রেললাইনের উপরে এই বিদ্যুতের তার নিয়েই সমস্যা। নিজস্ব চিত্র
শিলান্যাসের পরে দশ বছর কেটে গিয়েছে। ৫৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৬ কিলোমিটারে ট্রেন চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শ্রীখণ্ড থেকে কাটোয়া অংশে কবে চালু হবে, তা এখনও প্রশ্ন যাত্রীদের কাছে। বর্ধমান-কাটোয়া লাইনে এই সাত কিলোমিটারে ট্রেন কবে চলবে, নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারছেন না রেলের আধিকারিকেরাও। এক আধিকারিক বলেন, “দিন কয়েকের মধ্যেই রেললাইন ঠিক থাকার শংসাপত্র মিলবে। কিন্তু তার পরেও রেলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগ থেকে ছাড়পত্র মেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
এই লাইনে অগস্টের শেষ সপ্তাহে বলগোনা থেকে শ্রীখণ্ড পর্যন্ত একজোড়া ট্রেন চলাচল শুরু করে। চার মাস কেটে গেলেও বাকি সাত কিলোমিটারে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না কেন? জানা গিয়েছে, কাটোয়া স্টেশনর আগে সিপাইদিঘিতে রেললাইনের উপর দিয়ে ‘হাইটেনশন’ তার গিয়েছে। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, রেল ট্র্যাক থেকে উচ্চপরিবাহী বিদ্যুতের তারের তফাত হতে হবে অন্তত ১৬ মিটার, যা এখানে রয়েছে ৯ মিটারেরও কম। ওই লাইন রেলের নিয়ম মোতাবের উঁচু করতে গেলে নতুন করে হাইটেনশন তারের দু’টি টাওয়ার তৈরি করতে হবে। প্রতিটির জন্য তিন কাঠা করে ৬ কাঠা জায়গা দরকার। তা জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ পরিবহণ সংস্থা (ডব্লুবিটিসিএল)।
ওই সংস্থার কাটোয়ার সহকারী বাস্তুকার সৈকত দত্ত বলেন, “জমি মিলছে না বলে বিদ্যুতের খুঁটি সরানো যাচ্ছে না। আগে ন্যারোগেজ লাইন থাকায় এবং বৈদ্যুতিন ট্রেন চলাচল না করায় কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বার তার নির্দিষ্ট দূরত্বে না থাকলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।” সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জমি পেতে বেশ কয়েকজন জমি মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল। মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) দফতরে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু জমি মালিকেরা বেশি দাম দাবি করায় সমাধানসূত্র মিলছে না। আবার কিছু জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতায় সমস্যা বাড়ছে। সৈকতবাবু জানান, কাটোয়া-আমোদপুর শাখাতেও একই সমস্যা ছিল। তা কেটে গিয়েছে। তাঁর আক্ষপে, ‘‘সিপাইদিঘির কাছে জমির মালিকেরা বুঝতে চাইছেন না যে টাওয়ার তৈরির পরে নীচে চাষ করা যাবে!”
২০০৭ সালের ৩০ জুন এই লাইনের শিলান্যাস করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। তার ৫ বছর পরে বর্ধমান থেকে বলগোনা পর্যন্ত ট্রেন চালু হয়। টাকার অভাবে বাকি কাজ আটকে ছিল। কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভার এনটিপিসি নেওয়ার পরে চুক্তি অনুযায়ী তারা মূল খরচের অর্ধেক টাকা (১১২ কোটি ৫৭ লক্ষ) রেলকে দিলে ফের কাজ শুরু হয়। কিন্তু জমি-জটে আটকে রয়েছে শ্রীখণ্ড থেকে কাটোয়ার ট্রেন।
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে অনেকগুলি জমির সমস্যা মিটিয়েছি। এই বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ শুধু জমি জট নয়, কাটোয়া স্টেশনে প্রযুক্তিগত কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের আশা, ‘‘সব সমস্যা মিটিয়ে নতুন বছরের গোড়াতেই বাকি লাইনে ট্রেন চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy