রানু গঙ্গোপাধ্যায়, পায়েল মণ্ডল ও নুর ফতেমা মল্লিক। নিজস্ব চিত্র।
ওদের সকলেরই ঘরের অবস্থা ভাল নয়। কারও পরিবার চলে চাষের আয়ে। কারও মা টিউশন করে সংসার চালান। অভাবের সেই সংসারগুলি থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে পশ্চিম বর্ধমানের তিন কন্যা। তিন জনেরই লক্ষ্য, ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে অভাবী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো। তবে উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সকলের পরিবারেই একটাই প্রশ্ন, মেয়েদের পড়াটা শেষ হবে তো।
দুর্গাপুরের সগরভাঙা হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৪৬৬ নম্বর পেয়েছে রানু গঙ্গোপাধ্যায়। তার বাবা বাবা সুভাষবাবু রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্প তালুকের একটি বেসরকারি কারখানায় ঠিকাকর্মী। বছরখানেক আগে অসুস্থতার কারণে সে চাকরিও চলে যায়। রানুর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়। সেই সময়ে স্কুলের শিক্ষকেরা এগিয়ে আসেন। আর তার মা বুলাদেবী দিনভর টিউশন শুরু করেন, যাতে মেয়ের লেখাপড়াটা বন্ধ না হয়। তবে বাড়িতে অভাব জেনেও হাল ছাড়তে নারাজ রানু। সে বলে, ‘‘কিছুতেই পড়া ছাড়ছি না। ভবিষ্যতে ইংরেজির শিক্ষক হয়ে আমার মতো অনেকের পাশে দাঁড়াব।’’
দুর্গাপুর-ফরিদপুরের বিজড়া হাইস্কুল থেকে নুর ফতেমা মল্লিক উচ্চ মাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৩৮৮ নম্বর পেয়েছে। তার বাবা মহাবুল মল্লিক অন্যের জমিতে চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে।’’ ফতেমা জানায়, ভবিষ্যতে সে-ও শিক্ষক হবে। উচ্চশিক্ষা করবে শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজী নিজামুদ্দিনের আশা, ‘‘ওর স্বপ্ন নিশ্চয় সফল হবে।’’
এই দুই কন্যার মতো জামুড়িয়ার বাগডিহা গ্রামের পায়েল মণ্ডলও চায় শিক্ষক হতে। বাগডিহা-সিদ্ধপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী পায়েল মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬০১। প্রতিটি বিষয়েই লেটার। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। তবে তার স্বপ্ন কত দূর সফল হবে, সে বিষয়ে সংশয়ে পায়েলের বাবা বংশীধরবাবু ও মা আগমণীদেবী। তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘মাত্র তিন বিঘা জমির আয়ে সংসার চলে না। মেয়ের রবীন্দ্র সঙ্গীতে ভীষণ টান। অথচ তা শেখাতে পারিনি। এ বার পড়াশোনাটাও না বন্ধ হয়ে যায়।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তনু ভট্টাচার্যের তবে আশ্বাস, ‘‘আমরা সবাই পায়েলের পাশে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy