Advertisement
০৯ মে ২০২৪

অস্ত্র, পুথি, মুদ্রা নিয়ে প্রত্নশালা

কলকাতার মাটির ভাঁড়ের সঙ্গে শক্তিগড়ের মাটির চায়ের ভাঁড়ের গড়নে পাথর্ক্য আছে। আবার নৈহাটিতে যে চায়ের ভাঁড় বিক্রি হয় তার সঙ্গে আসানসোল-দুর্গাপুরের ভাঁড়ের বিস্তর ফারাক। বিহারের দিকে যত এগোনো যায়, ততই ভাঁড়ের আকার বদলাতে থাকে।

তারাপদ সাঁতরা প্রত্নশালায় পুথি সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত সোমনাথ রায়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

তারাপদ সাঁতরা প্রত্নশালায় পুথি সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত সোমনাথ রায়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

কলকাতার মাটির ভাঁড়ের সঙ্গে শক্তিগড়ের মাটির চায়ের ভাঁড়ের গড়নে পাথর্ক্য আছে। আবার নৈহাটিতে যে চায়ের ভাঁড় বিক্রি হয় তার সঙ্গে আসানসোল-দুর্গাপুরের ভাঁড়ের বিস্তর ফারাক। বিহারের দিকে যত এগোনো যায়, ততই ভাঁড়ের আকার বদলাতে থাকে। এমন অনেক তথ্য-প্রমাণ মজুত রয়েছে দুর্গাপুরের গোপালমাঠের সোমনাথ রায়ের কাছে। পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক, নেশায় প্রত্নতত্ব গবেষক।

ছোটবেলা থেকেই ডাক টিকিট সংগ্রহের নেশা। কৈশোরে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে মেতে ওঠেন। এমনকী তাঁর ছবির টিকিটও বিক্রি করেছেন। কলেজে পড়তে পড়তে ফটোগ্রাফি শেখেন। তাঁর অনুপ্রেরণা প্রত্নতত্ত্ববিদ তারাপদ সাঁতরা, যিনি অদম্য পরিশ্রমে বাংলার মন্দির নির্মাণতত্ত্বের চর্চা করেছেন। প্রমাণ করেছেন, প্রকৃত জ্ঞানচর্চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপের দরকার হয় না।

তাঁরই আদর্শে সোমনাথবাবু ‘তারাপদ সাঁতরা প্রত্নশালা, পাঠাগার ও লিট্ল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি’ শুরু করেন ২০০৭ সালে। এখন তাতে আছে ছয় হাজারেরও বেশি বই, একশোর কাছাকাছি প্রাচীন পুথি, হরপ্পা আমলের মাটির পাত্র, পাথরের অস্ত্র, নব্য প্রস্তর যুগের পাথরের অস্ত্র, ডাকটিকিট, প্রাচীন মুদ্রা, কাগজের টাকা। এ ছাড়া বাংলা দৈনিক থেকে ‘ক্লিপিংস’, যার বিষয়সূচীতে রয়েছে সত্যজিৎ রায়, প্রত্নতত্ত্ব, সঙ্গীত ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রভৃতি। ১৩৬৫ থেকে ১৩৮০ পর্যন্ত ‘প্রবাসী’ পত্রিকাও মজুত। সোমনাথবাবুর নিজের আগ্রহের বিষয় রানিগঞ্জের পিতলের রথ। এই এলাকার মন্দিরগুলি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা অমূল্য সংগ্রহ হাতে আসে তাঁর।

পুরাতত্ত্বের কথা নিয়ে একটি লিটল ম্যাগাজিনও বার করেন তিনি। নাম ‘পুরালোকবার্তা’। গত বছর লিট্ল ম্যাগাজিন মেলার মুক্তমঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমির তরফে ‘লিট্ল ম্যাগাজিন স্মারক পুরস্কার ২০১২’ দেওয়া হয় সোমনাথবাবুকে। এই ম্যাগাজিনে যে কেউ প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে লেখা লিখতে পারেন, তবে তা দেখে থাকতে হবে নিজের চোখে।

ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ কচিকাঁচাদের মধ্যে চারিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন সোমনাথবাবু। স্থানীয় একটি স্কুলে প্রায় দু’শো পড়ুয়াকে নিয়ে তিনি আয়োজন করেন এক কর্মশালার। ‘মানব বিবর্তন ও পুরাতত্ত্ব’ নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজক ছিল ‘তারাপদ সাঁতরা স্মারক নিধি’ এবং ‘সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং, ইস্টার্ন ইন্ডিয়া।’ প্রস্তর যুগে কী ভাবে অস্ত্র তৈরি হত, তা হাতে-কলমে দেখানো হয় ছাত্রছাত্রীদের। প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরের অস্ত্রও তুলে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের হাতে।

সোমনাথবাবু জানিয়েছেন, সরকারি তরফে কোনও আর্থিক সাহায্যই আসে না লাইব্রেরিতে। তবে কিছু মানুষ বইপত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে প্রত্নতত্ত্বের উপর আরও বড় স্বয়ংসম্পূর্ণ লাইব্রেরি গড়ে তুলব। যদি কেউ লোক সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব, আঞ্চলিক ইতিহাস, এই বিষয়গুলির উপর গবেষণা করতে চান, এখানে এসে ঘরোয়া পরিবেশে বিনা খরচায় যাতে তা করতে পারেন সেই সুযোগ করে দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arpita majumder museum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE