Advertisement
E-Paper

সেরা দশে উজ্জ্বল ওরা পাঁচ

১৯ মে নিয়ে যেমন টেনশন চড়ছে , তেমন মাসখানেক ধরে টেনশনের পারা চড়ছিল এদেরও। তবে সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোতেই হাসিমুখ কাটাল সব চিন্তা।

আনন্দে। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট হাতে কাটোয়া ডিডিসি হাইস্কুলের ছাত্রীরা। ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দে। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট হাতে কাটোয়া ডিডিসি হাইস্কুলের ছাত্রীরা। ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:৫১
Share
Save

১৯ মে নিয়ে যেমন টেনশন চড়ছে , তেমন মাসখানেক ধরে টেনশনের পারা চড়ছিল এদেরও। তবে সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোতেই হাসিমুখ কাটাল সব চিন্তা।

গেম খেলতেই হবে

স্কুল থেকে বাড়ি ছ’কিলোমিটার। সঙ্গে টিউশনে যাতায়াত। প্রতিদিনই ভাঙা রাস্তার খন্দ পেরিয়ে সাইকেলে প্রায় ২৪ কিলোমিটার যাতায়াত করত ছেলেটা। জেদটা ধরা পড়েছিল তখনই। সেই জেদেই এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম স্থান পেয়েছে ভাতারের মাধব পাবলিক স্কুলের ছাত্র ঋত্বিক পাল।

ভাতারের হারগ্রামের বাসিন্দা ঋত্বিকের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। সে বাংলায় ৮৮, ইংরাজিতে ৯৭ ছাড়াও রসায়নে ৯৭, পদার্থবিদ্যায় ৯৮, ও অঙ্কে ৯৯ পেয়েছে। সব বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল তার। তবে দিনভর বই নিয়ে বসে থাকার পাত্র নয় সে ছেলে। তাঁর বাবা হরিসাধনবাবু জানান, পড়ার মাঝে কম্পিউটার গেম আর গল্পের বই ছেলের চাই-ই চাই। ঋত্বিকও বলে, “বই নিয়ে বসতাম ঠিকই। কিন্তু প্রতি আধঘন্টা বা এক ঘন্টা অন্তর কম্পিউটার গেম খেলতাম। এতে মন সতেজ থাকত। আর রাতে তো গল্পের বই না হলে ঘুমই আসত না।” মাধ্যমিকেও দশম স্থান পেয়েছিল ঋত্বিক। তাঁর ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়া।

ঋত্বিকের বাবা হরিসাধনবাবু ও মা কালীদেবী বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে কৃতী হওয়ার পরে সবাই বর্ধমানে ভাল স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাতে বলেছিল। আমরা তাঁদের কথা শুনিনি বলে সবাই আমাদের দোষারোপও করত। আত্মীয়দের কাছে শুনতে হতো, ‘ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিলি’। তবে সে দিন ঋত্বিক জানিয়েছিল, গ্রামে থেকেই পড়াশুনো করতে চায়। আজ প্রমাণ করে দিল দিনে ২৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে, গ্রামে থেকেও বড় পরীক্ষায় সাফল্য আসে।” ঋত্বিক বলে, ‘‘গ্রামেই ডাক্তারি করব আমি।’’

শিক্ষকের সঙ্গে শুভ্রজ্যোতি।

মিষ্টি মুখে ঋত্বিক।

নেশা গল্পের বই

গল্পের বই পড়া নেশা সপ্তম স্থান পাওয়া ঋতঙ্কর কুমারেরও। কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ৪৮৬ পেয়েছে সে। ঋতঙ্করের বাবা অমলকুমার মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়েরই শিক্ষক। তিনি জানান, টেস্টের ফল দেখেই উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলে ভাল ফল করবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরা। স্কুলেও দেখা যায় খুশির হাওয়া। ঋতঙ্কর জানায়, ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়র হওয়া। পড়াশওনার সঙ্গে আঁকা, তবলা বাজানো এবং আবৃত্তিতেও পারদর্শী লাজুক স্বভাবের ঋতঙ্কর। নানা পুরস্কারও পেয়েছে সে। আর তার প্রিয় ক্রিকেট। ঋতঙ্করের পরিবারের দাবি, সাড়ে তিন বছর বয়সে মাথায় বড় আঘাত লাগে তার। কলকাতার চিকিৎসকদের চেষ্টায় সেরে ওঠে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ঋতঙ্কর তো বটেই গোটা স্কুল ভাল ফল করেছে।’’

ফাঁক পেলেই অঙ্ক

অষ্টম স্থানাধিকারী, নরেন্দ্রপুরের রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র সৌমেন ঘোষের জীবনে দুটোই আকর্ষণ। এক, সময় পেলেই মা দাদার সাথে একদান দাবা খেলে নেওয়া। আর অবসর সময়ে উঁচু ক্লাসের জটিল অঙ্ক কষা। অঙ্কই তার ধ্যান-জ্ঞান। কাটোয়ার সুবোধ স্মৃতি রোডের বাসিন্দা সৌমেনের মা সুশ্রীতাদেবী জানান, রবিবার আর্ন্তজাতিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ক্যাম্প সেরে ফিরে পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছিল ছেলে। কাটোয়াতে বসে টিভিতে খবর দেখে তিনিই ফোনে ছেলেকে সুখবর দেন। ছেলে তখন মিশনে। ৪৮৫ পাওয়া সৌমেনের স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়া। তার বাবা পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নানুচরণ ঘোষ আপাতত ছেলের সঙ্গে নরেন্দ্রপুরেই আছেন। মা জানালেন, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কাটোয়ায় পড়ার পরে নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হয় ছেলে। আর্ন্তজাতিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডে সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি ভারত সরকারের তরফ থেকে স্কলারশিপ পেয়ে আইএসআই-এ সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে। সম্প্রতি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ম্যাথ ক্যাম্পে সে ৫ জন ভারতীয়ের মধ্যে এক জন হয়ে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে সৌমেন শুধু বলে, ‘‘অনেক পথ বাকি। বিজ্ঞানী হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে করতে চাই।’’

মায়ের সঙ্গে ঋতঙ্কর।

স্কুলে সায়ন।

বই-ই সঙ্গী

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের শুভ্রজ্যোতি নন্দী আবার অন্য ধাতুতে গড়া। টিভি-মোবাইল থেকে দূরে থেকে, বই-ই তার একমাত্র সঙ্গী। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক নবম স্থান পেয়েছে সে। বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৪। শুভ্রজ্যোতির বাড়ি হুগলির আরামবাগের তালারপাত্র গ্রামে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল আরামবাগ উচ্চবিদ্যালয় থেকে। পরে পড়াশোনোর জন্য বর্ধমানে চলে আসে। বাবা-মায়ের সঙ্গে এখন সে থাকে শহরের বেড় মোড়ে। তাঁর মা জানান, পড়াশোনোয় ব্যাঘাত ঘটবে বলে শুভ্রজ্যোতির আপত্তিতে বাড়িতে টিভি ঢোকেনি। মোবাইল থেকেও শতহস্ত দূরে থাকে সে। তাঁর কথায়, “যতক্ষণ জেগে থাকি, ততক্ষণই পড়ি। খেলা দেখতে খুব ইচ্ছা হলে পাশের বাড়ি গিয়ে এক ঝলক দেখতাম।” অবসর সময়ে সত্যজিৎ রায়ের বই নিয়ে বসে থাকত সে। তাঁর ইচ্ছে, আরও পড়াশোনা করে ক্যানসার বা এড্‌সের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ বের করবে।

স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া

চিকিৎসক হতে চায় দশম স্থান পাওয়া সায়ন মণ্ডলও। অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সে। সায়নের বাবা সুকুমার মণ্ডল পেশায় পুলিশ কনস্টেবল। বর্তমানে তিনি বাঁকুড়া জেলার আকুই ফাঁড়িতে কর্মরত। টিভিতেই তিনি ছেলের ভাল ফলের খবর পান। সায়ন জানায়, টেস্টের পর পড়াশোনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল সে। সাত জন শিক্ষকের কাছে পড়ত।

HS Result Student Maths

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}