Advertisement
০২ মে ২০২৪
জামুড়িয়া

কোলিয়ারির রমরমা কমতেই ফিকে হচ্ছে নাট্যচর্চা

দুর্গাপুজো হোক বা সরস্বতী পুজো, যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে আসর বসত যাত্রা-নাটকের। শহরে একের পর এক তৈরি হয়েছিল নাটকের দল। বছরভর নানা প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। কিন্তু সেই সংস্কৃতিতেও ভাটা পড়েছে জামুড়িয়ায়। শহরের প্রবীণেরা জানান, এই এলাকার সংস্কৃতি চর্চায় নাটকের আধিপত্যই বেশি। প্রায় দেড় শতক আগে থেকে সেই চর্চা শুরু হয় ইকড়া গ্রামে। একটা সময়ের পর থেকে প্রতি বছর এক বার যাত্রা ও এক বার নাটকের প্রতিযোগিতা হত।

জামুড়িয়ার নজরুল শতবার্ষিকী ভবন। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

জামুড়িয়ার নজরুল শতবার্ষিকী ভবন। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

দুর্গাপুজো হোক বা সরস্বতী পুজো, যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে আসর বসত যাত্রা-নাটকের। শহরে একের পর এক তৈরি হয়েছিল নাটকের দল। বছরভর নানা প্রতিযোগিতা লেগেই থাকত। কিন্তু সেই সংস্কৃতিতেও ভাটা পড়েছে জামুড়িয়ায়।

শহরের প্রবীণেরা জানান, এই এলাকার সংস্কৃতি চর্চায় নাটকের আধিপত্যই বেশি। প্রায় দেড় শতক আগে থেকে সেই চর্চা শুরু হয় ইকড়া গ্রামে। একটা সময়ের পর থেকে প্রতি বছর এক বার যাত্রা ও এক বার নাটকের প্রতিযোগিতা হত। সেই সময়ে ইকড়ায় শৈলজানন্দের শ্বশুরবাড়িতে কবি নজরুল ইসলামের যাতায়াত ছিল। কথিত রয়েছে, ওই বাড়ির পুকুর দেখেই তিনি লিখেছিলেন ‘বাবুদের তালপুকুরে’। ১৮৮০ সালে এলাকায় প্রথম যাত্রার দল তৈরি হয় বলে জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০২ সাল পর্যন্ত গ্রামের নাটকের দল নিয়েই প্রতিযোগিতা হত। ২০০৭ সালের পরে নাটক প্রতিযোগিতা বা প্রদর্শনী আর হয়নি। ২০০২ সালে ‘যাত্রাদল’ তাদের শেষ পালা ‘অচলপয়সা ও মা মাটি মানুষ’ মঞ্চস্থ করে। জামুড়িয়া গ্রামে ‘চেনামুখ’-এর জন্ম ১৯৭৩-এ। এই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কর্ণধার পেলব কবি জানান, এক সময়ে নৈহাটিতে রাজ্য সরকার আয়োজিত প্রতিযোগিতায়, বছরখানেক আগে বহরমপুরে রবীন্দ্রনাট্য প্রতিযোগিতায় তাঁরা প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই নাট্যদল বিহার, ঝাড়খণ্ডেও প্রচুর নাটক মঞ্চস্থ করেছে।

জামুড়িয়া গ্রামের রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত সঙ্ঘের নাট্যোৎসব ১১ বছর ও আকলপুর সাংস্কৃতিক পরিষদের নাট্যোৎসব ১৩ বছরের পুরনো। নন্ডি, তালতোড়, ইকড়া, বীরকুলটি, শ্রীপুর, রবীন্দ্র কলোনি-সহ বিভিন্ন গ্রামে নানা উৎসব উপলক্ষে যাত্রা বা নাটকের আয়োজন হয়।

তবে আগের সেই রমরমা যে ফিকে হয়েছে, তা এক বাক্যে স্বীকার করেন শহরবাসী। শহরের পুরনো বাসিন্দা স্বরাজ দত্ত, হারাধন দত্ত, মনমোহন রায়, পরেশ কর্মকারেরা মনে করেন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী। তাঁদের মতে, কোলিয়ারির রমরমার সময়ে সংস্কৃতি চর্চা যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তা এখন আর নেই। কারণ, খনিতে নিয়োগের হার কমে গিয়েছে, নানা স্পঞ্জ আয়রন বা সিমেন্ট কারখানাকে ঘিরে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। তাই তরুণ প্রজন্মকে কর্মসংস্থানের দিকে এখন বেশি নজর দিতে হচ্ছে। তার ফলে শুধু সংস্কৃতি নয়, ক্রীড়াতেও উন্নতি হয়নি জামুড়িয়ার, মনে করেন তাঁরা।

জামুড়িয়ার ছেলে বিজয় মাড্ডি বা রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ফুটবল-ক্রিকেটে রাজ্য স্তরে সুনাম কুড়োলেও সাম্প্রতিক কালে শহরের খেলাধুলোয় তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষকদের দাবি। আসানসোল মহকুমা ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক অমল সরকার জানান, জামুড়িয়ায় খেলার ভাল মাঠ আছে। আগে ১১টি দল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন ৩টিতে নেমেছে। বাকি আটটি রানিগঞ্জ জোনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু ওই জোনে দু’বছর ধরে কোনও প্রতিয়োগিতা হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা জামুড়িয়ার সব দলগুলিকে আবার মহকুমা ক্রীড়ায় যোগ করার চেষ্টা করছি।” তবে তিনি জানান, নতুন প্রজন্মের খেলার ঝোঁক যে বাড়ছে, তা বাড়তে থাকা ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিই প্রমাণ দেয়। তবে নানা সংস্থায় ক্রীড়া ক্ষেত্রে নিয়োগ বন্ধ থাকা খারাপ প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকের দাবি।

তবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যাত্রা বা নাটক ছাড়াও সুনাম রয়েছে জামুড়িয়ার নানা মেলার। চুরুলিয়া গ্রামে ১৯৭৮ সাল থেকে সাত রাতের মেলায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কলাকুশলীদের সঙ্গে খনি-শিল্পাঞ্চলের শিল্পীদের মেলবন্ধন হয়। এ ছাড়া বোরিংডাঙায় ১৯ বছরের বিদ্যাসাগর মেলা, কেন্দাগ্রামের তরঙ্গ উৎসব, সত্তরে ধর্মরাজ মেলা, শ্রীপুরের রথের মেলায় নানা জায়গা থেকে আসা মানুষজন ভিড় জমান। জামুড়িয়ার পুরপ্রধান রাজশেখর মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ক্রীড়া-সংস্কৃতির উন্নতির জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, শ্রীপুরে ইসিএলের মাঠ কোলিয়ারির আবর্জনায় ভরে গিয়েছিল। তা সাফাইয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। কুনস্তরিয়া গ্রাম থেকে জামুড়িয়া গ্রাম আদিবাসী পাড়া পর্যন্ত সমস্ত ক্লাবকে বল দেওয়া হয়। চাহিদা মতো বারপোস্ট বিভিন্ন ক্লাবকে দেওয়া হয়েছে। শ্রীপুর ইয়ুথ জিমন্যাসিয়ামের ব্যবস্থাপনায় গত বছর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিযোগিতা হয়েছে। জামুড়িয়া শহরে নজরুল শতবর্ষ ভবনও তৈরি করা হয়েছে।

কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বর্ধমান’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jamuria amar shohor nilotpal roychowdhuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE