Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জোড়াফুলের বাগানে বিঁধছে চোরা পদ্মকাঁটা

লালদুর্গে মমতা-ঝড় আছড়ে পড়েছিল তিন বছর আগে। সে বার বিধানসভা, তার পরে পঞ্চায়েত, পুরসভাএকের পর এক ভোটে জেলা ছেয়ে গিয়েছে ঘাসফুলে। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার ফের ভোটের পথে বর্ধমান জেলার একটি বড় অংশ। পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা বদলেছে। তিন বছর আগে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে। এ বার লড়াই চতুর্মুখি। সেই ভোটে ‘মোদী-হাওয়া’ নামে কোনও কিছুর আমদানি হয়নি। এ বার বাম, তৃণমূলের সঙ্গে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছে বিজেপি। আসরে রয়েছে কংগ্রেসও। এই অবস্থায় দাপট কতটা বজায় রাখতে পারবে তৃণমূল, না কি কাঁটা হয়ে দেখা দেবে পদ্ম, উঠছে সে প্রশ্ন।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৭
Share: Save:

লালদুর্গে মমতা-ঝড় আছড়ে পড়েছিল তিন বছর আগে। সে বার বিধানসভা, তার পরে পঞ্চায়েত, পুরসভাএকের পর এক ভোটে জেলা ছেয়ে গিয়েছে ঘাসফুলে। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার ফের ভোটের পথে বর্ধমান জেলার একটি বড় অংশ।

পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা বদলেছে। তিন বছর আগে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়াইয়ে নেমেছিল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে। এ বার লড়াই চতুর্মুখি। সেই ভোটে ‘মোদী-হাওয়া’ নামে কোনও কিছুর আমদানি হয়নি। এ বার বাম, তৃণমূলের সঙ্গে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নেমেছে বিজেপি। আসরে রয়েছে কংগ্রেসও। এই অবস্থায় দাপট কতটা বজায় রাখতে পারবে তৃণমূল, না কি কাঁটা হয়ে দেখা দেবে পদ্ম, উঠছে সে প্রশ্ন।

বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে ২০০৯ সালে বামেরা পেয়েছিল ৪৭ শতাংশ ভোট। ২০১১-এর বিধানসভা ভোটের নিরিখে তা কমে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। তৃণমূলের ভোট ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৪৮। বিজেপি-র ভোট ৬ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪ শতাংশে। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে আবার বামেদের ভোট ২০০৯-এ ৫০ শতাংশ থেকে ২০১১ সালে ৪৬ শতাংশে দাঁড়ায়। সেখানে তৃণমূলের ভোট ৪১ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ হয়েছে। বিজেপির ভোট ৪ শতাংশ থেকে কমে হয় ৩।

২০০৯-এ বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল হারে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে। তখন বিজেপি এখানে পেয়েছিল প্রায় ৭১ হাজার ভোট। সে বারের তৃণমূল প্রার্থী অশোক বিশ্বাস বলেন, “দলের নেতাদের বিজেপি-র সঙ্গে তলায়-তলায় আঁতাত করতে বলেছিলাম। নেতারা শোনেননি। হেরে গিয়ে মাসুল দিতে হয়েছিল।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ বারও বিজেপি নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণে বিজেপি-র একদা প্রভাব ছিল ঠিকই। কিন্তু ওদের অনেক নেতা আমাদের দলে এসেছেন, পঞ্চায়েতে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেনও। ওখানে বিজেপি আর কই, যে আমাদের ভোট কেটে গত বারের মতো ডোবাবে?”

স্বপনবাবু উড়িয়ে দিলেও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় হাটগোবিন্দেপুরের সভায় বলে গিয়েছেন, “বিজেপি এ রাজ্যে একটিও আসন পাবে না। তবে ওদের ভোট ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০-১২ দাঁড়াতে পারে।” যদি তা হয়, তবে ভোটের অঙ্ক যে অনেকটা ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে, একান্তে মানছেন জেলার তৃণমূল নেতারাও। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তৃণমূলের আরেকটি মাথাব্যথা, তা-ও মানছে দলের একাংশ। জেলায় সভা করতে এসে দ্বন্দ্ব ভুলে এক সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে দলের শীর্ষ নেতাদের। স্বপনবাবুকেও নানা কর্মিসভায় দলের পুরনো লোকেরা কোথায় গেলেন, সে খোঁজ নিতে দেখা গিয়েছে।

এ বার ‘অন্য’ ভোট, সাফ জানাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। দলের জেলা সভাপতি দেবীপ্রসাদ মল্লিকের কথায়, “এ কথা ঠিক যে, আমাদের নেতাদের একাংশ তৃণমূলে গিয়েছেন। কিন্তু তা বলে তো ভোটারেরা যাননি। তার উপরে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি চালাতে তৃণমূলের ব্যর্থতা মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে। ফলে, এই কেন্দ্রে আমরা এ বার শুধু ফ্যাক্টর নয়, জয়ের অনতম দাবিদারও!” বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীও বলছেন, “মোদী-লহর রোজই বাড়ছে। মানুষ এখানে উন্নয়নের স্বাদ পাননি। এ বার তাঁরা বিজেপিকে বেছে নেবেন।”

বিজেপি হাওয়া তাদের কী কোনও সুবিধা করে দেবে? না কি পদ্মের কাঁটার খোঁচা লাগবে তাঁদের ভোটব্যাঙ্কেও? সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের জবাব, “বিজেপি আমাদের সামান্য ভোট কাটবে ঠিকই। তবে ওরা তৃণমূলের ভোটই বেশি কাটবে।” তাঁর দাবি, “গত পঞ্চায়েত ভোট বা বর্ধমানের পুরভোটে যে সন্ত্রাসের পরিবেশ ছিল, তা পাল্টেছে। প্রচারে বেরিয়ে মানুষের সাড়া পাচ্ছি। শাসকদলের চেহারা দেখে অনেকেই আমাদের দিকে ফিরে আসবেন। ভোট শান্তপূর্ণ হবে বলে আমাদের ধারণা। তা যদি হয়, বর্ধমান জেলার তিনটি আসনেই আমরা জিতব। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে তৃণমূল।”

অঙ্ক কষছেন সকলেই। সব অঙ্ক আজ বন্দি হবে ইভিএমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE