Advertisement
০৮ মে ২০২৪
আসানসোল হাসপাতাল

ডাক্তার-কর্মী কম, ছাপ পরিষেবায়

নাম পাল্টেছে হাসপাতালের। মহকুমা হাসপাতাল থেকে হয়েছে জেলা হাসপাতাল। পাল্টেছে কিছু পরিকাঠামোও। কিন্তু তার পরেও সমস্যার অন্ত নেই।

হাসপাতাল চত্বরে জমে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল চত্বরে জমে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

নাম পাল্টেছে হাসপাতালের। মহকুমা হাসপাতাল থেকে হয়েছে জেলা হাসপাতাল। পাল্টেছে কিছু পরিকাঠামোও। কিন্তু তার পরেও সমস্যার অন্ত নেই। বিছানা না পেয়ে মেঝেতে রোগী শুয়ে থাকা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে পরিষেবা দিতে নাভিশ্বাস, যন্ত্রপাতির অভাবে বিশেষ বিভাগ চালু না হওয়া— নানা সমস্যার ছবি দেখা যায় আসানসোল হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, পরিকাঠানো আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। আরও কাজ চলছে।

তৃণমূলের সরকার প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরেই আসানসোলের হাসপাতালটি জেলা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। ২৭০ থেকে শয্যা বেড়ে হয় ৩৫০টি। তাতে যে সমস্যা মেটেনি বোঝা যায় হাসপাতালে গেলেই। পুরুষ বিভাগের মেডিসিন ও শল্য ওয়ার্ডে এক শয্যায় দু’জন রোগী শুয়ে থাকার দৃশ্য দেখা যায় মাঝে-মাঝেই। রোগীর চাপ বাড়লে বারান্দাতেও শুতে হয়।

সিটু অনুমোদিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির আসানসোল জেলা হাসপাতাল শাখার সম্পাদক সুকান্ত দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, শল্য, হাড়, মেডিসিন বিভাগে আট জন চিকিত্সকের পদ খালি পড়ে রয়েছে। স্নায়ু ও চর্মরোগের কোনও চিকিত্সকই নেই। এ ছাড়া আরও ১৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রয়োজন। ইসিজি, এক্স-রে এবং প্যাথোলজি বিভাগে ১১ জন টেকনিসিয়ান নিয়োগ করা দরকার। স্টোর কিপার আছেন এক জন। তিনি এক শিফ্‌টে কাজ করেন, অন্য দুই শিফ্‌ট সামাল দেন অন্য পদের কমীরা।

হাসপাতাল সূত্রের দাবি, জরুরি বিভাগে সব সময়ের দু’জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ সময় এক জনই থাকেন। রক্তের বেশিরভাগ পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না, কারণ উপযুক্ত যন্ত্র নেই। ফলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে সেগুলি করিয়ে আনতে বাধ্য হন। ছোটখাট অস্ত্রোপচার করানোর জন্যও রোগীদের মাস দুয়েক অপেক্ষা করতে হয়। নানা অসুবিধায় এক্স-রে-সহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও অপেক্ষা করতে হয়। চিকিত্সক ও যন্ত্রপাতির অভাবে ট্রমা সেন্টার চালু করা যায়নি বলে অভিযোগ।

রোগী পরিজনদের অভিযোগ, তাঁদের থাকার জন্য কোনও জায়গা নেই। গাড়ি রাখার জন্য একটি ছোট পার্কিং জোন আছে। তাতে জায়গা না পেয়ে যত্রতত্র গাড়ি রাখেন লোকজন। তার জেরে মাঝে-মাঝেই হাসপাতাল চত্বরে যানজট হয়। বহির্বিভাগে রোগীদের অপেক্ষা করার জন্য জায়গা কম, সিসিইউ-তে কোনও বিশেষজ্ঞ না থাকায় সাধারণ রোগের চিকিত্সক দিয়ে কাজ চলছে, সংক্রামক নানা রোগের জন্য আলাদা ওয়ার্ড নেই— সমস্যা রয়েছে বহু। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ডিসেম্বরে চালুর কথা থাকলেও নির্মাণ এখনও অসম্পূর্ণ বলে হাসপাতালের নানা সূত্রের দাবি।

কো-অর্ডিনেশন কমিটির দাবি, এক বছর আগেই কর্তৃপক্ষকে শূন্যপদ পূরণ-সহ বিভিন্ন সঙ্কট দূর করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস অবশ্য বলেন, “সমস্যা শুধু শয্যা নিয়ে। ৪৫০টি শয্যা বরাদ্দ হলেও জায়গার অভাবে তা রূপায়িত হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়ে গেলে সমস্যা মিটে যাবে।

রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক যদিও হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোর কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আগে মাসে গড়ে তেরো হাজার রোগী আসতেন। এখন আসেন ৪৩ হাজার। বিনামূল্যে ডায়ালিসিস চালু হয়েছে। নার্সিং কলেজ, ডিএনবি কোর্স চালু, আইসিসিইউ চালু হয়েছে। সুতরাং, পরিকাঠামো উন্নতি হয়নি এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Workers Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE