রাজ্যে ৪২-এ ৩৪ পাওয়া সত্ত্বেও তাঁর বিপুল জয়ের আবহে চোনা ফেলে দিয়েছিল আসানসোল। মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ওই আসন খুইয়ে রাতেই আসানসোল কেন্দ্রে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটককে কলকাতায় তলব করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
দলীয় সূত্রে খবর, শুধু মলয় নন, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে যে ৫টি বিধানসভা শাসকদলের দখলে আছে, ডাক পড়তে পারে সেই পাঁচ কেন্দ্রের বিধায়কেরও। তৃণমূল ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় ওই বিধায়কদের কাছে জানতে চাওয়া হবে, আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী দোলা সেনের পরাজয়ের কারণ কী?
দোলাকে হারিয়ে ওই কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বিজেপি’র বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলে মোদী-ঝড়ের প্রভাব ছিল। তবে দোলার পরাজয়ের পিছনে দলীয় কোন্দলকেও কিঞ্চিৎ দায়ী করছেন দলেরই একাংশ। তার জেরেই মলয়বাবুদের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চলেছে দল?
শনিবার রাতে এ ব্যাপারে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সংক্ষিপ্ত জবাব, “মলয় ঘটককে নিয়ে দলে সিদ্ধান্ত হয়নি।” মলয়বাবু বলছেন, “আসানসোলে আমাদের প্রার্থী হেরে যাওয়ায় মন-মেজাজ খুব খারাপ। আর কিছুই বলার নেই।”
আসানসোল পুরসভার মেয়র তথা আসানসোল (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে শনিবার সন্ধ্যায় তাপসবাবু বলেন, “দলের অনেকেই আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করছেন বটে, কিন্তু কলকাতা থেকে আমি কোনও নির্দেশ পাইনি। আমাকে এখনও কেউ ফোনও করেননি।”
দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এখন ওই নেতা-মন্ত্রীদের সতর্ক করেই ছাড় দেওয়া হতে পারে। কেন? আসানসোল শহর এবং লাগোয় খনি এলাকা জুড়ে তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মলয় ঘটকই শাসকদলের পরিচিত মুখ। সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে দল এখনই কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে দলের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হতে পারে বলে জেলা নেতাদেরই একাংশের আশঙ্কা। এমনকী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ওই বিধায়ক ও নেতাদের অনুগামীদের অনেকেই বিজেপি’র দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন বলেও দলের শীর্ষ নেতাদেরও অনেকে মনে করছেন।
মলয় ও তাপসের আসানসোল-উত্তর ও আসানসোল-দক্ষিণ বিধানসভা আসন দু’টিতেই নয়, লাগোয়া কুলটি, বারাবনি কিংবা রানিগঞ্জ আসনেও কোথাও ২২ কোথাও বা প্রায় ৪০ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন দোলা সেন। তবে এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও বারাবনির বিধান উপাধ্যায় কিংবা রানিগঞ্জের সোহরাব আলির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাতে কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যে পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছি। তবে এখনও কোনও ফোন পাইনি।”
আসানসোল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন এগিয়ে ছিলেন একমাত্র যে আসনে সেই পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রটি সিপিএমের দখলে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শাসকদলের প্রার্থীই। তাঁর শেষ নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রায় ফাঁকা মাঠেই প্রচার করে গিয়েছিলেন মমতা। দলীয় নেতাদের কোন্দলের আঁচ পেয়ে সে দিনই খোলা মঞ্চ থেকে দলনেত্রী সতর্ক করেছিলেন, ‘সবাইকে এক সঙ্গে লড়তে হবে’ বলে। প্রচারে গিয়ে বিজেপি প্রার্থীরও হাতিয়ার ছিল তৃণমূলের দলীয় কোন্দল।
দলের একাংশ মনে করছেন, দলনেত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কেন কোন্দল মিটিয়ে জোটবদ্ধ হওয়া গেল না, এখন তারই ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে মলয়বাবুদের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy