Advertisement
E-Paper

টাকা আদায় কারখানার পথে, অতিষ্ঠ লরি-ট্রাক

কাঁচা মাল নিয়ে কারখানায় ঢোকার সময়ে লরি বা ট্রাক দাঁড় করিয়ে জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হাত। মাল নিয়ে এসে কারখানার বাইরে খানিক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হলেও দিতে হচ্ছে টাকা। স্থানীয় যুবকদের এ ভাবে লরি-ট্রাকের কাছ থেকে ‘তোলা’ নেওয়া বা টোল আদায়ের নামে টাকা চাওয়ার জেরে নাজেহাল ব্যবসায়ীরা।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৪
কারখানার বাইরে লরি রাখতে গেলেও টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

কারখানার বাইরে লরি রাখতে গেলেও টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

কাঁচা মাল নিয়ে কারখানায় ঢোকার সময়ে লরি বা ট্রাক দাঁড় করিয়ে জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হাত। মাল নিয়ে এসে কারখানার বাইরে খানিক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হলেও দিতে হচ্ছে টাকা। স্থানীয় যুবকদের এ ভাবে লরি-ট্রাকের কাছ থেকে ‘তোলা’ নেওয়া বা টোল আদায়ের নামে টাকা চাওয়ার জেরে নাজেহাল ব্যবসায়ীরা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) হোক বা রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের বেসরকারি কারখানাতোলাবাজির অভিযোগ উঠছে সর্বত্র। ডিএসপি-তে যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল সরবরাহকারীদের অভিযোগ, কারখানায় লরি ঢোকার আগে তাঁদের কাছে ‘তোলা’ নেওয়া হয়। লরিগুলি ডিএসপি-তে ঢোকার আগে বেশ কয়েক ঘণ্টা তামলা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকে। তখন নিজেদের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক পরিচয় দিয়ে কয়েক জন যুবক নিয়মিত টাকা নেন বলে অভিযোগ। ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক কৃপাল সিংহের অভিযোগ, “ট্রাক পিছু দেড়শো থেকে আড়াইশো টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তা না হলে ডিএসপি-তে ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।” তিনি জানান, ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কারখানা চত্বরের বাইরের বিষয় নিয়ে কিছু করার এক্তিয়ার নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিন্ডিকেটের সঙ্গে দলের কোনও সংশ্রব রাখা যাবে না। থানায় ওই ব্যবসায়ীরা লিখিত অভিযোগ জানালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”

বছর দুয়েক আগে রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার সামনে লরি দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য রাতে টাকা নিতে আসে কয়েক জন। লরি চালক ও খালাসিরা প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয়। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বাইরে থেকে শহরে আসা একাধিক লরি চালক ও খালাসি। মারধর করা না হলেও হুমকি দিয়ে ‘তোলা’ আদায় এখনও চলছে বলে অভিযোগ শিল্পতালুকের লরি চালকদের। তাঁদের দাবি, শাসকদলের নাম করে জোর-জবরদস্তি করা হয়। বাধ্য হয়ে টাকা দিতেই হয়।

পুরসভার টোল আদায়ের ব্যবস্থা চালু রয়েছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন শিল্পতালুকে। অথচ, তার বাইরেও টোল আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন শিল্পোদ্যোগীরা। রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের অর্জুনপুর এবং রাতুরিয়া আবাসনের কাছে দু’জায়গায় টোল আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও শাসকদলের স্থানীয় সমর্থকেরা জোর করে টোল আদায় করতেন বলে অভিযোগ। এ দিকে রাস্তা একেবারে বেহাল। তাই টোলের টাকা দিতে অস্বীকার করেন গাড়ির চালকেরা। অভিযোগ, সে জন্য তাঁদের শাসানো হয়। তা অবশ্য বেশি দিন চলেনি। মাস কয়েক আগে ওই শিল্পতালুকের লরি-গাড়ির মালিক ও চালকেরা এক জোট হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তার পরে পিছু হঠে আদায়কারীদের সিন্ডিকেট। বন্ধ হয়ে যায় টোল আদায়।

নডিহা-শ্যামপুর, পিসিবিএল-সহ কয়েকটি রাস্তায় টোল আদায়ের জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডেকেছে পুরসভা। অথচ, সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বিভিন্ন রাস্তায় টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। নডিহার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, টোল আদায়ের জন্য এলাকায় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। খয়রাশোল এলাকার কিছু বাসিন্দার অভিযোগ, সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া স্থানীয় এক নেতার উদ্যোগে একটি সিন্ডিকেট টোল আদায় করে চলেছে। আগের আমলেও ওই নেতা এ ভাবেই টোল আদায় করতেন বলে তাঁদের দাবি।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সিন্ডিকেট চালানো বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি জানান, দরপত্র ডেকে ধাপে-ধাপে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে উপযুক্ত সংস্থার হাতে। পুলিশ জানায়, শিল্পতালুকের বিভিন্ন এলাকায় রাতে টহলের ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

subrata sit durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy