Advertisement
১৮ মে ২০২৪
গরমে বিপদ বেশি, মত বিশেষজ্ঞদের

ভোট শেষেই রমরমা অবৈধ খাদানের

ভোটের মুখে দিন কয়েক বন্ধ ছিল খাদানগুলো। কিন্তু ভোট মিটতেই ফের রমরমিয়ে চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগের থেকেও জোরকদমে চলছিল কয়লা কাটা। বারাবনির সরিষাতলিতে অবৈধ খাদানে ধসের পরে এমনই দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গরমে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া কয়লার স্তরে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়েই ধসের বিপত্তি তৈরি হয়েছে।

জামুড়িয়ার বেলবাঁধে সম্প্রতি উদ্ধার হয় বেশ কয়েক টন অবৈধ কয়লা। নিজস্ব চিত্র।

জামুড়িয়ার বেলবাঁধে সম্প্রতি উদ্ধার হয় বেশ কয়েক টন অবৈধ কয়লা। নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
বারাবনি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

ভোটের মুখে দিন কয়েক বন্ধ ছিল খাদানগুলো। কিন্তু ভোট মিটতেই ফের রমরমিয়ে চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগের থেকেও জোরকদমে চলছিল কয়লা কাটা। বারাবনির সরিষাতলিতে অবৈধ খাদানে ধসের পরে এমনই দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গরমে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া কয়লার স্তরে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়েই ধসের বিপত্তি তৈরি হয়েছে।

রবিবার রাতে সরিষাতলিতে একটি বেসরকারি সংস্থার বন্ধ খনির আশপাশে বেআইনি খাদানে ধস নামে। পুলিশ গিয়ে কয়লার চাঁই সরিয়ে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আশপাশের হোসেনপুর, কাপিষ্ঠা, রসুনপুর গ্রামের জনা কয়েক বাসিন্দা সে দিন সেখানে কয়লা কাটতে গিয়েছিলেন। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, আরও কয়েক জন ধসে চাপা পড়েন। যদিও পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে এক জনেরই হদিস মিলেছে।

এই ঘটনার পরেই এলাকায় অবৈধ কয়লা খনন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে নানা রাজনৈতিক দল। মঙ্গলবার সরিষাতলির ওই খনির সামনে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। ছিলেন দলের নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। সোমবার সিপিএম-কংগ্রেস এবং বিজেপি একই দাবিতে আলাদা ভাবে বিক্ষোভ দেখায় বারাবনি থানায়। দুর্ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, ভোটের ঠিক আগে এই এলাকায় অবৈধ খাদানগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু ভোট মিটে যেতে সেগুলিতে রমরমিয়ে কয়লা কাটা শুরু হয়েছে। এলাকার নানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাবনির জামগ্রাম, পুঁচরা ও পানুড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায় সব চেয়ে বেশি বেআইনি খাদান চলছে। গৌরান্ডির খয়রাবাঁধ কোলিয়ারি লাগোয়া খয়েরকানালি জঙ্গলেও বেশ কিছু খাদান চলছে। সালানপুরের ডাবর, সংগ্রামগড়, বনজেমাহারি, জামুড়িয়ার বেলবাঁধ, ধান্ডাডিহি, শ্রীপুর এবি পিট, মডার্ন সাতগ্রাম, কুলটির দামাগড়িয়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় খাদান চলছে।

ভোটের পরেই কেন এমন হুড়মুড়িয়ে কয়লা কাটা শুরু হল? ওই সব এলাকার অনেকের দাবি, ভোটের আগে যে প্রশাসনিক কড়াকড়ি ছিল, এই মুহূর্তে তা নেই। তাই বেআইনি খাদানগুলিতে কয়লা চোরেদের দাপিয়ে বেড়ানো সহজ হয়েছে। তার উপরে, ভোটে জিতে কোন পক্ষ সরকার গড়বে, তারা বেআইনি খাদান নিয়ে কী পদক্ষেপ করবে, কারও জানা নেই। তার আগে তাই যতটা বেশি সম্ভব কয়লা পাচারের চেষ্টা চলছে বলে খনি অঞ্চলের নানা সূত্রের দাবি। এই কারবারে পুলিশের একটি অংশেরও মদত রয়েছে বলে বাসিন্দাদের অনেকের দাবি।

কিন্তু খনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রখর গরমে অবৈধ খাদানগুলি বেশি বিপজ্জনক। ইসিএলের প্রাক্তন অফিসার রঞ্জিত লায়েক জানান, এই অবৈধ খাদানগুলি অবৈজ্ঞানিক উপায়ে খোঁড়া হয়। মাটির উপরের অংশ ধরে রাখার কোনও ব্যবস্থা না রেখে গভীর সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়। প্রচণ্ড গরমে মাটির উপরের অংশ শুকিয়ে ফাটল ধরে। আবার মাটির তলায় জলের স্তরও ক্রমশ কমে। এই পরিস্থিতিতে মাটি ও কয়লার স্তর ঝুরঝুরে হয়ে যায়। ফলে, কয়লার স্তর কাটতে গেলেই চাঁই ধসে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। রবিবার রাতে বারাবনির ঘটনাই এর প্রমাণ, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

তবে খনি অঞ্চল জুড়ে অবৈধ খাদানের রমরমা ও কয়লা পাচারে পুলিশের একাংশের যুক্ত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কমিশনারেটের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, যখন যেখানে বেআইনি ভাবে কয়লা কাটার খবর মেলে, অভিযান চালানো হয়। বারাবনির ঘটনা সম্পর্কে এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতার বক্তব্য, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে খনিটি বন্ধ আছে। তাই এলাকার লোকজন কয়লা তুলতে গিয়েছিল।’’

Tags: Experts, Coal mines, vote

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coal jamuria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE