Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ

ছাত্রীর মৃত্যুতে ডেন্টাল কলেজে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা

ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অতনু নাগ বলেন, “এক জন অসুস্থ পরীক্ষার্থী হলের ভিতর সহানুভূতি আশা করেছিল। তার বদলে তাঁকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হল। শেষ পর্যন্ত সবাইকে ছেড়ে চলে গেল ও। হাসপাতালের মৃত্যু শংসাপত্রতেও মানসিক যন্ত্রণা কথা রয়েছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

হৃদযন্ত্রের অসুখে ভোগা এক পরীক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠল বর্ধমান ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এর জেরে পরীক্ষা দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। রাতে কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলে পরের দিন সকালে মারাও যান তিনি। সোমবার এ নিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতার সহপাঠী ও ছাত্র সংসদের সদস্যেরা। পরে ছাত্র সংসদের তরফে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের ‘মানসিক নির্যাতনে’ তাঁদের সহপাঠী মারা গিয়েছে বলে বর্ধমান থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অতনু নাগ বলেন, “এক জন অসুস্থ পরীক্ষার্থী হলের ভিতর সহানুভূতি আশা করেছিল। তার বদলে তাঁকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হল। শেষ পর্যন্ত সবাইকে ছেড়ে চলে গেল ও। হাসপাতালের মৃত্যু শংসাপত্রতেও মানসিক যন্ত্রণা কথা রয়েছে।’’

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির রিষড়া মোড় পুকুরের কেসি সেন রোডের বাসিন্দা স্বাতী সিংহ বর্ধমান ডেন্টাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘কনজারভেটিভ’ পত্রের প্র্যাকটিক্যাল ও মৌখিক পরীক্ষা ছিল। ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টার সময় রিষড়া থেকে ট্রেনে বর্ধমানে আসেন তিনি। সাড়ে ৮টা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত—টানা সাড়ে ৬ ঘন্টা পরীক্ষা হলে ছিলেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে রাত ১০টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি মারা যান।

স্বাতীর সহপাঠী মহম্মদ আমদাদুল হক, হাউস স্টাফ অরিত্র দোশিয়াদের অভিযোগ, “পরীক্ষা চলাকালীন বারবার বমি করেছে স্বাতী। তার পরেও বসার জায়গা দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁর সঙ্গে পরীক্ষকেরা দুর্ব্যবহার করেছেন। তাতে মদত জুগিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা।’’ তাঁদের দাবি, পরীক্ষা চলাকালীন একটু বসার জায়গা আর একটু সহানুভূতি দেখালে অকালে বন্ধুকে হারাতে হত না। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা শুরুর আগেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে স্বাতীর অসুস্থতা নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল। মৃতার বাবা উপেন্দ্র সিংহ বলেন, “আমি নিজে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে মেয়ের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তার পরেও মানসিক চাপ তৈরি করা হল। একটু সহানুভূতি দেখালে মেয়েটা আমাদের কাছেই থাকত।’’ আর এক সহপাঠী মৈনাক মিত্রের দাবি, “পরীক্ষা চলাকালীন এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে স্বাতী যে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পরিস্থিতি ছিল না। বর্ধমান থেকে গাড়ি করে বাড়ি পাঠানো হয়।’’

সহপাঠীদের অভিযোগ, স্বাতী বারবার অসুস্থ বোধ করছে জানানোর পরেও ওর পরীক্ষা আগে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। আগে ছাড়া পেলে চিকিৎসাটাও আগে শুরু করা যেত। অন্বেষা বর্মন নামে এক ছাত্রীর দাবি, “চিকিৎসক হয়ে হবু চিকিৎসকের পাশে দাঁড়াতে পারল না। তাঁদের কাছে সমাজ কী আশা করবে?”

কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য ছাত্র সংসদের অভিযোগ মানতে নারাজ। অধ্যক্ষ জীবন মিশ্র বলেন, “স্বাতী ছোট থেকেই হৃদযন্ত্র নিয়ে ভুগছিলেন। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল কিন্তু সফল হয়নি। ওই দিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উনি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে ঘটনাটি ঘটেছে। কলেজে ছেলেরা আমার কাছে এসেছিল। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তদন্ত করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Agitation Burdwan Dental College and Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE