Advertisement
২১ মে ২০২৪
কম দামে খাবার বেচে লাভ গোষ্ঠীর

চপ, ন্যুডলস মিলছে জেলেই

মোটা চালের ভাত আর শক্ত রুটি নয়, বরং চাইলেই শিঙারা, বিভিন্ন রকমের চপ থেকে জিলাপি, মিষ্টিও পাচ্ছেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৯
Share: Save:

মোটা চালের ভাত আর শক্ত রুটি নয়, বরং চাইলেই শিঙারা, বিভিন্ন রকমের চপ থেকে জিলাপি, মিষ্টিও পাচ্ছেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকরা।

তিন মাস ধরে সংশোধনাগারের ভিতর হরেক খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছে ‘খাওয়াবো যত্নে’ নামে এই ক্যান্টিন। চালাচ্ছেন আবাসিকদের নিয়েই তৈরি হওয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘উদয়ন’-এর সদস্যেরা। ওই গোষ্ঠীর সদস্যদের নিত্যনতুন রান্নার রেসিপি শেখাচ্ছে নাবার্ড। রান্না করা খাবার ছা়ড়াও বাজারের থেকে কম দামে মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেট, তেল, সাবান মিলছে ক্যান্টিন থেকে। দেখা করতে পরিজনেরাো এক আর বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসেন না। বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার শুভেন্দুকৃষ্ণ জানান, সাজাপ্রাপ্ত আবাসিকরা প্রতিদিনের আয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করতে পারেন। সেই টাকা দিয়েই ক্যান্টিনে তৈরি খাবার কিনছেন তাঁরা। অন্য আবাসিকদের পরিজনেরা তাঁদের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা রাখছেন। শুভেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘আবাসিকদের হাতে সরাসরি টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কাউন্টারে এসে কী খেতে চান জেনে নিয়ে কুপন দেওয়া হচ্ছে। সেই কুপন দেখিয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার নিচ্ছেন আবাসিকরা।”

সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, গত তিন মাসে আবাসিকদের ক্যান্টিন থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সুপার জানান, ওই টাকার ৪০ শতাংশ রাজ্যের ‘বন্দি কল্যাণ’ তহবিলে জমা দেওয়া হবে। বাকি টাকা ওই গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, “বাজারের থেকে কম দামে ও গুণগত মান বজায় থাকা খাবার পেয়ে আবাসিকদেরও বাইরে থেকে জিনিসপত্র কেনার প্রবণতা কমে গিয়েছে। লাভের মুখ দেখছে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীও।’’ নাবার্ডের জেলা ম্যানেজার (উন্নয়ন) পার্থ মণ্ডল বলেন, “আমরা চাই আবাসিকদের তৈরি খাবার বাইরেও বিক্রি হোক। সংশোধনাগারের বাইরে দোকান খোলার চিন্তাভাবনা চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও হয়েছে।” কারা দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলের মধ্যে ক্যান্টিন চালানোর পরিকল্পনা বেশ কিছু কাল আগের। দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের হাত ধরে সংশোধনাগারে ক্যান্টিন চালু হয়। পরে আলিপুর, প্রেসিডেন্সিতেও চালু হয়। এখন ধীরে ধীরে অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বা জেল সংশোধনাগারে ক্যান্টিন চালু করছে কারা দফতর।

জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ব্যবস্থায় নিরাপত্তাও আঁটোসাঁটো হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্যান্টিনে মেলায় বাইরের জিনিসপত্র কম ঢুকছে। আবাসিকদের জিনিসপত্রের মধ্যে লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে আসার যে অভিযোগ আগে উঠেছে, এখন সেই সম্ভাবনাও কম বলে তাঁদের দাবি।

এই সংশোধনাগারে প্রায় সাড়ে ছ’শো আবাসিক রয়েছেন। তার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ২৪১ জন। তাঁদের মধ্যে যাবজ্জীবনে রয়েছেন ১৩৬ জন। ফাঁসির সাজা রয়েছে ২ জনের। জেল সূত্রে জানা যায়, ওই ক্যান্টিন চালানোর জন্য কারা দফতর কোনও ভর্তুকি দেয় না। তবে ক্যান্টিন চালানোর জন্য জায়গা, জল ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে স্বনির্ভরগোষ্ঠী।

কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের জেলার সৌভিক সরকার বলেন, “চা-বিস্কুট-চপ দিয়ে ক্যান্টিন শুরু হয়েছিল। এখন রোল-ন্যুডলস বিক্রি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, কয়েক মাসের মধ্যে এই ক্যান্টিন থেকে বিরিয়ানি, চাঁপ বিক্রি করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jail foods
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE