Advertisement
E-Paper

অচল নোটের কোপে বিয়ের ভোজ

পকেটে, হেঁসেলে— দু’জায়গাতেই টান। কোথাও ইলিশ ভাপার বদলে দই কাতলা কোথাও বা চার রকম মিষ্টির বদলে শুধুই রসগোল্লা— অচল নোটের ধাক্কায় এ বার বাঙালির বিয়েবাড়ির মেনুতেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

সুব্রত সীট ও সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
নোট-ভোগান্তির রেশ পড়েছে হেঁসেলেও। —নিজস্ব চিত্র।

নোট-ভোগান্তির রেশ পড়েছে হেঁসেলেও। —নিজস্ব চিত্র।

পকেটে, হেঁসেলে— দু’জায়গাতেই টান। কোথাও ইলিশ ভাপার বদলে দই কাতলা কোথাও বা চার রকম মিষ্টির বদলে শুধুই রসগোল্লা— অচল নোটের ধাক্কায় এ বার বাঙালির বিয়েবাড়ির মেনুতেও কাটছাঁট করতে হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিয়েবাড়ির কর্তাদের আক্ষেপ, এ ভাবে হয়ত অতিথি আপ্যায়নে খানিক ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানবাড়ির বকেয়া টাকা খুচরোয় মেটাতে গিয়ে এমনটা ছাড়া আর উপায় নেই। উল্টো দিকে, এই পরিস্থিতিতে ব্যবসাও মার খাচ্ছে বলে দাবি ক্যাটারিং ব্যবসায়ী। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জিনিসত্রের দামও।

সোমবার বিয়ে ছিল কাটোয়ার টেলিফোন ময়দান এলাকার বাসিন্দা অমিয় দে’র ছেলের। অমিয়বাবু ঠিক করেন, অতিথিদের পাতে থাকবে ইলিশ ভাপা আর ফুলকপি চিংড়ি। সেই মতো বরাতও দেওয়া হয় ক্যাটারারকে। কিন্তু নোটের গেরোই বাজেটে টান পড়েছে। বুধবার, বউ ভাতে তাই ইলিশের বদলে পাতে পড়ল স্রেফ কুচো চিংড়ি।

সুবোধ স্মৃতি রোডের বাসিন্দা সুকান্ত মিত্রেরও মেয়ের বিয়ে হয়েছে ওই দিন। পার্সের বদলে মেনুতে রাখা হয় মুরগির মাংস। কেন এমনটা? সুকান্তবাবুর কথায়, ‘‘একে হাতে নগদ টাকা কম রয়েছে। তার উপরে বাজারে ভাল সাইজের পার্সের জোগানও কম। উপায় না থাকায় নিমন্ত্রিতদের সংখ্যাও কমাতে হয়েছে। এ সব করেও অনেক টাকা এখনও বকেয়া পড়ে রয়েছে।’’

কেন্দ্রীয় অর্থসচিব শক্তিকান্ত দাসের ঘোষণার পরেও বিয়েবাড়ির টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। বুধবারও তার রেশ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ির সদস্যদের মুখে। যেমন কাটোয়ার আখড়ার বাসিন্দা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, পাঁচ দিন হত্যে দেওয়ার পরে মেয়ের বিয়ের দিন, সোমবার দু’লাখ টাকা পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা পেয়েও দ্রুত পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।

উল্টো দিকে, অচল নোটের ফেরে ক্যাটারিংয়ের ব্যবসাতেও এ বার মন্দা বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কাটোয়ার ক্যাটারার মালিক মাণিক দাস, মৃণাল দাসদের বক্তব্য, ‘‘প্রচুর বকেয়া পড়ে রয়েছে। কিন্তু আমাদের তো মহাজনের কাছ থেকে মাছ-মাংস কিনতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি।’’ বাঙালির পাতে মাছের পদ কম থাকার কারণেও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। সঞ্জয় দাস নামে এক জন জানান, মাছ-মাংস, দুইই থাকলে প্লেট প্রতি দাম ধরা হয় ৩২০ টাকা। এখন পদের কাটছাঁট হওয়ায় তা আড়াইশোতে ঠেকেছে।

এই পরিস্থিতিতে মাছের জোগান ও দাম চিন্তায় রেখেছে ক্যাটারারদের। কী রকম? কাটোয়ার বিভিন্ন মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চিংড়ি-ইলিশের জোগান বেশ কম। মাছ বিক্রেতা তুহিন দত্তের কথায়, ‘‘পাবদা কেজি পিছু ১৫০ টাকা করে বেড়েছে। এমনকী রুই-কাতলাও বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা করে। ৭০ গাড়ির বদলে এখন মাত্র ১৫টা রুই-কাতলার গাড়ি ঢুকছে। বাজারে বড় ইলিশ প্রায় নেই।’’ একই পরিস্থিতি জেলার শিল্পাঞ্চল, দুর্গাপুরেও। দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের একটি ক্যাটারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘২৭ নভেম্বর ভোজ বাড়ি রয়েছে। ভেটকি বা চিংড়ির পদ থাকলে সমস্যা হতো।’’ তবে যেখানে যেখানে ভেটকির পদ রয়েছে, সেখানে খানিক চিন্তা রয়েছে। বেনাচিতি এলাকার এক ক্যাটারিং কর্মী যেমন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ভেটকি মেলে কি না দেখা হবে। উপায় না থাকলে পাতে পড়বে রুই-কাতলা। শহরের এক ক্যাটারিং সংস্থার মালিক জানান, মেনুতে বদল না হলেও নোট-ভোগান্তি রয়েছে। খুচরো টাকা হাতে না থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানান জয়ন্ত রায় নামে এক জন। তবে সিটি সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানবাড়ির সঙ্গে মালিক সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য জানান, আপাতত কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও চেক দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে।

কোপ পড়েছে মিষ্টির মেনুতেও। কাটোয়ার মিষ্টিবিক্রেতা প্রবীর মোদক, তাপস ঘোষ, সমরেশ কুণ্ডুদের কথায়, ‘‘রকমারি মিষ্টির বরাত তেমন মিলছে না। শুধুমাত্র রসগোল্লা দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন অনুষ্ঠান বাড়ির লোক জন।

Marriage ceremony Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy