নির্মাণ সামগ্রী নিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে অনেকেই। —নিজস্ব চিত্র।
মুচিপাড়া হোক বা খয়রাশোল। বিধাননগর হোক বা শঙ্করপুর। দুর্গাপুর জুড়ে এখন ‘ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র ছড়াছড়ি।
নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের সিন্ডিকেটের দাপটে নাজেহাল দশা শিল্পোদ্যোগী, আবাসন নির্মাতা থেকে সাধারণ বাসিন্দাদুর্গাপুরের সর্বত্র এমন অভিযোগ। সেই সমস্ত সিন্ডিকেট চলছে কোনও না কোনও ‘ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র নাম নিয়ে। অভিযোগ, সবগুলির পিছনেই রয়েছেন শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁরা চড়া দামে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করছেন এবং তা নিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়---শিল্পোদ্যোগীরা অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁদের কাছে। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি বলে অভিযোগ।
সগড়ভাঙায় নানা কারখানা কর্তৃপক্ষকে যে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে হয় বলে অভিযোগ, সেটির নাম ‘কুসুমতলা মুচিপাড়া সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। অভিযোগ, সংস্থার নেতৃত্ব দেন তৃণমূলের স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি খোকন রুইদাস। জোর করে নির্মাণ সামগ্রী নিতে বাধ্য করা এবং লোক নিয়োগের চাপের অভিযোগে নানা ছোট-মাঝারি শিল্পপতিরা এডিডিএ চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিলবাবুর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। নিখিলবাবু বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্ব ও পুলিশকে জানান। তবে খোকনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরে অবশ্য প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করায় খোকনবাবু এখন জেলে। সম্প্রতি ওই সংস্থার নামও মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে সেটি এখনও চলছে বলে অভিযোগ।
খয়রাশোলেও রয়েছে এমন ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’। সেখানকার একটি নির্মীয়মাণ কাগজকলের অন্যতম মালিক, ইন্দৌরের বাসিন্দা স্বপন রায় সম্প্রতি অভিযোগ তোলেন, চড়া দামে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী নিতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদেরও। তাঁর কথায়, “টাকা দিয়েও আসল মাল পাচ্ছি না। এর পরে যখন কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে তখন কি হবে?” বিষয়টি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককেও বলে তাঁর দাবি। মলয়বাবু অবশ্য জানান, জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। সিন্ডিকেট নিয়ে কোনও অভিযোগ স্বপনবাবুরা করেননি। ওই সোসাইটির সদস্য তথা তৃণমূল কর্মী কৃষ্ণেন্দু শ্যাম বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ অনেক টাকা বাকি রেখেছেন। নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে ফেঁসে গিয়েছি।”
জমির দালালি থেকে শুরু করে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ, ‘খাটপুকুর পিপলস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ সব ধরনের কাজই করে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্মাণকাজের সময়ে সামগ্রী নেওয়ার চাপ তো এমনিতেই থাকে। তা ছাড়াও জমি কেনার সময়ে ওই সংস্থাকে মাঝে না রাখলে নানা ভাবে নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হয়। ফলে, সময়ে কাজ শেষ হয় না। প্রকল্পের বাজেট বাড়তে থাকে। সোসাইটির সদস্য তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শরৎ মণ্ডল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “স্থানীয় বেকার যুবকেরা সংস্থা গড়েছে। কিছু সামান্য ব্যবসা করে থাকে। তবে সবটাই আইনি। কোনও জোরাজুরি বা চাপের প্রশ্ন নেই। আর জমি কেনার ক্ষেত্রে কেউ সহযোগিতা চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে সাহায্য করে থাকি।” এ ভাবেই বিধাননগর, শঙ্করপুর ইত্যাদি এলাকাতেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে সিন্ডিকেট চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে বৈঠকে অবিলম্বে সিন্ডিকেটের উপদ্রব বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বড় শিল্পপতিদের প্রকল্পের বাজেট বেশি থাকে। তাই খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। কিন্তু তাঁদের পরিস্থিতি আলাদা। দেবুবাবু দ্রুত সিন্ডিকেট সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন। তবে তাঁর দাবি, “বাম আমল থেকে সিন্ডিকেটের রেওয়াজ চলে আসছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তা অনেকটাই আটকানো গিয়েছে।” একই বক্তব্য তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, “আগের থেকে উপদ্রব অনেকটাই কমেছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে আমাদের দলের কারও কোনও রকম যোগাযোগ রাখা যাবে না।”
এই আশ্বাসে অবশ্য খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না শিল্পোদ্যোগীরা। দুর্গাপুর ‘স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক কৃপাল সিংহ বলেন, “পরিস্থিতি মোটেও শিল্প সহায়ক নয়। দ্রুত পরিবর্তন চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy