দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।
ট্রাকের সঙ্গে লালবাতি লাগানো একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে তিন যাত্রীর। মঙ্গলবার ভোরে বর্ধমান-বোলপুর রোডের বলগনা মোড়ের কাছে ঘটনাটি ঘটে। মৃত তিনজনেই বীরভূমের বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বোলপুরের সেন্ট্রাল এক্সাইস অ্যান্ড কাস্টমস ও কর্মাসিয়াল ট্যাক্স বিভাগের সুপারিন্টন্ডেন্ট অমিতাভ চৌধুরীর স্ত্রী জয়ন্তী চৌধুরী ওই গাড়িটির মালিক। গাড়িটিতে গর্ভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া লেখা ছিল বলেও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে যে চার জন গাড়িতে ছিলেন তাঁরা কেউই সরকারি কর্মচারি নন। প্রত্যেকেই ভাড়া গাড়ির চালক বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
মৃত গোপাল সিংহ (২৯), ছোটন যাদব (২৮) ও দোলন যাদবের (২৬) বাড়ি বোলপুরের ত্রিশূলা পট্টিতে। আহত আর এক যাত্রী, সুমন বেসরাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে গুসকরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখান থেকে দুপুরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। ফলে সুমনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশদে ঘটনাটির খোঁজ করতে পারেনি পুলিশ। গাড়িটি থেকে মদের বোতল ও কিছু খাবার পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে চার গাড়িচালক একসঙ্গে ওই গাড়িতে কী করছিলেন, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, এ দিন বোলপুরমুখী এই ডবলুই বি-৪৮/৩৪৩৪ নম্বরের ওই গাড়িটি একটি কালভার্টে ধাক্কা মেরে রাস্তার সমান্তরাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাক সেটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই তিন জন। ট্রাকচালক ট্রাকটিকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার জেরে বোলপুর-বর্ধমান রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকালের ব্যস্ত সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বোলপুর ও বর্ধমানমুখী বহু গাড়ি প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক আটকে যায়।
প্রশ্ন উঠছে, সেন্ট্রাল এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমস ও কমার্সিয়াল ট্যাক্স বিভাগের সুপারের গাড়িতে কি লালবাতি লাগানো থাকতে পারে? গাড়ির মালিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই গাড়িটির মালিক জয়ন্তী চৌধুরী। তিনি বোলপুরের বাধগোড়া সিস্টার নিবেদিতা রোডের বাসিন্দা। তাঁর নামে কেনা এমন তিনটি গাড়ি গত ১০ মে থেকে অমিতাভবাবুর বিভাগেই ভাড়া খাটছে বলেও পুলিশ জেনেছে। যা একেবারেই বেআইনি। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, নিজের দফতর থেকেই প্রতি মাসে স্ত্রীর নামে কেনা গাড়ি পিছু ২৪৯৯০ টাকা ভাড়া আদায় করেন অমিতাভবাবু। আদায় করেন চালকের মাইনে-সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা, ভাড়া নেওয়া গাড়ির যা প্রাপ্য।
বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অমিতাভবাবুর স্ত্রীর নামে কেনা তিনটি গাড়িতেই লালবাতি লাগানো ছিল। সেটা বেআইনি। ওই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি বাকি দুটি গাড়ির লালবাতি খুলে ফেলেন। অথচ দিন দুই আগেই পরিবহন দফতরের তরফে তাঁকে গাড়িগুলি থেকে ওই লালবাতি খুলে ফেলতে নির্দশে দেওয়া হয়েছিল।” পুরো বিষয়টি রাজ্য পুলিশের উর্দ্বতন কর্তাদের জানানো হয়েছে বলেও জেলা পুলিশ জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অমিতাভবাবুকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমার পোস্টিং সিউড়িতে। আমাকে প্রতিদিনই গাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। তবে ওই গাড়ির মালিক আমি নই। আমি সরকারি কর্মচারী। আমার নামে গাড়ি থাকার নিয়ম নেই।” কিন্তু গাড়ি তো আপনার স্ত্রীর নামে? অমিতাভবাবুর জবাব, “সেটা হতে পারে।”
কিন্তু সরকারি নির্দেশ আসা সত্ত্বেও ওই গাড়ি থেকে লালবাতি খোলা হয়নি কেন? অমিতাভবাবু বলেন, “আমি এখন শ্মশানে। দুর্ঘটনায় মৃত তিনজনের সত্কার করাচ্ছি। এত প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।” গাড়িটি বর্ধমানে কী কাজে গিয়েছিল তাও বলতে পারেননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy