Advertisement
E-Paper

বেড়াতে গিয়ে আর ফিরল না তিন ছাত্র

রবিবার সন্ধ্যায় যে ছয় বন্ধু দামোদরের পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের মধ্যে পরিচয় স্কুল বা টিউশনের সূত্রে। রায়ডাঙার বাসিন্দা শুভজিৎ বাউরির বাড়ির লোকজন জানান, বিকেল ৪টে নাগাদ ছেলে মোটরবাইক নিয়ে বেরোয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০১:০৩
দুর্গাপুর ব্যারাজের কাছে দামোদরে ছাত্রদের জন্য তখন চলছে তল্লাশি। সোমবার সকালে। ছবি: বিকাশ মশান

দুর্গাপুর ব্যারাজের কাছে দামোদরে ছাত্রদের জন্য তখন চলছে তল্লাশি। সোমবার সকালে। ছবি: বিকাশ মশান

রাতে ফোনে খবর এসেছিল, দামোদরে স্নানে নেমে ডুবে গিয়েছে ছেলে। পড়িমরি করে দৌড়েছিলেন বাড়ির লোকজন। সারা রাত তল্লাশিতেও কারও হদিস মেলেনি। শেষে সোমবার দিনভর তল্লাশিতে উদ্ধার হল তিন কিশোরের দেহ। মেধাবী তিন ছাত্রের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া দুর্গাপুরের রায়ডাঙা, ডিপিএল কলোনি ও বড়জোড়ার রায় কলোনিতে।

রবিবার সন্ধ্যায় যে ছয় বন্ধু দামোদরের পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের মধ্যে পরিচয় স্কুল বা টিউশনের সূত্রে। রায়ডাঙার বাসিন্দা শুভজিৎ বাউরির বাড়ির লোকজন জানান, বিকেল ৪টে নাগাদ ছেলে মোটরবাইক নিয়ে বেরোয়। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তার মোবাইল থেকে ফোন করে দুঃসংবাদ জানান ব্যারাজ এলাকার এক বাসিন্দা। সঙ্গে-সঙ্গে দামোদরের চলে যান শুভজিতের বাবা, স্কুল শিক্ষক কল্যাণবাবু ও কয়েক জন আত্মীয়।

এ দিন রায়ডাঙায় শুভজিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা সারথিদেবীকে আগলে রেখেছেন প্রতিবেশীরা। বিধান ইনস্টিটিউটের ছাত্র শুভজিৎ পড়াশোনার বরাবর ভাল ছিল। খেলাধুলো করতেও ভালবাসত। প্রতিবেশী পৌলমী নন্দী বলেন, ‘‘আমরা এক সঙ্গে বড় হয়েছি। খুব হাসিখুশি থাকত শুভজিৎ। কোনও ঝামেলায় থাকত না।’’ এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ দেহ এসে পৌঁছয় বাড়িতে। সেখান থেকে বীরভানপুর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সারথিদেবী বলেন, ‘‘আমার ছেলের সঙ্গে সুপ্রতিম ও শুভজিতের খুবই বন্ধুত্ব ছিল। সে জন্যই এক বন্ধুর বিপদে সে আর থাকতে পারেনি। ঝাঁপিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করে সে।’’

ডিপিএল কলোনির বাসিন্দা শুভজিৎ শূর মামাতো ভাই সাগর বারুইকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিল সাইকেলে চড়ে। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েই দামোদরের ঘাটে ছুটে যান তার বাবা, ডিপিএল কর্মী শ্যামল শূর। বিকেলে দেহ উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত টানা সেখানেই ছিলেন। এ দিন শুভজিতের বাড়িতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা সীমাদেবী। প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দশম শ্রেণির ছাত্র সাগর বলে, ‘‘দাদার এক বন্ধু জলে অনেকটা গভীরে চলে যায়। সে যখন ডুবে যাচ্ছিল, দাদা ও তার এক বন্ধু তাকে বাঁচাতে গেলে তারাও তলিয়ে যায়। চোখের সামনে ডুবতে দেখে ভয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম।’’

বড়জোড়া রায় কলোনির সুপ্রতীম গোস্বামী প্রতি রবিবারের মতোই দুর্গাপুরে টিউশনে এসেছিল। সোমবার সকালে তার দেহ উদ্ধারের পরেই তার বাড়ির সামনে ভিড় জমান এলাকাবাসী। পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকা, গিটার বাজানো, অভিনয়েও সুনাম ছিল তার। সুপ্রতিমের বাবা দেবাশিস গোস্বামীর দোকান রয়েছে বড়জোড়ায়। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন মা ঊষাদেবী। বড়জোড়া স্কুলের শিক্ষক তথা রায় কলোনির বাসিন্দা কিশলয় দাশগুপ্ত বলেন, “ছটফটে ছেলেটা এলাকায় সবার প্রিয় ছিল। এ ভাবে ওর চলে যাওয়াটা মানা যাচ্ছে না।’’

দুর্গাপুরের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের অভিযোগ, ‘‘উপযুক্ত সরঞ্জাম ছাড়াই তল্লাশিতে নেমেছে উদ্ধারকারী দল। তাই দেরি হয়েছে।’’ যদিও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের যে দল উদ্ধারকাজ চালায় সেটির আধিকারিক অরিন্দম অধিকারী বলেন, ‘‘জলে প্রচুর পানা থাকায় উদ্ধারকাজে সমস্যা হয়েছে।’’ ব্যারাজে স্নানে নেমে বারবার দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা জানান, বাঁকুড়া প্রশাসনের সঙ্গে নজরদারি নিয়ে কথা বলা হবে। যে সব স্বেচ্ছাসেবক এলাকায় নজরদারি চালান, তাঁদের বিভিন্ন উপকরণও দেওয়া হবে।

student Damodar river Durgapur Drown dead
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy