গ্রামে চলছে পুলিশি টহল। ছবি: উদিত সিংহ।
সাংসদ তহবিলের টাকায় তৈরি রাস্তা নিম্নমানের, এই অভিযোগকে ঘিরে সিপিএম তৃণমূল সংঘর্ষ বাধল বর্ধমানের কুড়মুনে। বুধবার ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন চার জন। তাদের মধ্যে এক জন সিপিএম কর্মী, বাকিরা তৃণমূলের কর্মী।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে সিপিএমের কর্মীরা তৃণমূলের লোকেদের আটকে রেখে মারধর করছে, এমন খবর পেয়ে স্থানীয় কুড়মুন কাম্প থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন তাঁদেরও ওই সিপিএমের সমর্থকেরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। দুই কনস্টেবলের হাত থেকে দু’টি সার্ভিস রাইফেলও কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য সে দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “পরে এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ ও বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এই ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনটি গুলি ভরা পাইপগান ও ৩১টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত আট জনের প্রত্যেকেই সিপিএম সমর্থক। বুধবার তাঁদের বর্ধমান সিজেএম আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁদের ২ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ির ভাঙা দরজা।
বুধবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় তেলার পাড় এলাকা থমথমে। পুলিশের টহল চলছে রাস্তায়। ওই এলাকাতেই সাংসদ তহবিলের টাকায় তৈরি সিমেন্টের রাস্তার মান খারাপ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদেরই একজন বাপ্পাদিত্য হাজরা বলেন, “রাস্তাটিতে কম সিমেন্ট, পাতলা রড দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই ওই রাস্তায় আবার ফাটল দেখা যাবে বলে আমাদের সন্দেহ হয়। সে কথাই বেশ কয়েকদিন ধরে গ্রামে আলোচনা হচ্ছিল।” আরেক গ্রামবাসী তাপস চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মঙ্গলবার ওই এলাকায় সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক প্রচারে এসেছিলেন। তিনি প্রচার সেরে বেরোনোর পরেই সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি তেলার পাড়ের কিছু দলীয় সমর্থক তৃণমূলের লোকজনের উপরে চড়াও হয়ে বলতে শুরু করে, তারা রাস্তা নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারপরেই ওই লোকেরা তৃণমূলের কয়েকজন সমর্থকের বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করে। ভাঙচুরও চালায়।” বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “ওই রাস্তা নিয়ে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। তবুও বিডিওকে রাস্তার মান নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”
যে দুই স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল, তাদের অন্যতম বাবু মাঝি। তাঁর বাড়িতে ঢুকে দেখা গিয়েছে, তাঁর বৃদ্ধা বাবা কার্তিক মাঝি, ও স্ত্রী চন্দনা কাঁদছেন। দু’জনেরই অভিযোগ, “রাত ১০টা নাগাদ প্রায় ২০-৩০ জনের দল ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করতে শুরু করে। বাড়ি থেকে টেনে বের করে নিয়ে গিয়ে বাবুকে রড দিয়ে মারধরও করা হয়।” আপাতত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বাবু মাঝি। আরেক তৃণমূল সমর্থক তথা মনসাতলার বাসিন্দা শ্যামল দুলের বাড়িতেও একই ছবি। শ্যামলবাবুর মা রেখাদেবীর অভিযোগ, “ওকে তো ওই সিপিএমের লোকেরা মেরেছেই, আমাকে আর আমার অতিবৃদ্ধা শাশুড়িকেও মারধর করা হয়েছে।” এছাড়া আরও অনেক তৃণমূল সমর্থকের বাড়ির উঠোনে দাঁড় করানো ভ্যান রিক্সা ভাঙচুর করা, কারও বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি উল্টে দেওয়া, এমনকী বাড়ির দরজা ভেঙে দেওয়ারও অভিযোগ মিলেছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা শান্তি ঘোষের অভিযোগ, “মুসলিম পাড়া দিয়ে সিপিএমের একটি মিছিল যাচ্ছিল। সেই মিছিল থেকেই হামলা চালানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, “এলাকায় শান্তি বজায় ছিল। দু’পক্ষই ভোটের প্রচার চালাচ্ছিল। রাস্তা নিয়ে অভিযোগও ছিল। সাইদুল সাহেব আসবার পরেই গ্রামে অশান্তি ছড়িয়েছে।”
তবে সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য গনেশ চৌধুরীর দাবি, “আমাদের প্রার্থীকে ভাণ্ডারডিহি যেতে নিষেধ করার চেষ্টা করেছিল পুলিশ, কিন্তু কুড়মুনে যেতে না বলা হয়নি। আসলে পুলিশ ও তৃণমূল মিলেই কুড়মুনের বটগাছতলার একটি ক্লাবে বসে থাকা আমাদের সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়। স্থানীয় মানুষ ওই খবর পেয়ে ছুটে এলে পুলিশ তাদের আটকায়। তাতে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে। তবে রাইফেল ছিনতাই বা পুলিশকে মারধরের ঘটনা একেবারেই মিথ্যা।” তাঁর অভিযোগ, “নির্বাচনের আগে তৃণমূলই সর্বত্র হিংসা ছড়াচ্ছে। আমাদের লোকেদের মারধর করছে। পরে পুলিশ গিয়ে আক্রান্তদেরই গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।”
জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, সোমবার সকালে স্থানীয় ভাণ্ডারডিহি গ্রামে চায়ের দোকানে বসে থাকা কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকের উপর হামলা চালায় সিপিএমের লোকেরা। তাতে তৃণমূলের ছ’জন আহত হন। ওই ঘটনায় সিপিএমের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার পরে কুড়মুনে গিয়ে প্রচার চালানো আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল সিপিএমের প্রার্থীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy