Advertisement
E-Paper

থার্মোকলের সাজে মন ভরে না শোলাশিল্পীর

থার্মোকলের গয়না তৈরি করতে করতে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের জগন্নাথপুর গ্রামের শিল্পী হারু মালাকার আক্ষেপ করলেন, ‘নকল সাজে মায়ের রূপ কি আর তেমন খোলে!’ শিল্পী জানান, বাজারে শোলা গাছের তেমন জোগান না থাকায় ডাকের সাজের ঐতিহ্য খানিক ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
সাজ তৈরিতে ব্যস্ত হারুবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

সাজ তৈরিতে ব্যস্ত হারুবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

থার্মোকলের গয়না তৈরি করতে করতে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের জগন্নাথপুর গ্রামের শিল্পী হারু মালাকার আক্ষেপ করলেন, ‘নকল সাজে মায়ের রূপ কি আর তেমন খোলে!’ শিল্পী জানান, বাজারে শোলা গাছের তেমন জোগান না থাকায় ডাকের সাজের ঐতিহ্য খানিক ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

চার প্রজন্ম ধরে মালাকারেরা ডাকের সাজ তৈরি করেন। আগে জলাভূমি থেকে আনা শোলা গাছেই হতো ডাকের সাজ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলাভূমির পরিমাণ কমতে থাকায় শোলার জোগান কমেছে। পাল্লা দিয়ে চড়েছে দামও। হারুবাবু বলেন, ‘‘জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে দিন দিন। দূষণের কারণেও জলজ উদ্ভিদ শোলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কখনও বা পুকুর সংস্কার করতে গিয়ে শোলা গাছের বীজ নষ্ট হচ্ছে।’’ এই পরিস্থিতিতে ক্রেতার বাজেটের মধ্যে সাজ তৈরি করতে গেলে থার্মোকলই ভরসা বলে জানান শিল্পীরা। কিন্তু সেই থার্মোকলে ‘‘জল থেকে তুলে আনা শোলার শুভ্র সৌন্দর্য থাকছে কই’’ বলে আক্ষেপ করেন শিল্পী।

কেমন ছিল আগের দিনগুলো? হারুবাবু নাগাড়ে বলে চলেন, প্রথমে জল থেকে তুলে আনা শোলা গাছ শুকিয়ে নেওয়া হতো। পরে পাতলা ছুরি দিয়ে কেটে কেটে শোলার গায়ে ফুটিয়ে তোলা হতো সূক্ষ্ম কারুকাজ। শেষে আঠা দিয়ে জুড়ে তৈরি হতো ঠাকুরের গয়না— সাজ।

ফি বছর পুজোর মরসুমে দুর্গাপুরের কুলডিহা, করঙ্গপাড়া, নডিহা-সহ বিভিন্ন গ্রাম, কাঁকসার পানাগড়, কুলটির নিয়ামতপুর, আসানসোলের বিভিন্ন পারিবারিক পুজো থেকে বরাত পান হারুবাবু। এ বারও ১৬টি জায়গা থেকে বরাত মিলেছে। এই সময়টা হারুবাবুর সঙ্গে হাত লাগান মেয়ে, স্ত্রী, ভাইয়েরাও। পুজোর মরসুমে দুর্গাপুরের স্টেশন বাজারে অস্থায়ী বাসা বানিয়েছেন হারুবাবুরা। শিল্পীরা জানান, ডাকের সাজকে এখন টেক্কা দিচ্ছে সোনালী-রূপালী সাজও।

বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে করঙ্গপাড়ার কেশবাড়ি থেকে ডাকের সাজের বরাত পান মালাকারেরা। সেই কেশবাড়ির সদস্য বাসব কেশও বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে প্রতিমা ডাকের সাজের হয়। শোলার জোগান কমে যাওয়ায় থার্মোকলেই কাজ চালান শিল্পীরা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!’’

Thermocol artists Durga idol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy