Advertisement
০৬ মে ২০২৪

দম্পতির মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা, ধৃত দুই ছেলে

সন্তানেরা দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় কালনায় গিয়ে ভাগীরথীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুর্গাপুরের বৃদ্ধ দম্পতি অনঙ্গ সরকার ও বেলা সরকার। তাঁদের অবশ্য মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচান এক মাঝি। কুলটির বৃদ্ধ দম্পতি মানিকচন্দ্র মণ্ডল ও মীরা মণ্ডলকে অবশ্য বাঁচানো যায়নি। রবিবার কীটনাশকে অসুস্থ হয়ে কুলটির আলডি গ্রামের ওই দম্পতির মৃত্যুর পরে মেয়ে সীমা মাজি তাঁর দুই দাদার বিরুদ্ধে বাবা-মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। ওই রাতেই পুলিশ দম্পতির বড় ছেলে চঞ্চল মাজিকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার করা হচ্ছে ছোট ছেলেকে।—নিজস্ব চিত্র।

গ্রেফতার করা হচ্ছে ছোট ছেলেকে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৪:০৫
Share: Save:

সন্তানেরা দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় কালনায় গিয়ে ভাগীরথীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুর্গাপুরের বৃদ্ধ দম্পতি অনঙ্গ সরকার ও বেলা সরকার। তাঁদের অবশ্য মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচান এক মাঝি। কুলটির বৃদ্ধ দম্পতি মানিকচন্দ্র মণ্ডল ও মীরা মণ্ডলকে অবশ্য বাঁচানো যায়নি।

রবিবার কীটনাশকে অসুস্থ হয়ে কুলটির আলডি গ্রামের ওই দম্পতির মৃত্যুর পরে মেয়ে সীমা মাজি তাঁর দুই দাদার বিরুদ্ধে বাবা-মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। ওই রাতেই পুলিশ দম্পতির বড় ছেলে চঞ্চল মাজিকে গ্রেফতার করে। সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয় ছোট ছেলে উৎপল মণ্ডলকে। দম্পতির দুই পুত্রবধূকেও খুঁজছে পুলিশ।

দাদারা বাবা-মায়ের ঠিক মতো দেখভাল না করার জন্যই এমন ঘটেছে বলে রবিবার অভিযোগ করেছিলেন সীমাদেবী। এ দিন আলডি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীরাও এই মৃত্যুর ঘটনার জন্য দম্পতির ছেলেদেরই দোষারোপ করছেন। তাপস মণ্ডল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, ইস্কোর প্রাক্তন কর্মী মানিকবাবু নিজে দোতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। অথচ, গত কয়েক বছর ধরে নিজের বাড়িতেই স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর থাকার জায়গা হচ্ছিল না। একচিলতে বারান্দায় কাঠের চৌকি পেতে তাঁরা দু’জন থাকছিলেন। এ দিন সেখানে উপস্থিত আত্মীয় পরিজনেরাও অভিযোগ করলেন, দুই ছেলের কেউই বাবা-মাকে একটানা দীর্ঘদিন নিজেদের কাছে রাখতে চাননি। তারা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে, বাবা-মা ৯০ দিন করে এক-এক জনের কাছে থাকবেন । কিন্তু এ বার বড় ছেলের কাছে ৯০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ছোট ছেলে বাবা-মাকে নিতে আসেনি। এ দিকে আবার বড় ছেলেও তাঁদের রাখতে চাননি। পরিজনদের অভিযোগ, এই অবস্থায় বারান্দার এক কোণে অনাহারেই পড়েছিলেন দম্পতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দম্পতির এক আত্মীয়ার অভিযোগ, “আমি ওঁদের দু’জনকে রান্না করে খাবার দিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওঁদের ছেলে-ছেলের বৌ তা আমাদের দিতে দেয়নি।” এই পরিস্থিতিতে তাঁর দোকান থেকে শুকনো চিঁড়ে, বাতাসা, মুড়ি চেয়ে নিয়ে গিয়ে খাচ্ছিলেন তাঁরা, জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপিন কর্মকার। প্রতিবেশী ও পরিজনদের দাবি, এ ভাবে চলতে চলতে বাঁচার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন ওই দম্পতি।

অভিযোগ পেয়ে রবিবার রাতে পুলিশ গ্রামে গেলে বাসিন্দারাই মৃত দম্পতির বড় ছেলেকে ধরতে সাহায্য করেন। সোমবার সকালে আলডি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাসিন্দারা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে দুর্গাপুর থেকে সেখানে এসে পৌঁছন দম্পতির ছোট ছেলে উৎপলবাবু। তাঁকে দেখেই রে-রে করে তেড়ে যান বাসিন্দারা। উৎপলবাবু দাবি করেন, “যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা।” তবে গোলমাল বেশি পাকার আগেই পুলিশ তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দার দাবি, “এই ঘটনায় আমাদের কাছে লজ্জার। যারা দোষী, তাদের কড়া শাস্তি চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE