সরকারি উদাসীনতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কালনা মহকুমা আদালতের নথি। অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কালনার জিআরও অফিসে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জমা হওয়া কয়েক হাজার মামলার গুরত্বপূর্ণ নথি চূড়ান্ত অব্যবস্থায় পড়ে আছে। কর্মীদের আশঙ্কা, বর্ষার আগে ওই সব নথি দফতর থেকে না সরালে বহু মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
কালনা মহকুমার কালনা, নাদনঘাট, পূর্বস্থলী এবং মন্তেশ্বর থানার বেশিরভাগ মামলাই ওঠে মহকুমা আদালতে। মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র থাকে মহকুমা আদালতের জিআরও অফিসে। সাধারণত, আদালতে বিচার শুরু হলে, পুলিশের কেস ডায়েরি এসে পৌঁছয় এই দফতরে। শুনানি শুরু হলে এখান থেকেই নথি যায় আদালতে। কালনা জিআরও কার্যালয়ে বর্তমানে এমন নথির সংখ্যা সাড়ে ছ’হাজারেরও বেশি। বিভিন্ন সময় কেসের প্রয়োজনে আইনজীবিরাও এখান থেকেই নথির সাহায্য নিয়ে থাকেন। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বছরের পর বছর ধরে গাদাগাদি করে পড়ে থাকায় বেশ কিছু নথি ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু কাগজে উই লেগেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। বর্ষার আগে অবিলম্বে অন্য ঘরে যাবতীয় নথি না সরালে আদালতে বহু মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।”
কালনা মহকুমা আদালতের কাছেই ছোট একটি ঘরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দফতরটি চলে। ভিতরে পা রাখলে মালুম হয়, সরকারি দফতর হলেও আদতে গুদাম ঘরের চেহারা নিয়েছে। প্রায় অন্ধকার ঘরের ফাটল ধরা দেওয়ালে ড্যাম্প, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে বেশ কয়েক জায়গায়। যত্রতত্র ডাঁই করে রাখা উই লাগা নথির পাহাড়। টেবিল, আলমারি, র্যাক শুধু নয়, মেঝেতেও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছড়ানো। এসবের মধ্যেই বসে কাজ করতে হয় কর্মীদের। মাঝেমাঝেই জেলা পুলিশ সুপারের দরকার মতো তথ্য দিতে হয় তাদের। কর্মীদের দাবি, বহু ক্ষেত্রে এই বেহাল দশার কারণে মামলার নথি দিতে পারেন না তারা। কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পার্থসারথী করও বলেন, “জিআরও অফিস দ্রুত সরিয়ে না নিলে আমাদের আরও বড় সমস্যায় পড়তে হবে। আদালতে নথি পেশ করা না গেলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা বিপদে পড়বেন।”
শুধু জিআরও অফিস নয়, কালনা আদালত চত্বরের পরিকাঠামো নিয়েও নানা মহলে ক্ষোভ রয়েছে। আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালতে বিচারপ্রার্থীদের জন্য কোনও বসার জায়গা নেই। পানীয় জল, শৌচাগারের বন্দোবস্তো না থাকায় মুশকিলে পড়েন মহিলারা। এছাড়া সাক্ষীদের জন্য একটি সাক্ষ্যঘর থাকলেও কার্যত তা টাইপিস্টদের দখলে। সেই ঘর থেকেও মাঝেমধ্যে সিমেন্টের চাঙর খসে পড়ে। এমনকী আদালত চত্বরে যে পুলিশ ব্যরাকটি রয়েছে, সেখানে প্রায়ই নানা ধরণের সাপ ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। আইনজীবীজের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় রাজ্যের কর্তা ব্যক্তিরা দেখে গেলেও পরিস্থিতি সেই তিমিরেই। এমনকী রাজ্যের ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন আশিস চক্রবর্তীও আদালত চত্বরের হাল সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন বলে আইনজীবীদের দাবি। কিন্তু কেন এমন হাল ওই দফতরের?
মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। বারকয়েক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিও পাটানো হয়েছে। তবে টাকা মেলেনি।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, জি আর ও কার্যালয়ের বেহাল দশার কথা শুনেছি। নির্বাচন পর্ব মিটলে এস ডি পি ওকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শনের ভাবনা রয়েছে। পরিদর্শনের রিপোর্ট জেলায় পাঠানো হবে। আদালত চত্বরের অন্য সমস্যাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy