দুর্গাপুর কোর্টে তখন ঘেরাও বিচারক।
শুনানি চলাকালীন খোদ বিচারকের সঙ্গেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লেন আইনজীবী। আর তার জেরে বাইরে থেকে এজলাসের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিচারককে ঘণ্টাখানেক আটকে রাখলেন দুর্গাপুর আদালতের বেশ কিছু আইনজীবী। একই সঙ্গে আদালতের অন্য কিছু বিচারককেও এজলাসের ভিতরে আটক করা হয়।
ঘটনায় স্তম্ভিত রাজ্যের বিচারপতি ও বিচারকদের বড় অংশ। এতে আদালতের অবমাননা বলেও মত আইনজ্ঞদের। কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার ৮১ বছর বয়স হল। ১৯৬০ সাল থেকে আদালতে গিয়েছি। এ রকম অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। এখন যা চলছে, এ আমাদের চিন্তারও বাইরে।”
কী কারণে খেপে উঠলেন আইনজীবীরা?
দুর্গাপুর বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, এ দিন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে একটি বধূ নির্যাতনের মামলায় কল্লোল ঘোষ নামে এক আইনজীবী অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল করছিলেন। আইনজীবীদের অভিযোগ, শুনানি চলাকালীন বিচারক আশুতোষ সরকার উঠে পড়েন। কল্লোলবাবুর অভিযোগ, “মামলার পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে এক জন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। তাঁকে বারবার আদালতে আসতে হচ্ছে। চেয়েছিলাম, এ দিনই শুনানি শেষ হোক। কিন্তু বিকেল পাঁচটার আগেই বিচারক কোর্ট ছাড়তে চান। তিনি কিছু শুনতে চাননি।”
এই নিয়ে হইচইয়ের পরেই কিছু আইনজীবী সিদ্ধান্ত নেন, কোনও বিচারককে বেরোতে দেওয়া হবে না। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট-সহ বিভিন্ন এজলাসের দরজা আটকে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। কিন্তু পুলিশের কথাতেও আইনজীবীরা আটকে থাকা বিচারকদের ছাড়তে রাজি হননি। শেষে বর্ধমান জেলা জজ আজ, শনিবার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশ্বাস দিলে বন্দি বিচারকদের মুক্তি দেওয়া হয়।
যে আইনজীবীরা বিক্ষোভে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম দেবব্রত সাঁইয়ের অভিযোগ, “দ্রুত বিচার করার জন্যই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি হয়েছে। অথচ সেখানকার বিচারকই কাজ করছেন না।” তা বলে কি বিচারকদের এজলাসে আটকে বিক্ষোভ দেখানো যায়? দেবব্রতবাবুর বক্তব্য, “এ ভাবে চললে মানুষ বিচার পাবেন কী করে! সে কথা ভেবেই বিক্ষোভ দেখাতে বাধ্য হয়েছি।”
ভগবতীবাবুর মতে, “এটা সরাসরি আদালত অবমাননা। নিগৃহীত বিচারকদের উচিত এই ঘটনায় যুক্ত সব আইনজীবীর নাম দিয়ে হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো।” দুর্গাপুর আদালতের বার কাউন্সিলও ঘটনার দায় নিতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy