Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বারবার দুন এক্সপ্রেসেই কেন কচ্ছপ পাচার! রেলের ভূমিকায় প্রশ্ন

২০১৮-য় ৮ অক্টোবর দুপুরে মেমারি স্টেশনে ডাউন দুন এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরা থেকে ১১টি বস্তায় প্রায় দেড়শো কচ্ছপ উদ্ধার হয়। চার মহিলা-সহ পাঁচ জন ধরা পড়ে।

উদ্ধার হওয়া কচ্ছপের একাংশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া কচ্ছপের একাংশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

মেমারি, দুর্গাপুর বা বর্ধমান— স্টেশনের নাম বদলায়। কিন্তু কচ্ছপ পাচারের ক্ষেত্রে বদলায় না ট্রেনটির নাম। গত কয়েকটি এমন ঘটনায় বারবার দুন এক্সপ্রেস ও কচ্ছপ পাচারের বিষয়টি উঠে আসায় প্রশ্ন উঠেছে, এই দুইয়ের মধ্যে যোগটি কোথায়।

২০১৮-য় ৮ অক্টোবর দুপুরে মেমারি স্টেশনে ডাউন দুন এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরা থেকে ১১টি বস্তায় প্রায় দেড়শো কচ্ছপ উদ্ধার হয়। চার মহিলা-সহ পাঁচ জন ধরা পড়ে। তাঁদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, উত্তরপ্রদেশের মানিপুর থেকে কচ্ছপগুলি এনে নদিয়ার চাকদহ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ১৪ অক্টোবর বর্ধমান স্টেশনে ওই ট্রেনে ছ’টি বস্তায় ১০২টি কচ্ছপ মেলে। ১৭ নভেম্বর, ২৯ নভেম্বর, চলতি বছরের ১২ ও ১৪ জানুয়ারি, কচ্ছপ উদ্ধার হয় বর্ধমান স্টেশনে, দুন এক্সপ্রেস থেকেই। মঙ্গলবারই দুর্গাপুর স্টেশনে দুন এক্সপ্রেস থেকে ২২টি বস্তায় ৬৮৯টি কচ্ছপ মেলে।

এই পাচার করা কচ্ছপগুলির বেশির ভাগই ‘গ্যাঞ্জেস সফ্‌ট শেলড টার্টেল’ (নীলসোনিয়া গ্যাঞ্জেটিকা) প্রজাতির, জানায় বন দফতর। গঙ্গা ও তার অববাহিকার নদ-নদীতে এই কচ্ছপ বিপুল সংখ্যায় পাওয়া যায়। রেল পুলিশের সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কচ্ছপগুলি ট্রেনে তোলা হয়। সেগুলি পাচারের সঙ্গেও উত্তরপ্রদেশে কিছু বাসিন্দা যুক্ত। তাঁরা কচ্ছপের মাংস খান, আবার বিক্রিও করেন। দুর্গাপুরের ডিএফও মিলন মণ্ডলেরও অভিজ্ঞতা, ‘‘এর আগেও আমরা দুর্গাপুর থেকে কচ্ছপ উদ্ধার করেছি। তখনও দেখা গিয়েছে, ধৃতদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুরে।’’

কিন্তু, দুন এক্সপ্রেসের নাম বারবার জড়়িয়ে যাচ্ছে কেন এই কারবারের সঙ্গে, উঠেছে সে প্রশ্নও। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি দেহরাদুন থেকে হাওড়া আসে। রাতভর উত্তরপ্রদেশের নানা এলাকায় বেশ কয়েক বার দাঁড়ায় ট্রেনটি। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর পাঁচটা দূরপাল্লার ট্রেনের তুলনায় এখানে কিছুটা ঢিলেঢালা। ফলে সহজেই পাচারকারীরা কচ্ছপ ভর্তি ব্যাগ বা বস্তা নিয়ে উঠে পড়ে ট্রেনে।

জানা গিয়েছে, এই বিশেষ ধরনের কচ্ছপের ভাল ‘বাজার’ রয়েছে এই রাজ্যে। কলকাতার বিভিন্ন বাজারেই যায় বেশির ভাগ পাচার হওয়া কচ্ছপ। তবে কিছু কচ্ছপ নামানো হয় ব্যান্ডেলেও। সেখান থেকে তা যায় কৃষ্ণনগর, চাকদহ প্রভৃতি এলাকায়। আবার কিছু কচ্ছপ পাচার হয়ে যায় বাংলাদেশেও।

এ রাজ্যে ভাগীরথীতেও কচ্ছপ পাওয়া যায়। কিন্তু খাদ্যরসিকদের একাংশের মতে, উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা থেকে পাওয়া ‘গ্যাঞ্জেস সফ্‌ট শেলড টার্টেল’-এর মাংস নাকি আরও উপাদেয়। শীতে তার কদর বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে বাজারও, জানায় রেল পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আগে সড়কপথে পাচার হত। কিন্তু ধরপাকড়ের ভয়ে পাচারকারীদের ভরসা এখন রেলপথই। আগে সাধারণত মহিলারাই পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। দলে হয়তো এক জন পুরুষ থাকতেন। বাকি দু’-তিন জন মহিলা। এখন শুধু পুরুষের দলও পাচারের কাজে জড়িত থাকছে বলে দেখা গিয়েছে। রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লাগাতার অভিযান চলছে ট্রেনে। তাই ঘন ঘন ধরা পড়ছে পাচারকারীরা। উদ্ধার হচ্ছে শত শত কচ্ছপ।’’

আরপিএফের আসানসোল ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমান্ড্যান্ট অচ্যুতানন্দ ঝা বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের অভিযানে সিআইডি-কে সহযোগিতা করেছে আরপিএফ। লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Turtle Durgapur Train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE