Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভোরে শহরে ঢুকে দাপাল দুই দাঁতাল

বুধবার দিনভর এই দুই দাঁতালের গতিবিধিকে কেন্দ্র করেই পিলে চমকাল দুর্গাপুরের।

পায়ে-পায়ে: চলেছে দুই হাতি। বুধবার সকালে দুর্গাপুরের বিধাননগরে। ছবি: বিকাশ মশান

পায়ে-পায়ে: চলেছে দুই হাতি। বুধবার সকালে দুর্গাপুরের বিধাননগরে। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

কাকভোর। সবে আড় ভেঙেছে শহরের। রাস্তায় প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন কয়েক জন। চলছে গল্পগাছাও। এমন সময়ে ছন্দপতন। উল্টো দিক থেকে এগিয়ে আসছে দুই বিশাল বপু। চোখ কচলে সকলে দেখলেন, দুই দাঁতাল ঢুকেছে শহরের রাস্তায়। বুধবার দিনভর এই দুই দাঁতালের গতিবিধিকে কেন্দ্র করেই পিলে চমকাল দুর্গাপুরের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া থেকে দামোদর পেরিয়ে ভোররাতে কাঁকসার দিক থেকে দলছুট দুই দাঁতাল ঢুকে পড়ে দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায়। রেলগেটের কাছে হঠাৎ জোড়া হাতি দেখে ঘাবড়ে যান পথচারীরা। ‘হাতি, হাতি..পালাও, পালাও’, চিৎকারে ভিড় জমতে শুরু করে। দুই দাঁতাল ততক্ষণে ঢুকে পড়ে করঙ্গপাড়ায়।

তবে পিছু ছাড়েনি ‘উৎসাহী’ জনতা। কেউ মোটরবাইক, সাইকেলে চড়ে কেউ বা ছুটতে ছুটতেই পিছু নেন জোড়া দাঁতালের। শোনা যায় মোবাইল শাটারের ‘খচাখচ’ শব্দ। এর পরেই আচমকা চলার গতি বাড়িয়ে হাতি দু’টি ঢুকে পড়ে এবিএল কলোনির জঙ্গলে। বন দফতরের কর্মীরা সেখান থেকে তাদের বের করার চেষ্টা শুরু করেন। তাড়া খেয়ে দু’টি হাতিই এ বার বিধাননগর, এফসিআই কলোনির জঙ্গল হয়ে বামুনাড়ার কাছে পৌঁছে যায়।

উৎসাহী জনতা, মাটির বাড়ি, পথচারী বা পথচলতি গাড়ি, কোনও দিকেই ভ্রুক্ষেপ করেনি দুই দাঁতাল। তারা কখনও জঙ্গল, কখনও বা পাকা রাস্তা ধরে নিজের ছন্দে হেঁটে গিয়েছে। যেতে যেতে কোনও ঘেরা জায়গায় গতিপথে বাধা পেলে সামান্য পা ও মাথা ঝাঁকাতে দেখা গিয়েছে তাদের।

জনতাকে সামলাতে এগিয়ে আসে পুলিশ। এর মধ্যেই বন দফতরের কর্মীরা হাতি দু’টিকে শহরের বাইরে বের করার চেষ্টা শুরু করেন। রাম বাল্মীকি, করঙ্গপাড়ার সুনীল মুখোপাধ্যায়, বিধাননগরের গৌতম মাজিরা বলেন, ‘‘হাতি বলে কথা। শহরের রাস্তায় এমন দাঁতালের ঘোরাফেরা আগে দেখিনি। তাই বেরিয়েছিলাম।’’ অতীতে অবশ্য দুর্গাপুর শহরের ডিসিএল কলোনি, অঙ্গদপুর, ডিএসপি টাউনশিপের কুমারমঙ্গলম পার্ক, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে হাতি ঢুকেছে। কিন্তু এ ভাবে শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে হাতির ঘুরে বেড়ানো অভূতপূর্ব বলেই দাবি এলাকাবাসীর।

দিনভর এমন কাণ্ড চলার পরে দুপুরে বামুনাড়া থেকে হাতি দু’টি আলাদা পথ ধরে। আকারে বড় হাতিটি শহরের ঠিক বাইরে একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে পড়ে। হইহই পড়ে যায় পড়ুয়াদের মধ্যেও। বন দফতরের কর্মীরা সেটিকে আড়রা শিবতলার পিছনের জঙ্গলে খেদিয়ে নিয়ে যান। ছোট হাতিটি ঢুকে পড়ে এফসিআই কলোনির পিছনের জঙ্গলে। সেটিকে তাড়া করে ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকায় শেষমেশ ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে বন দফতর। তার পরে ক্রেন এনে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ হাতিটিকে ট্রাকে তুলে বাঁকুড়া পাঠায় বন দফতর। দফতর জানায়, অন্য হাতিটির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

ডিএফও (দুর্গাপুর) মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত কোনও ক্ষতি হয়নি। বন দফতরের কর্মীরা প্রথম থেকেই হাতি দু’টিকে শহরছাড়া করে লাগোয়া জঙ্গলে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অত্যুৎসাহীদের জন্য দু’টি হাতিয়ে এক সঙ্গে এলাকাছাড়া করা যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Elephant হাতি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE