Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চেম্বারে ঢুকে ম্যাজিস্ট্রেটকে মার, ধৃত স্ত্রী-মেয়ে

আদালতে তাঁর চেম্বারে ঢুকে এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে মারধরের অভিযোগে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তারাশঙ্কর ঘোষ নামে ওই আধিকারিককে ঝাঁটা, জুতো দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। অভিযোগ দায়ের করেন কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ। বিকেলে ধৃত ওই মা-মেয়েকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আদালতের কয়েকজন আইনজীবী ও দুই মহিলা কর্মীও।

ভ্যানে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। —নিজস্ব চিত্র।

ভ্যানে তোলা হচ্ছে ধৃতদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

আদালতে তাঁর চেম্বারে ঢুকে এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে মারধরের অভিযোগে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তারাশঙ্কর ঘোষ নামে ওই আধিকারিককে ঝাঁটা, জুতো দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ। অভিযোগ দায়ের করেন কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ। বিকেলে ধৃত ওই মা-মেয়েকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আদালতের কয়েকজন আইনজীবী ও দুই মহিলা কর্মীও। তাঁদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় দিনভর কাজ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায় কালনা বার অ্যাসোসিয়েশন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই তারাশঙ্করবাবু ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল। সম্প্রতি কালনা মহকুমায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেওয়া তারাশঙ্করবাবু থাকেন হুগলির হরিপালে, তাঁর পৈতৃক বাড়িতে। আর তাঁর স্ত্রী শম্পাদেবী দুই মেয়েকে নিয়ে কোন্নগরে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। গত ১৪ মার্চ মাঝবয়েসী শম্পাদেবী তাঁর বড় মেয়েকে নিয়ে কালনা আদালত চত্বরে হাজির হন। অভিযোগ, ওই দিনও ভরা আদালত চত্বরে তারাশঙ্করবাবুকে মারধর, জুতো পেটা করেন তিনি। পরে পাশের একটি চায়ের দোকানে ঢুকে কোনওমতে প্রাণ বাঁচান তারাশঙ্করবাবু। ওই ঘটনার পরে স্বামীর বিরুদ্ধে কালনা থানায় বধূ নির্যাতনের মামলাও দায়ের করেছিলেন শম্পাদেবী। এর পর থেকে বেশ কিছু দিন কর্মস্থলে আসেননি তারাশঙ্করবাবু। সোমবার ফের তিনি কাজে যোগ দেন।

এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ লোকসভা নির্বাচনের অবজার্ভার সেলের ওসি , রিপোর্ট ফেরত ও পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা তারাশঙ্করবাবুর চিৎকার শুনতে পান আদালতের কিছু আইনজীবী ও ল ক্লার্কেরা। সঙ্গেসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মা-মেয়ের হাতে প্রহৃত হন ওই আইনজীবীরা। কালনা ১ ব্লকের সরকারি কর্মী ডলি বিশ্বাস ও মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের কর্মী মীরা হরিজনও ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরে যান। অভিযোগ, বেধড়ক পেটানো হয় তাঁদেরও। আহত অবস্থায় মীরাদেবীকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত আইনজীবী পার্থসারথী কর বলেন, “প্রকাশ্যে কার্যালয়ে ঢুকে যে ভাবে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে ঝাঁটা, জুতো, লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। পুলিশের কাছে দোষিদের শাস্তি চেয়েছি।” আরেক আইনজীবী সুমিত স্যানালের অভিযোগ, “পুলিশের সাহায্য দ্রুত মেলেনি। অনেক পরে পুলিশ ওই মা-মেয়েকে গ্রেফতার করে। আমরা মহকুমাশাসকের কাছে নিরাপত্তার অভাব জানিয়ে অভিযোগ করেছি।”

দুপুরে মহকুমাশাসক তারাশঙ্করবাবুকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা, কতর্ব্যরত অবস্থায় আধিকারিককে মার ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারের ভাঙা পায়া দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কানে মারা হয় বলেও অভিযোগ। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ও মা-বড় মেয়েকে গ্রেফতার করে। বিকেলে আদালতেও তোলা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, শম্পাদেবীর সঙ্গে তাঁর বছর পনেরোর ছোট মেয়েও ছিল। তাকে বিকেলে তারাশঙ্করবাবুর হাতে তুলে দেয় পুলিশ। হাসপাতালে কান দেখাতে গিয়ে তারাশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ বাঁ কানে শুনতে পাচ্ছি না। চিকিৎসক জানিয়েছেন, কানের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ দিনের পরে মৃত্যুভয় পাচ্ছি। তবে ছোট মেয়ে নিস্পাপ। ও আমার কাছেই থাকবে।” এ দিকে পুলিশের ভ্যানে তোলার সময়ে শম্পাদেবীর দাবি, “স্বামী ছোট মেয়ের মোবাইলে ফোন করে জানায় ১২ হাজার টাকা দেবে। দেখা করতেও বলে। তাই দুই মেয়েকে নিয়ে কালনায় আসি। কিন্তু কাঁচের ঘরের মধ্যে আমাদের তিনজনকে ডেকে মেয়েদের মারতে শুরু করে আমার স্বামী। বাধ্য হয়ে আমিও হাত চালাই।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারাশঙ্করবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

magistrate court chamber beating
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE