Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কারখানায় প্রভাব বাড়াতে সভা বিএমএসের

দাবিদাওয়া আদায়ে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত কমিটিতে তাদের সামিল করার দাবিতে সরব হল বিজেপি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস। সে জন্য দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) সামনে বড় জমায়েত করে শিল্পশহরে নিজেদের উপস্থিতিও জানিয়ে দিল তারা। যদিও বিএমএসের রাজ্যনেত্রী পূজিতা সরকার বলেন, “এ রাজ্যে আমাদের সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। নতুন করে উপস্থিতি জাহিরের কিছু নেই। ডিএসপি-র পরিচালন সমিতিতে দীর্ঘ দিন কোনও নির্বাচন হয় না। তার প্রতিবাদ ও আরও কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি।”

ডিএসপি-র সামনে জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র।

ডিএসপি-র সামনে জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৬
Share: Save:

দাবিদাওয়া আদায়ে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত কমিটিতে তাদের সামিল করার দাবিতে সরব হল বিজেপি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস। সে জন্য দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) সামনে বড় জমায়েত করে শিল্পশহরে নিজেদের উপস্থিতিও জানিয়ে দিল তারা। যদিও বিএমএসের রাজ্যনেত্রী পূজিতা সরকার বলেন, “এ রাজ্যে আমাদের সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। নতুন করে উপস্থিতি জাহিরের কিছু নেই। ডিএসপি-র পরিচালন সমিতিতে দীর্ঘ দিন কোনও নির্বাচন হয় না। তার প্রতিবাদ ও আরও কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি।”

মঙ্গলবার বিএমএসের ডাকে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় ডিএসপি-র প্রশাসনিক ভবনের সামনের মাঠে। পরে সংগঠনের নেতারা ডিএসপি কর্তৃপক্ষের হাতে স্মারকলিপি দেন। মাঝে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ‘কাট মানি’ বন্ধ করে ঠিকা শ্রমিকদের সরকারি হারে বেতন নিশ্চিত করা, ডিএসপি-র জমি বণ্টনের ক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য ৭০ শতাংশ সংরক্ষণ, বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীদের আবাসন লিজ দেওয়ার দাবি, ইস্পাতনগরীর রাস্তাঘাট-পার্ক সংস্কার, ডিএসপি হাসপাতালের মানোন্নয়ন-সহ মোট ১৩ দফা দাবি নিয়ে এ দিন স্মারকলিপি দেয় বিএমএস। তবে সংগঠনের নেতারা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন অবিলম্বে জয়েন্ট বার্গেনিং কাউন্সিল (জেবিসি) ভেঙে নতুন করে নির্বাচন ও ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত ৫০ শতাংশ অগ্রাধিকারের দাবি নিয়ে। বিএমএস অনুমোদিত দুর্গাপুর ইস্পাত কর্মচারী সঙ্ঘের সভাপতি দীনেশচন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, “কাউন্সিলে থাকা ট্রেড ইউনিয়নগুলি নিজেদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রমিক স্বার্থ গৌণ হয়ে পড়ছে। কাউন্সিলে ঢুকে আমরা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে ভূমিকা নিতে চাই।”

কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলে জেবিসি। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে জেবিসি-র নির্বাচন হয়। সিটু এবং আইএনটিটিইউসি ৩৮ শতাংশের কিছু বেশি এবং আইএনটিইউসি বাকি ভোট পায়। নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পেলে সেই ট্রেড ইউনিয়ন জেবিসি-তে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। বিএমএস সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। তাই জেবিসি-তে থাকার প্রশ্ন নেই। রাজ্যে যখন বিজেপি আড়েবহরে বাড়ছে, সেই পরিস্থিতিতে বিএমএস-ও কল-কারখানায় নিজেদের সংগঠন বাড়াতে চাইছে। কিন্তু জেবিসি-তে না ঢুকতে পারলে শ্রমিক-কর্মী মহলে গুরুত্ব পাওয়া মুশকিল। সে কারণেই ডিএসপি-তে তারা এই দাবিতে সরব হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দীনেশবাবু বলেন, “জেবিসি-তে থাকলে কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকদের কথা ঠিক ভাবে তুলে ধরা যায়। তাই আমরা ভোট চেয়েছি।”

জেবিসি প্রাপ্ত ভোটের উপরে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কর্তৃত্বের বিষয়টি নির্ভর করে। গত কয়েক বছরে সিটু এবং আইএনটিইউসি বারবার আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে একতরফা ভাবে লোক নিয়োগের অভিযোগ তুলেছে। তা নিয়ে সংঘর্ষও হয়েছে। আবার নিয়োগ নিয়ে বেশ কয়েক বার আইএনটিটিইউসি গোষ্ঠী-সর্ংঘষে জড়িয়েছে। এ বার আসরে নামছে বিএমএস। দীনেশবাবু বলেন, “বিএমএস দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং সক্রিয় সংগঠন। আমরা ঠিকা শ্রমিক নিয়োগে অন্তত ৫০ শতাংশের দাবি তুলেছি।”

বিএমএসের জমায়েতকে অবশ্য খুব একটা আমল দিতে নারাজ অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলি। আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ডিএসপি-তে আমি কোনও দিন ওদের কোনও আন্দোলন করতে দেখিনি। এই সভাতেও ডিএসপি-র শ্রমিক-কর্মী তেমন ছিল না বলেই শুনেছি।”

সিটু-র জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, “জেবিসি ভেঙে দেব বললেই দেওয়া যায় না। শ্রম দফতরের তত্বাবধানে তা গঠন করা হয়। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে যে ভাবে রাজনৈতিক রং দেখে ছাঁটাই করা হয়েছে, সেই পথেই এ বার হাঁটতে চাইছে বিএমএস। হঠাৎ এই সব দাবি তোলা অযৌক্তিক।” হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-এর সাংগঠনিক সম্পাদক তথা আইএনটিটিইউসি নেতা দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, “শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কোনও দিনই মাঠে নামতে দেখিনি ওদের। এ দিনের সভায় প্ল্যান্টের লোকজন প্রায় ছিলেনই না। বাইরে থেকে লোক আনা হয়েছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bms bjp factory durgapur pujita sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE