Advertisement
০২ মে ২০২৪

দু’পশলা বৃষ্টিতেই হাঁটু জলে ডোবে শহর

নামে পুরসভা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু অবধি জল জমে যায় বেশির ভাগ এলাকায়। অপরিষ্কার নালা, অপরিকল্পিত নিকাশি শহরবাসীর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী। পুরসভা হলেও তাই পরিষেবা নিয়ে অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই মেমারির মানুষজনের। মোট ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই মেমারি শহর এলাকা। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে পরিকল্পনা হয়েছিল, মধ্য মেমারির নিকাশি জল শহরের দক্ষিণ দিকের সাতটি ওয়ার্ড পেরিয়ে রেললাইন পার হয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডে ডিভিসি-র সেচ ক্যানালে মিশবে।

ডিভিসি ক্যানাস পাড়ে এভাবেই পড়ে জমে রয়েছে শহরের আবর্জনা।

ডিভিসি ক্যানাস পাড়ে এভাবেই পড়ে জমে রয়েছে শহরের আবর্জনা।

রানা সেনগুপ্ত
মেমারি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

নামে পুরসভা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু অবধি জল জমে যায় বেশির ভাগ এলাকায়। অপরিষ্কার নালা, অপরিকল্পিত নিকাশি শহরবাসীর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী। পুরসভা হলেও তাই পরিষেবা নিয়ে অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই মেমারির মানুষজনের।

মোট ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই মেমারি শহর এলাকা। পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে পরিকল্পনা হয়েছিল, মধ্য মেমারির নিকাশি জল শহরের দক্ষিণ দিকের সাতটি ওয়ার্ড পেরিয়ে রেললাইন পার হয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডে ডিভিসি-র সেচ ক্যানালে মিশবে। বাকি ৯টি ওয়ার্ডের জল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতার কাছে সেচখালে মিশবে। কিন্তু পরিকল্পনাই সার। কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফলে, ভুগছেন পুরবাসী।

ওই পরিকল্পনা যখন হয়েছিল, তখন পুরসভা ছিল বামেদের হাতে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে বহু টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, অসমাপ্ত ও অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি কিছু নর্দমা ছাড়া কিছুই হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলিও বেহাল হয়ে পড়েছে। বছরভর সেই সব নর্দমায় জল দাঁড়িয়ে থাকে। জমা জল থেকে মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। তা থেকে রোগ ছড়াচ্ছে বলেও জানান বাসিন্দারা।

শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুরাতন পোস্ট অফিসপাড়ার বাসিন্দা বাণী সিংহ বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডটি অনুন্নত এলাকায়। বাঁশের সাঁকো বেয়ে পারাপার করতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় পাড়া। মুশকিলের শেষ থাকে না।” ওই ওয়ার্ডের বাজারপাড়ায় নর্দমার নোংরা, পোকামাকড় বাড়িতে ঢুকে পড়ে বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নর্দমা সংস্কারের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। অথচ, এক বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা তপন দাস ও গোপীবল্লভ বৈরাগ্যদের কথায়, “বড় বড় পোকা বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছি। অথচ পুরসভার ভ্রুক্ষেপ নেই।”

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে গিয়েছে গাঙ্গুর নদী। তা ছুঁয়ে গিয়েছে ১২, ১১, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডকেও। বাসিন্দাদের দাবি, নদীটি সংস্কার করলে ওই ওয়ার্ডগুলি তো বটেই, গোটা মেমারির নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফিরতে পারে। জনা কয়েক বাসিন্দার কথায়, “বড় রাস্তার পাশে কয়েকটি বড় নর্দমা তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যেখানে দরকার, সেখানে হয়নি।” তাঁরা জানান, নিকাশির এমনই দশা যে সামান্য বৃষ্টি হলেই জুতো হাতে নিয়ে পথ চলতে হয়। কৌশিক সরকার নামে তাঁদেরই এক জন বলেন, “মাঝেমাঝে বুঝতে অসুবিধা হয়, আমরা কী পুর এলাকায় বাস করি? না কি গ্রামেই পড়ে রয়েছি।”

৮ নম্বর ওয়ার্ডে নালা পেরিয়ে চলে নিত্য যাতায়াত।

শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি হিমঘরের সামনে রয়েছে অসমাপ্ত পাকা নর্দমা। সেখানে জল তো জমে থাকেই, একটি প্যাকেজিং সংস্থার পরিত্যক্ত দুধও এসে মেশে। নর্দমাটি মাত্র ১০০ ফুট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। আরও অন্তত ৪০০ ফুট নির্মাণ করা দরকার। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের নির্দেশ তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ২০১২ থেকে। তবু নর্দমা অসমাপ্ত। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ বলের দাবি, “প্রতি বোর্ড মিটিংয়ে ওই নর্দমার বাকিটা তৈরি করতে বলছি। পুরপ্রধান কান দেন না।”

আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার স্বপন ঘোষাল জানান, শহর জুড়ে নিকাশি নালা তৈরির জন্য তিন কোটি টাকা এসেছিল রাজ্য থেকে। তাঁর দাবি, “কিন্তু, যে ওয়ার্ডগুলিতে সামান্য কিছু কাজ হয়েছে, সেখানে কোনও উপভোক্তা কমিটি তৈরি করা হয়নি। এমনকী, স্থানীয় কাউন্সিলরদেরও সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে। জল জমার কথা পুরপ্রধানকে বহু বার বলেছি। গাঙ্গুর নদী সংস্কার, সেতু নির্মাণের কথাও বলেছি। কিন্তু কাজ করাতে পারছি না।” পুরসভার যদিও দাবি, গাঙ্গুরের কিছুটা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুপ্রিয় সামন্তের মতো বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর জানান, এই সংস্কারের কথা আছে পুরসভার নথিতে। বাস্তবে ঘটেনি। সিপিএমের মেমারি মধ্য লোকাল সম্পাদক সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “চলতি পুরবোর্ডের আমলে নিকাশির উন্নতি কিছুই হয়নি।” পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী যদিও বলছেন, “মেমারির যত বড় রাস্তা রয়েছে, তার পাশে সমস্ত নর্দমাই আমরা সংস্কার করেছি। নতুন বাসস্ট্যান্ড, চরদিঘি মোড়, কৃষ্ণবাজার, বামুনপাড়া মোড়ের মতো কয়েকটি জায়গায় বড় ও আধুনিক নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। তবে ৯, ১০-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে নিকাশির সমস্যা আছে।” তাঁর দাবি, তাঁরা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছেন। তা শুরু হয়ে গেলে নিকাশির কোনও সমস্যা থাকবে না।

ছবি: উদিত সিংহ।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta bardwan amar shohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE