Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কালিপাহাড়িতে ফের ধস, পুনর্বাসনের দাবি

খনি অঞ্চলের ধস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে যাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফের ফাটল দেখা দিল আসানসোলের কালিপাহাড়িতে। বুধবার ভোরে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। পাঁচটি মাটির বাড়ির দেওয়াল ও মেঝে ফেটে যায়। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ইসিএলের আধিকারিকেরা। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালিপাহাড়ির তুড়িপাড়া ও দুসাদপাড়া এলাকায় এই ফাটল দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা জানান, ভোরের দিকে তাঁরা মৃদু শব্দে মাটি ফাটার আওয়াজ পান। দিনের আলো ফোটার পরে তাঁরা দেখেন, অনেকটা এলাকা জুড়ে আশপাশের জমি ও রাস্তায় ফাটল ধরেছে।

কালিপাহাড়িতে জমিতে ফাটল। বুধবার ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

কালিপাহাড়িতে জমিতে ফাটল। বুধবার ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

খনি অঞ্চলের ধস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে যাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফের ফাটল দেখা দিল আসানসোলের কালিপাহাড়িতে। বুধবার ভোরে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। পাঁচটি মাটির বাড়ির দেওয়াল ও মেঝে ফেটে যায়। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ইসিএলের আধিকারিকেরা। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কালিপাহাড়ির তুড়িপাড়া ও দুসাদপাড়া এলাকায় এই ফাটল দেখা দিয়েছে। বাসিন্দারা জানান, ভোরের দিকে তাঁরা মৃদু শব্দে মাটি ফাটার আওয়াজ পান। দিনের আলো ফোটার পরে তাঁরা দেখেন, অনেকটা এলাকা জুড়ে আশপাশের জমি ও রাস্তায় ফাটল ধরেছে। পাঁচটি বাড়িতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এর পরেই এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় আড়াইশো বর্গমিটার এলাকা জুড়ে মাকড়সার জালের মতো ফাটল ধরেছে। কিছু জায়গায় মাটি বসে গিয়েছে। বড় না হলেও পাঁচটি বাড়ির মেঝে ও দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনই একটি বাড়ির মালিক রামপ্রবেশ রাম বলেন, “রাতে কিছু বুঝতে পারিনি। সকালে ঘুম ভাঙার পরে দেখি, দেওয়াল ও মেঝের কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, পাড়ার আরও কয়েক জনের বাড়ির একই হাল হয়েছে।” তিনি জানান, এমন ঘটনায় তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কতি। তাঁর কথায়, “কোনও দিন ঘুমের মধ্যেই না ধস নেমে তলিয়ে যাই!”

ধস ও ফাটলের খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে যান এলাকার প্রাক্তন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা আসানসোলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি অভিযোগ করেন, এই অঞ্চলটি অনেক আগেই ধসপ্রবণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিগত বামফ্রন্ট সরকার এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা ভাবেনি। তিনি বলেন, “আমরা বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা হবে।” সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পৌঁছন শ্রীপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সদানন্দ সুমন-সহ ইসিএলের কয়েক জন অফিসার। বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে ধরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জানাতে শুরু করেন। পুনর্বাসনের দাবিও ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ পরে ইসিএলের তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষোভ থামে। সদানন্দ সুমন বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বোর হোল করে এলাকায় বালি ভরাট করার উদ্যোগ হবে।” স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য দাবি করেন, এই অঞ্চলে প্রায় ৬৭টি পরিবার রয়েছে। এই ঘটনায় প্রতিটি পরিবারই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই এলাকায় প্রথম ফাটল দেখা দেয়। সে বার প্রায় ১৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। বারবার এমন কেন ঘটছে? শ্রীপুর এরিয়ার জিএম সদানন্দ সুমন বলেন, “খনি যখন বেসরকারি হাতে ছিল, তখন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হয়েছে। কয়লা তুলে নেওয়ার পরে ভূগর্ভ বলি ভরাট করা হয়নি। তারই ফল ভুগছেন বাসিন্দারা।” ইসিএলের এক আধিকারিকের আবার অভিযোগ, পুরনো খনিতে এখন অবৈধ খনন করছে কিছু দুষ্কৃতী। ফলে, ফাটল আরও দ্রুত হচ্ছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, “এই এলাকাটিকে ২০০৩ সালে ধসপ্রবণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে, বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে সরানোর কথা। এই কাজটি করবে রাজ্য সরকারের সংস্থা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এডিডিএ)। কয়লা মন্ত্রক পুনর্বাসনের জন্য টাকাও দিয়েছে।”

২৭ নভেম্বর আসানসোলে প্রশাসনিক জনসভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “রানিগঞ্জ খনি এলাকায় ধসের সমস্যা আছে। সেখানকার বাসিন্দারা চাইলে তাঁদের অন্যত্র বাড়িঘর বানিয়ে দেওয়া হবে। দেখতে হবে তাঁরা যেন ধসে ডুবে না যান।” তার পরেই এমন ঘটনা। পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rehabilitation kalipahari asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE