Advertisement
০৮ মে ২০২৪

জল তুলে বিক্রি, ‘নেই’ ছাড়পত্র 

ওই বাসিন্দারা জানান, পানুহাটের এক এলাকায় অ্যাসবেস্টসের চালার নীচে পাকা গাঁথনির ঘরে গত আড়াই বছর ধরে জলের কারবার চালাচ্ছেন এক জন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দোকানের এক পাশে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৪
Share: Save:

ঘরের ভিতরে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। সেই জল জারে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে কাটোয়ার বাজারে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নেমে যাওয়ায় যেখানে উদ্বিগ্ন প্রশাসন, সেখানে ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের (সুইড) অনুমতি না নিয়ে রমরমিয়ে চলছে জলের ‘বেআইনি’ কারবার। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পানুহাটের কয়েক জন বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন।

ওই বাসিন্দারা জানান, পানুহাটের এক এলাকায় অ্যাসবেস্টসের চালার নীচে পাকা গাঁথনির ঘরে গত আড়াই বছর ধরে জলের কারবার চালাচ্ছেন এক জন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দোকানের এক পাশে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো। ভূগর্ভস্থ জল তুলে পাইপের মাধ্যমে একটি যন্ত্রে তা পরিশোধন করে দু’টি ৫০০ লিটারের ট্যাঙ্কে জমা করা হয় বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

কেউ জল কিনতে এলে দোকানে রাখা ২০ লিটার জলের জার ১৫ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনও ক্রেতা জার আনলে তাঁকেও জল ভরে দেওয়া হচ্ছে। আবার ক্রেতাদের বাড়িতে জল সরবরাহেরও ব্যবস্থা আছে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী। সঙ্গে জানান, এ ভাবে দিনে ৫০ থেকে ৬০ জার জল বিক্রি করেন।

ওই ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে ট্রেড লাইসেন্স, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের নতুন উদ্যোগের একটি নথিপত্র রয়েছে। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘সুইডের অনুমতি লাগে জানতাম না। অবশ্যই তা-ও করাব।’’

এই ছাড়পত্র ছাড়া বিক্রি করা জল কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পানুহাটের বাসিন্দাদের একাংশ। তবে পাশাপাশি, তাঁরা এ-ও জানান, বছরভর পরিশুদ্ধ পানীয় জলের আকাল থাকায় এই জলের উপরেই পশ্চিমপাড়া, ইঁদারাপাড়ের বহু মানুষ নির্ভর করেন। শুধু ওই এলাকায় নয়, মণ্ডলহাট, কাটোয়া শহরেরও বেশ কিছু জায়গায় এ ভাবে জলের অবৈধ কারবার চলছে বলে অভিযোগ।

‘এগ্রি-মেকানিক্যাল’ দফতরের কাটোয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সাহেব হাঁসদা জানান, এই মুহূর্তে কাটোয়া ১ ব্লক আর্সেনিকপ্রবণ নয়। তবে অতীতে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের নলকূপের জলে আর্সেনিক ‘সেমি ক্রিটিক্যাল জ়োন’ স্তরে ছিল।

এ ভাবে জলের কারবার চলায় স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন কাটোয়ার বাসিন্দাদের একাংশও। কাটোয়ার ভূগোলের স্কুলশিক্ষক টোটন মল্লিকের কথায়, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গেলে জল সরবরাহে টান পড়ার পাশাপাশি, জলে বিষাক্ত ধাতু মিশবে। আর্সেনিক দূষণ, জলে দ্রবীভূত লবণ, লোহার পরিমাণ বাড়তে পারে।’’

‘সুইড’-এর জিওলজিস্ট সুজিত প্রামাণিক বলেন, ‘‘যন্ত্র দিয়ে বোরিং করে কুয়ো ও ভূগর্ভস্থ জল তুলে ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য আমাদের দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। নির্দিষ্ট পরীক্ষার পরে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যেখানে যেখানে অভিযোগ উঠেছে সেখানে অভিযান চলবে।’’ স্থানীয় খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের প্রধান আন্না দত্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকায় পানীয় জলের একটু অসুবিধা রয়েছে। পঞ্চায়েত শীঘ্রই বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া শুরু করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Underground Water Karwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE