Advertisement
০২ মে ২০২৪

আগুনের গ্রাস পেরিয়ে সফল

ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে পরিবারগুলির ঠাঁই হয়েছিল তাঁবুতে। প্রতিদিন সকাল থেকে তন্নতন্ন করে খুঁজতেন তাঁরা যদি কিছু বেঁচে গিয়ে থাকে। কিন্তু আসবাব থেকে জামাকাপড়, বাসন কিছুই ফিরে পাননি তাঁরা। আগুনে বিদ্যুতের খুঁটি, তার নষ্ট হয়ে যায় যায়। গ্রামে দেখা দেয় জলকষ্টও

ভস্মীভূত ধরমপুর। ফাইল চিত্র

ভস্মীভূত ধরমপুর। ফাইল চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

পরীক্ষা শুরু হতে সাত দিন বাকি। দুপুরে সিলিন্ডার ফেটে আগুন ছ়ড়িয়ে পড়েছিল পূর্বস্থলীর ধরমপুর গ্রামে। পুড়ে যায় ৮৬টি বাড়ি। ছাই হয়ে গিয়েছিল পাঁচ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সব বইখাতাও। বিদ্যুৎহীন ঘর, বইয়ের অভাব, দারিদ্র কোনও কিছুই অবশ্য দমাতে পারেনি ওই পাঁচ কিশোরীকে। বুধবার মাধ্যমিকের ফল বেরোতে দেখা যায় পাশ করেছে ওই পাঁচ জনেই।

ওই অগ্নিকাণ্ডের পরে পরিবারগুলির ঠাঁই হয়েছিল তাঁবুতে। প্রতিদিন সকাল থেকে তন্নতন্ন করে খুঁজতেন তাঁরা যদি কিছু বেঁচে গিয়ে থাকে। কিন্তু আসবাব থেকে জামাকাপড়, বাসন কিছুই ফিরে পাননি তাঁরা। আগুনে বিদ্যুতের খুঁটি, তার নষ্ট হয়ে যায় যায়। গ্রামে দেখা দেয় জলকষ্টও। প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা পাশে দাঁড়ালেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সহজ ছিল না ওই পড়ুয়াদের। তবু হাল ছাড়েনি সুমন শেখ, রাজেশ খান, আলাউদ্দিন মণ্ডল, আজিদা খাতুন এবং রুনা খাতুন। এ দিন হাসিমুখে ফেরে পাঁচ জনেই।

বিশ্বরম্ভা বিদ্যাপীঠের ছাত্র সুমন ও রাজেশ বলে, ‘‘সে দিনের কথা ভাবলেই কান্না পেয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকেরা বই-খাতা জোগাড় করে দিয়েছিল কিন্তু গ্রামের পরিবেশটাই বদলে গিয়েছিল। ত্রিপলের নীচে লন্ঠনের আলোয় কোনও রকমে পড়েছি।’’ বেলেরহল্ট বৈদ্যনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া আলাউদ্দিন মণ্ডল, আজিদা খাতুন এবং রুনা খাতুনেরও একই কথা। তারা বলে, ‘‘সব হারিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে হয়তো আর একটু ভাল ফল হতো।’’ ওদের পরিবারে অবশ্য কোনও আক্ষেপ নেই। তাঁরা জানান, ছেলেমেয়েগুলো পরীক্ষা দিতে পারবে সেটাই ভাবিনি। যা করেছে ওরা নিজেরাই করেছে।

ধরমপুর গ্রামে পাঁচ ছাত্রছাত্রীর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পৌঁছেছে ব্লক প্রশাসনের কাছে। বিডিও সোমনাথ দে বলেন, ‘‘ওদের লড়াই মনে রাখার মতো। ব্লক প্রশাসন ওদের সংবর্ধনা দেবে।’’ মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, ঘটনার পর ছাত্রছাত্রীদের পাশে তারা দাঁড়িয়েছিলেন। পাঁচ ছাত্রছাত্রীই প্রমাণ করেছে লড়াই করলে সফল হওয়া যায়। গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল শেখ বলেন, ‘‘চেষ্টা করলে যে সব বাধা পেরনো যায় ওরা তার প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE