গোদা মৌজায় অধিগৃহীত জমির ৩০ একর চাষিদের ফেরত দিতে রাজি হল কলকাতার একটি নির্মাণ সংস্থা। শুক্রবার বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা, এলাকার চাষি ও ওই গোষ্ঠীর মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নামা পশ্চিম বর্ধমান কৃষি কল্যাণ সমিতি।
গত ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে গোদা মৌজায় জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল ‘পশ্চিম বর্ধমান কৃষি কল্যাণ সমিতি’। ফলে আটকে যায় ওই অধিগৃহীত জমিতে আবাসন তৈরি ও বণ্টনের কাজ। শেষে আন্দোলনের ৩০৬ দিনের মাথায় জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ছিলেন বর্ধমানের মন্ত্রী তথা বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, উপপুরপ্রধান খন্দেকার মহম্মদ সহিদুল্লাহ, ‘পশ্চিম বর্ধমান কৃষি কল্যাণ সমিতির’ সদস্য তথা তৃণমূলের নেতা খন্দেকার ফজলুল রহমান ওরফে সবুজ মাস্টার এবং ওই নির্মাণ সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
খন্দেকার ফজলুল রহমান রবিবার বলেন, “গত বছর থেকে জমি ফেরতের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছিল। ১১৪২ প্লটে সাড়ে ছ’শোরও বেশি জমিদাতা চাষি আন্দোলনে সামিল হন। নির্মাণ সংস্থা বিঘা পিছু তিন লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দাম দিতে চায়। কিন্তু ওই দাম মানতে চাননি চাষিরা। আদালত থেকে জমির দাম ২৫-৩০ লক্ষ টাকা বিঘা ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই দামও দিতে চায়নি ওই সংস্থা। তাই আন্দোলনকারীরা ওখানে নির্মীয়মাণ আবাসনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতে মীমাংসা হতে দেরি হতে পারে ভেবে তারা চেয়েছিলেন ওই সংস্থার সঙ্গে আপোশে অন্য বিকল্প পথ বের করার। রবিরঞ্জনবাবুর উপস্থিতিতে শনিবার এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ৩০ একর জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলে সংস্থাটি। তাতে চাষিরা রাজি হন। রবিবাবু ও সঞ্জয়বাবুর উপস্থিতিতে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তিও সই হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ওই সংস্থাকে উপনগরী গড়তে দেওয়া মোট ২৫৭ একর জমি থেকে ফেরত পাওয়া এই ৩০ একর জমি সমবায় তৈরি করে বিক্রি করা হবে। অথবা, কেউ জমি ফেরত চাইলে তাঁকে তা দিয়ে দেওয়া হবে। ঠিক কী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত জমিদাতারা পরে আলোচনা করে নেবেন। সমস্ত জমিদাতাই ওই সমবায়ের সদস্য হবেন।
নির্মাণ সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই শান্তিতে আবাসনের কাজ চালাতে। এ দিকে জমিদাতাদেরও নানা সমস্যা রয়েছে। তাঁরা যাতে নিজেদের জীবন-জীবিকা ঠিক মতো নির্বাহ করতে পারেন, সেদিকে নজর দিয়েছি আমরা। অধিগৃহীত জমি ফেরত হয় না। তবু আমরা ২৫৭ একরের মধ্যে ৩০ একর জমিদাতাদের ফেরত দিতে চেয়েছি। তবে এগারোশোর বেশি জমিদাতাদের নিয়ে একটি সমবায় তৈরি হলেই আমরা ওই জমি হস্তান্তর করব। বৈঠকে বসে আমাদের সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে রবিরঞ্জনবাবু প্রচুর সহযোগিতা করেছেন।”
মন্ত্রী রবিরঞ্জনবাবু রবিবার বলেন, “আমি আড়াই বছর ধরে ওই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। চাষিদের সঙ্গে আট বার বৈঠকে বসেছি। সংস্থার সঙ্গে পাঁচ বার। অবশেষে শুক্রবার ত্রিপাক্ষিক মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২৫৭ একরের মধ্যে ৩০ একর ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। ওই জমি বিক্রি করে চাষিরা টাকা নিয়ে নেবেন। আবাসন তৈরির কাজও শান্তিতে চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy