Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আচমকা নাবিধসার আক্রমণে বিপাকে জেলার আলু চাষিরা

জাঁকিয়ে নেমেছে শীত। ভোরের দিকে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে ৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। এমনিতে রবিশস্য চাষের অনুকূল আবহাওয়া হলেও আলুগাছের ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলার বেশ কিছু ব্লকের চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বহু জায়গাতেই গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পচে যাচ্ছে কাণ্ডও। আলু চাষের মাঝপথে এমন আবহাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, আচমকা শীত কমে গেলে বা নিম্নচাপ দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

কালো ছোপ ধরেছে পাতায়। —নিজস্ব চিত্র।

কালো ছোপ ধরেছে পাতায়। —নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৯
Share: Save:

জাঁকিয়ে নেমেছে শীত। ভোরের দিকে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে ৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। এমনিতে রবিশস্য চাষের অনুকূল আবহাওয়া হলেও আলুগাছের ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলার বেশ কিছু ব্লকের চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বহু জায়গাতেই গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পচে যাচ্ছে কাণ্ডও। আলু চাষের মাঝপথে এমন আবহাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞদেরও দাবি, আচমকা শীত কমে গেলে বা নিম্নচাপ দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

বর্ধমানের অধিকাংশ চাষিই জ্যোতি আলুর চাষ করেন। চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর। জেলার চাহিদা মেটানোর পরে বাড়তি আলু যায় রাজ্যের বিভিন্ন বাজার এবং ভিন রাজ্যে। চাষিরা জানান, বর্তমানে কোথাও আলুগাছের বয়স ৪০ দিন, আবার কোথাও ৪৫ দিন। এর মধ্যেই নাবিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে কালনা ১, কালনা ২, মেমারি, জামালপুর ব্লকের বেশ কিছু জায়গায় জমিতেই মরে যাচ্ছে গাছ। দিন দুয়েক আগে সুলতানপুর, ইসবপুর, ময়নাগুড়ি, সীতারামবাটী, বটতলা, কুতুবপুর, সারপুকুর, তেহাট্টার মতো এলাকায় নাবিধসার সংক্রমণ দেখা গিয়েছে বলেও চাষিদের দাবি। তাঁরা জানান, জমিতেই বেশির ভাগ গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার পাতার উপরের অংশে কালো ছোপ দেখা যাচ্ছে। জানা গিয়েছে, কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর মৌজায় রোগের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। চাষিরা ইতিমধ্যেই নানা ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের মধ্যে অরূপ ঘোষ, বিকাশ কোলে, লক্ষ্মণ কোলে, চিত্তরঞ্জন সরকারেরা জানান, দিন পনেরো আগেও মাঠে আলু গাছ ভাল ছিল। আচমকা নাবিধসা শুরু হয়। তাঁদের দাবি, ওষুধ দিয়েও গাছ বাঁচানো যাচ্ছে না। আরেক চাষি নিমাই মণ্ডল বলেন, “এ বার ১৬ বিঘা আলুর চাষ করেছি। নাবিধসা ঢুকে পড়ায় বিঘা চারেক জমিতে আলু পাব না বলেই মনে হচ্ছে।” নিমাইবাবুর দাবি, যে ভাবে এক মাঠ থেকে অন্য মাঠে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বাকি জমিগুলি ভাল থাকবে কি না সন্দেহ। চাষের মাঝপথে নাবিধসার হামলার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সুলতানপুর চাষি সমিতির সভাপতি সজল ঘোষ এবং সম্পাদক আজমত শেখ। তাঁদের কথায়, প্রতিদিনিই ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বিষয়টি কৃষি দফতরকে জানানো হবে বলেও তাঁদের দাবি। ২০০৮ সালেও নাবিধসা রোগে ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন জেলার আলু চাষিরা। তৎকালীন রাজ্যপাল জেলায় এসে চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির কীটনাশক বিক্রেতা চড়া দামে কীটনাশক বিক্রি করে ফায়দা লুটছেন বলেও চাষিদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, বেশিরভাগ ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। অনেকক্ষেত্রে লেখা দামের থেকে বেশিও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আচমকা এমন নাবিধসা আক্রমণ কেন? কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়েছিল সপ্তাহ দুয়েক আগে। সে সময় মেঘলা, মাধেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছিল। তারমধ্যেই সারা রাত ঘন কুয়াশা যোগ হয়। ফলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজে তাকে আলুগাছের পাতা, কাণ্ড। এর থেকেই ক্ষতিকারক ছত্রাক ফাইটপথরা ইনফেসটেনস নিঃশব্দে ঢুকে সক্রিয় হয় বলে তাঁদের দাবি। তার সঙ্গে এক ধরনের ক্ষতিকারক ব্যকটেরিয়া যোগ হওয়ায় গাছের কাণ্ড গলে যাওয়া শুরু হয় বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। তবে আচমকা শীত কমে গেলে বা নিম্নচাপ দেখা দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেও জানান তাঁরা।

কালনা ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক আশিস দত্ত বলেন, “নাবিধসা রোগ সুলতানপুর এলাকায় ছড়িয়েছে বলে খবর পেয়েছি। কতখানি এলাকা জুড়ে ক্ষতি হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।” আশিসবাবুর দাবি, যে সমস্ত জমিতে এখনও সংক্রমণ ঘটেনি তাদের সতর্ক থাকতে হবে। গতিপ্রকৃতি দেখে প্রতিষেধক দিতে হবে। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা নিলয় কর জানান, এই পরিস্থিতিতে জমির ভেলি ডুবিয়ে জল দেওয়া যাবে না। তাতে ক্ষতিকারক ছত্রাক জমির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বাড়বে। বন্ধ রাখতে হবে অনুখাদ্য প্রয়োগও। যে সমস্ত জমিতে সংক্রমণ এখনও ছড়ায়নি সেখানে দশ পনেরো দিন পর পর ম্যানকোজেব, কপার-হাইড্রক্সাইড এবং মেটিরাম জাতীয় ওষুধ দিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kedarnath bhattacharya kalna potato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE