সাত বছর ধরে তহবিলে পড়ে রয়েছে সাড়ে দশ লক্ষ টাকা। অথচ কেন ওই টাকা এসেছিল, কেনই বা খরচ হয়নি তার কোনও নথি ব্লক দফতরে নেই। কাটোয়া ২ ব্লকের ছবিটা এমনই।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকেও আট বছর ধরে পড়ে রয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। কেন টাকা এসেছিল তা জানা থাকলেও এখন সে টাকার কী হবে সে বিধান করতে পারেননি ব্লক কর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে বন্যার পরে কেতুগ্রাম ২ ব্লকে ‘বিকল্প চাষ’ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এমন চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিগত বাম সরকার ১১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু সেই টাকা বিলির ব্যবস্থা করেনি সেই সময় পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় থাকা সিপিএম। এখন তা নিয়েই চাপানউতোর শুরু হয়েছে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল ও প্রাক্তন শাসকদল সিপিএমের মধ্যে।
কিন্তু ওই টাকা ‘ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের’ মধ্যে বিলি করা গেল না কেন?
বিগত বাম আমলের কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণালকান্তি সিংহ বলেন, “ওই টাকা কোন কোন ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা পাবেন তার একটা নির্দেশ সরকার থেকে দেওয়া হয়েছিল। তাতে সব্জি চাষিদের কথা বলা হয়েছিল। আমাদের ব্লকে গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েত এলাকার কিছু অংশে সব্জি চাষ হয়। কিন্তু সেখানে বন্যার জলই ওঠে নি, তাহলে চাষিদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেব কী ভাবে?” যদিও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় বর্তমান শাসকদল তৃণমূল। দলের ব্লক সভাপতি তথা কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল জানান, ওই টাকা বিকল্প চাষ করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে বলেছিল বিগত বাম সরকার। সেই মতো তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় থাকা সিপিএম উপভোক্তাদের তালিকাও তৈরি করেছিল। কিন্তু ক্ষোভ-বিক্ষোভের ‘ভয়ে’ সিপিএম ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি করেনি বলে দেবাশিসবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “আমরা গত বছর পঞ্চায়েতে আসার কিছুদিন পরেই ওই টাকা সম্বন্ধে জানতে পারি। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে ব্লকে পড়ে থাকা টাকা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাতে জ্বালা কিছুটা জুড়োবে চাষিদের।” তবে মৃণালবাবু বলেন, “ওই সময় আমরা উপভোক্তা খুঁজে পাইনি বলে পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে অন্য ক্ষতিগ্রস্থরা উপকৃত হন। কিন্তু তৎকালীন বিডিও কেন ওই টাকা ফেরত পাঠাননি, তা বলতে পারব না।” তাঁর দাবি, এখন ক্ষতিগ্রস্থ চাষি খোঁজা মানে তো দলের লোকেদের হাতে সরকারি টাকা বিলানো।
কাটোয়া ২ ব্লকে অবশ্য বন্যায় নয়, খরায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা বরাদ্দ করেছিল বিগত বাম সরকার। ব্লক দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু মাত্র ব্লক তহবিলে ১০ লক্ষ টাকার উপর পড়ে রয়েছে। তবে এর বেশি কোনও তথ্য দফতরে নেই। তৃণমূল ও কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা অবশ্য জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে কাটোয়া ২ ব্লকে খরার দরুণ বোরো ধান চাষে ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতেই বাম সরকার ওই টাকা বরাদ্দ করে। কাটোয়া ২ ব্লকে সে সময় ক্ষমতায় থাকা সিপিএম ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের তালিকাও তৈরি করে। কিন্তু টাকা দেওয়ার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন চলে আসে। নির্বাচনের পর ওই টাকা বিলি করতে গেলে ‘আপত্তি’ তোলেন তৎকালীন বিডিও নির্মলকুমার দাস। চাষিদের কৃষি দফতর থেকে ‘ক্ষতিগ্রস্থ’ শংসাপত্র নিয়ে আসতে বলেন তিনি। তার প্রতিবাদে সিপিএম বিডিওর কাছে স্মারকলিপিও দেয়। সেই সময়ের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের গৌতম ঘোষাল অভিযোগ তোলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের বদলে দলীয় সমর্থকদের ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাটোয়া ২ ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ওই টাকা আর বিলি করতে পারেনি তারা। ওই ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি তথা কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত মজুমদার এ খবরে আশ্চর্য হয়ে বলেন, “ব্লক দফতরে এ ব্যাপারে কোনও নথিই নেই। এটা ভাবা যায়!” কাটোয়া ২ বিডিও শিবাশিস সরকার বলেন, “ওই টাকা কেন এসেছিল তার কোনও নথি আমাদের কাছে নেই। ওই টাকা সম্বন্ধে কাটোয়া ট্রেজারি অফিসারের কাছ থেকে বিস্তারিত ভাবে জানতে চাওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy