Advertisement
E-Paper

জল পেতে ভরসা কুয়ো, চাঙড় খসছে আবাসনে

রেল ইয়ার্ডে একের পর এক বিভাগ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পরিসর বেড়েছে শহরের। কর্মীরা এসে থাকতে শুরু করেছেন। বেড়েছে আবাসনের সংখ্যা। কিন্তু অন্ডাল শহর ও তার আশপাশের এলাকায় নাগরিক পরিষেবা রয়েছে গিয়েছে সে তিমিরেই। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে রেল আবাসনের হাল ক্ষোভ সব কিছু নিয়েই।

নীলোত্‌পল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৬
বেহাল আবাসন।

বেহাল আবাসন।

রেল ইয়ার্ডে একের পর এক বিভাগ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পরিসর বেড়েছে শহরের। কর্মীরা এসে থাকতে শুরু করেছেন। বেড়েছে আবাসনের সংখ্যা। কিন্তু অন্ডাল শহর ও তার আশপাশের এলাকায় নাগরিক পরিষেবা রয়েছে গিয়েছে সে তিমিরেই। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে রেল আবাসনের হাল ক্ষোভ সব কিছু নিয়েই।

শহরে লোকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে রেল টানেলের দু’পাশে গড়ে ওঠে অন্ডাল উত্তর ও দক্ষিণ বাজার। তৈরি হয় রেল হাসপাতাল, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অবসর নেওয়ার পরে রেলকর্মীরা শহর লাগোয়া এলাকায় বাড়ি তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। সে ভাবেই সারদাপল্লি, সুভাষনগর, শ্রীপল্লি, আশ্রমপল্লি, সুকান্তপল্লির মতো নানা পাড়া গড়ে ওঠে।

শহরবাসীর সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ রেল টানেলটি নিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দা অপূর্ব দত্ত, গৌতম চক্রবর্তীরা জানান, টানেলের নীচে একটি কুয়ো আছে। সেখানে দু’টি কলোনির নোংরা জল জমা হয়। সেই জল পাম্পের সাহায্যে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না বলে অভিযোগ। এই টানেল দিয়ে দামোদরের বালি বিভিন্ন কোলিয়ারিতে সরবরাহ করা হয়। গাড়ি থেকে বালি পড়ে টানেলটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত বারই পরিষ্কার করা হয়, ফের আগের অবস্থা তৈরি হয়। এর জেরে সারা বছর ওই অংশটুকু রেল কলোনির উপচে পড়া জলে ভরে থাকে। ভারী বৃষ্টি হলে টানেলটি কোমর সমান জলে ভরে যায়। গাড়ির মালিক তাপস দত্ত জানান, টানেলের বেহাল অবস্থার জন্য চার চাকার গাড়ি ও রিকশার যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই থাকে। এই টানেলে দশ চাকার গাড়ি ঢুকতে পারে না। ফলে, সেই সব গাড়িকে রানিগঞ্জ থেকে মদনপুর হয়ে পৌঁছতে হয়।

রাস্তার পাশে জমা জঞ্জাল সাফ হয় না নিয়মিত।

রেল কলোনির বাসিন্দা ডাবলু প্রসাদ, মুন্না সিংহেরা জানান, ডিজেল শেডের জল রেলের অসমাপ্ত নর্দমা দিয়ে গিয়ে পড়ছে বারো নম্বর ডাঙালপাড়া লাগোয়া ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে। এর জেরে প্রায় একশো বিঘা জমিতে ভাল চাষাবাদ হয় না বলে অভিযোগ। বারো নম্বর ডাঙালপাড়ায় গভীর নলকূপ থেকে যে জল বেরোয় তাতে এক ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। নর্দমা সাফাই হয় মাসে মোটে তিন-চার দিন। প্রায় সমস্ত কলোনির রাস্তা বেহাল। সংস্কারের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। রেলের আবাসনগুলি সংস্কারের ব্যাপারেও উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে কর্মীদের। রেলকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব থেকে খারাপ অবস্থা ৯, ১২ ও ১৩ নম্বর কলোনির আবাসনগুলির। কোথাও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। কোথাও আবার চাঙড়-পলেস্তরা খসে পড়ছে।

রেলের দামোদর কলোনি (পূর্বপল্লি ও পশ্চিমপল্লি), সাউথ কলোনি, ওয়ার্কশপ কলোনি, ৯, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর রেল কলোনি, ট্রাফিক কলোনিতে রাস্তা ও নর্দমার হালও বেশ খারাপ। সারদাপল্লি ও আশ্রমপল্লিতে কোনও পাকা নর্দমাই নেই। রাস্তা দিয়ে জল বয়ে গিয়ে মেশে রেলের নর্দমায়। সুভাষনগর ও শ্রীপল্লির নর্দমাও অসমাপ্ত। সারদাপল্লি থেকে ভালুকসোঁদা যাওয়ার রাস্তা কাঁচা। আশ্রমপল্লিতে রাস্তা আবার রীতিমতো সরু। রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে নর্দমার জন্য এলাকাবাসীর প্রত্যেককে জায়গা ছাড়ার অনুরোধ করলেও কেউ রাজি হননি। প্রতিটি পাড়ায় এখনো দু’একটি কাঁচা রাস্তা রয়ে গিয়েছে। জলের জন্য ভরসা কুয়ো। স্থানীয় বাসিন্দা শোভন পাল জানান, পাইপলাইনের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। কিন্তু তা পূরণের কোনও উদ্যোগ হয়নি। অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কালোবরণ মণ্ডলের অবশ্য আশ্বাস, “জল নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”

ক্ষোভ রয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও। এত বড় এলাকার জন্য মাত্র একটি রেল হাসপাতাল। তার অধীনে রয়েছে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হাসপাতালে মাঝে মধ্যে বিক্ষোভও হয়। অভিযোগ, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কাগজে-কলমে চলে। আদতে কোনও পরিষেবা মেলে না।

নাগরিক পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে রয়েছে এলাকার ক্রীড়া-সংস্কৃতির প্রসারে উদাসীনতা নিয়েও অখুশি শহরবাসী।

(চলবে)

ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর অন্ডাল’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

amar shohor nilotpal roychoudhury housing water supply andal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy