কোথাও মেয়েদের স্কুলের বাইরে ভিড় করা ‘রোমিও’ আবার কোথাও বহিরাগতদের ‘দাদাগিরি’তে অতিষ্ঠ কাটোয়া শহরের অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, থানায় অভিযোগ করেও বহিরাগতদের উপদ্রব বন্ধ হয়নি। এ বার তাই একজোট হয়ে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চলেছেন ওই স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকেরা।
কাটোয়া শহরে ৮টি উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। তাদের সবারই অভিযোগ, কয়েকদিন ধরেই স্কুলগুলিতে বহিরাগতদের উপদ্রব বাড়ছে। আতঙ্কে ভুগছেন ছাত্রীরা। শুধু তাই নয়, স্কুলের ভিতর ঢুকে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও উঠেছে। গত সোমবার দুপুরেই কাটোয়ার সুবোধ স্মৃতি রোডের কাশীশ্বরী উচ্চবিদ্যালয়ে এ ধরণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই স্কুলের মিড-ডে মিল পরিচালন কমিটির এক সদস্যে দাবি, “হঠাৎ দেখি, স্কুলের মূল গেটের পাশের ছোট গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে দুই যুবক আমাদের স্কুলের দুই ছাত্রীর হাত ধরে টানছে। আমি ছুটে আটকাতে গেলে আমাকে ঠেলে ফেলে দেয়। তারপর কয়েকজন এসে ওই ছেলেদুটিকে নিয়ে চলে যায়। ছেলেদুটির বয়স ২২-২৩ বছর হবে।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিথিকা মণ্ডল ঘটনাটি জানার পরেই কাটোয়া থানায় ফোন করে বিস্তারিত জানান। বিথিকাদেবীর দাবি, থানা থেকে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয় এবং লিখিত অভিযোগের প্রয়োজন নেই বলেও জানানো হয়। বুধবার অবশ্য ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীদের অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষিকার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষিকার দাবি, “এ দিনও স্কুলের সামনে দফায় দফায় ওই সব ছেলেদের দেখা গিয়েছে। এ ভাবে স্কুল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের চিন্তা ভাবনা করছি।”
তবে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেও সমস্যা মেটাতে পারেনি কাশীরাম দাস বিদ্যায়তন বা কে ডি আই। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল চলাকালীন বহিরাগতদের আটকাতে গিয়ে এক নিরাপত্তারক্ষী প্রহৃত হয়েছেন। ওই স্কুলের এক শিক্ষকের অভিযোগ, “পাঁচিল টপকে বহিরাগতরা স্কুলের ভিতর ঢুকে পড়ছে। তারপর ছাত্রদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে। টাকা দিতে না পারলে মারধর করছে। শুধু তাই নয় স্কুলের পুকুর পাড়ে কিংবা ছাত্রাবাসের পিছনে মদ-গাঁজা-জুয়ার আড্ডা বসাচ্ছে।” স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুবীর দত্ত বলেন, “আমি প্রতিদিন স্কুল শুরুর সময় গোটা এলাকা টহল দিয়ে বহিরাগতদের বের করে দিচ্ছি। কিন্তু এ ভাবে কতদিন!”
আবার স্থানীয় মানুষজনের প্রাতর্ভ্রমণ বা খেলাধূলার অন্যতম জায়গা হল কেডিআইয়ের মাঠ। ফলে সকাল-সন্ধ্য স্কুলের গেট খোলাই থাকে। তবে গেট বন্ধ থাকলেও বিশেষ লাভ হত না বলে স্কুলের দাবি। কারণ পাঁচিল টপকে স্কুলে ঢুকে সমাজবিরোধী কাজকর্ম করার উদাগরণও রয়েছে। কেডিআইয়ের প্রধান শিক্ষক সুধীন মণ্ডল কাটোয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। ভারতী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের স্কুলেও অপরিচিত ছেলেদের দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।” ডিডিসি গার্লস স্কুলের সামনে কিংবা আশেপাশে ছেলেদের ভিড়ও খুবই পরিচিত দৃশ্য। এ নিয়ে অভিভাবক থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকদের দাবি, “প্রতিদিনই অভিভাবকরা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এ রকম চললে স্কুল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।” শহরের রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৩১ বছর শিক্ষকতা করছি। এ রকম সমস্যায় পড়িনি। এখন পড়ানোর বদলে স্কুল পাহারা দিতে হচ্ছে!” প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের দাবি, আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে কাটোয়া মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাবেন তাঁরা।
এ দিকে, কাটোয়া শহরে গয়নার দোকানে লুঠ বা সার্কাস ময়দানের গলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনার এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। কেউ গ্রেফতারও হয়নি। তার মধ্যে স্কুলগুলিতে এ ধরণের ঘটনায় শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকও করবেন তিনি। মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “শহরের আইন শৃঙ্খলার উন্নতির জন্য সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গয়নার দোকানে লুঠের ঘটনায় আমার এখনও কাউকে ধরতে পারিনি। তদন্ত চলছে। তবে স্কুলের ঘটনাগুলিতে ছাত্ররা জড়িয়ে রয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। সে জন্য সাবধানে এগোতে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy