ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকে ট্যাক্সি, দাবি যাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।
ট্যাক্সি চালকেরা আগ্রহ না দেখানোয় আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ‘নন রিফিউজাল’ ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগ আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জেলা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “একাধিক বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আগ্রহী ট্যাক্সি চালক পাওয়া যায়নি। ট্যাক্সি কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েও সাড়া মেলেনি।”
বছরখানেক আগে কলকাতার বাইরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সি পরিষেবা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হয় পরিবহণ দফতর। দফতর থেকে বলা হয়, পাঁচ আসন বিশিষ্ট ট্যাক্সিতে মিউজিক সিস্টেম থাকতে হবে। একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা খবরের কাগজ রাখতে হবে। জিপিএস সিস্টেম এবং ‘লোকেশন ইন্ডিকেটিং সিস্টেম’ থাকতে হবে। ২৪ ঘণ্টাই ট্যাক্সি চালু রাখার মতো পরিকাঠামো থাকতে হবে। বন্ধ বা ধর্মঘটের দিনেও পরিষেবা চালু রাখতে হবে। এ সব জানিয়ে হলফনামা দিতে হবে ট্যাক্সিচালককে। বর্ধমান জেলার আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পাঁচশো ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগের কথা জানায় পরিবহণ দফতর।
জেলা পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে মাস পাঁচেক আগে প্রথম বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু একেবারেই সাড়া মেলেনি। মাস তিনেক আগে ফের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ট্যাক্সি কিনতে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয় সেখানে। কিন্তু তার পরেও মাত্র কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যা পরিস্থিতি তাতে পরিষেবা চালুর কোনও সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। দুর্গাপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সজল মণ্ডল বলেন, “আবেদনপত্র জমা পড়ে জেলা স্তরে। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ট্যাক্সিচালকদের তরফে কোনও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।” অথচ, এই পরিষেবা চালু হলে শিল্পাঞ্চলের গণ পরিবহণ ব্যবস্থা আমূল বদলে যেত বলে দাবি করেছেন দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, “মিটার চালিত এই ট্যাক্সিগুলিতে ভাড়া নিয়ে অস্বচ্ছতার কোনও জায়গা থাকবে না। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যও নিশ্চিত হতো।”
আসানসোলের তুলনায় দুর্গাপুরের গণ পরিবহণ ব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যা নামতেই রাস্তা থেকে অটো উধাও হয়ে যায়, বেশি টাকা গুণে অটো ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। বর্তমানে স্টেশন চত্বরে ৬৭টি ট্যাক্সি আছে। অনেক ট্যাক্সি চালকই দিনে একবার ভাড়া পান না। ফলে যখন ভাড়া পান তখন তুলনায় চড়া হারে ভাড়া হাঁকেন বলে অভিযোগ। আবার ট্যাক্সিতে মিটার চালু না থাকায় ভাড়ার পরিমাণ নিয়ে যাত্রীরা বিভ্রান্ত হন। ২০০৮ সালে এক বার প্রিপেড ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি বুথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেল দিতে না পারায় উদ্যোগ থেমে যায়। কাজেই ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হলে সমস্যার সমাধান হত বলে মনে করেন যাত্রীরা।
কেন এই পরিস্থিতি? পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক দাবি করেন, কলকাতার তুলনায় জেলা শহরে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। তা ছাড়া কলকাতার মতো জেলায় ট্যাক্সি চড়ার মানসিকতাও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। কাজেই যাত্রীসংখ্যা পর্যাপ্ত হবে না সেটা নিশ্চিত। সে কথা মাথায় রেখে যদি ভাড়ার হার তুলনায় অনেক বেশি রাখার কথা ঘোষণা করা হত, সেক্ষেত্রে হয়তো ট্যাক্সিচালকেরা আগ্রহ দেখাতেন। আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘বর্ধমান জেলা ট্যাক্সি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে যে শর্তগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা বেশ খরচসাপেক্ষ। দুর্গাপুর-আসানসোলে তেমন যাত্রী মেলে না। সে কথা মাথায় রেখে শর্তগুলি শিথিলের দাবি জানিয়ে আমরা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy