি ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থলে ৬০ জন থাকতে পারেন। কিন্তু রয়েছেন অর্ধেক, ৩০ জন।

কেন এই হাল?

স্টেশনের বাইরে থাকা ওই ভবঘুরেদের এক জন প্রথমে শীতের বর্ণনা দেন। বলেন, “পা থেকে মাথা পর্যন্ত কম্বল মুড়ি দিয়েও শীত আটকানো যাচ্ছে না। খুব শীত!” তিনি জানালেন, শহরে যে ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, সেটা জানেনই না তিনি। অন্য এক জন অবশ্য জানান, ওই অভয়াশ্রমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু তিনি নিজেই যেতে চাননি। কেন, তা-ও বলেন। বলে চলেন, “কোনও আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে সেখানকার নিয়ম মেনে চলতে হবে। কিন্তু স্টেশনে থাকলে স্বাধীন।”

ওই ভবঘুরের দল জানাচ্ছে, দিনে বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন তাঁরা। বিকেলে স্টেশন চত্বরের বাইরের ঠিকানায় ফেরেন। শীতে অনেক সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বা ব্যক্তিগত ভাবে খাবার দেওয়া হয়। তবে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, কেউ অতিরিক্ত কম্বল পেলে তা তাঁরা পরিবারের বাকিদের জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ-ও দেখা গিয়েছে, তা বিক্রিও করা হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করেই এক ভবঘুরের পাল্টা বক্তব্য, “কী করব! আমাদের বাড়ির লোকজনগুলোকে তো বাঁচাতে হবে। তাই কষ্ট হবে জেনেও, এটা করতে হয়।”

‘অভয়াশ্রম’ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, রাতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ভবঘুরেদের এখানে আনার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু স্টেশনের ভবঘুরেদের আনতে পারেননি। তাঁর সংযোজন: “অনেকে এসেও ফিরে গিয়েছেন।” একই কথা বলছেন সংস্থাটির আধিকারিক শীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই অবস্থায় আবার ওই ভবঘুরেদের আশ্রয়স্থলে নিয়ে আসার জন্য বোঝানো হবে, জানিয়েছেন দুর্গাপুরের পুর-প্রশাসক
অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE