Advertisement
E-Paper

দলীয় প্রধানে অনাস্থা এনে গ্রামছাড়া তৃণমূল সদস্যেরা

দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই নয় সদস্য। ২৪ অক্টোবর ভোটাভুটির দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে এলাকাছাড়া হয়ে যান কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ওই সদস্যেরা। পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্যের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগও দায়ের করে ‘নিখোঁজ’ সদস্যদের পরিবার। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ফের মহকুমা প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা পাঠিয়ে আপাতত অনাস্থা ভোট স্থগিত রাখার কথা বলা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০০

দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই নয় সদস্য। ২৪ অক্টোবর ভোটাভুটির দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে এলাকাছাড়া হয়ে যান কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ওই সদস্যেরা। পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্যের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগও দায়ের করে ‘নিখোঁজ’ সদস্যদের পরিবার। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ফের মহকুমা প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা পাঠিয়ে আপাতত অনাস্থা ভোট স্থগিত রাখার কথা বলা হয়। কারণ হিসেবে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।

বামেদের শক্ত ঘাঁটি সুলতানপুর এ বারই প্রথম ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ১৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি যায় তৃণমূলের দখলে। বাকি দু’টি আসন পায় সিপিএম। তৃণমূলেরই এক সূত্রের খবর, ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই নানা বিষয়ে প্রকাশ্যে চলে আসে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত প্রধান সুকুর শেখ ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য সাদেক শেখের গোষ্ঠীর মধ্যে নানা বিষয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানের বিরুদ্ধে কালনা ১ এর বিডিও সব্যসাচী রায়চৌধুরীর কাছে লিখিত ভাবে অনাস্থা আনেন দলেরই ৯ সদস্য। যদিও লেখায় কিছু ভুল থাকায় বিডিও সেটি বাতিল করে দেন। পরের দিন ফের অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন ওই সদস্যেরা। ২৪ অক্টোবর ভোটাভুটির দিনও স্থির হয়ে যায়।

ইতিমধ্যে গত বুধবার ওই নয় তৃণমূল সদস্য ও এক সিপিএম সদস্য এলাকাছাড়া হন। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রধানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের নেতৃত্বে এই কৌশল নেন তাঁরা। পরিকল্পনা ছিল, ভোটের দিন ফিরে আসবেন ওই সদস্যেরা। তবে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই দলের অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। জেলার এক মন্ত্রী জানিয়ে দেন, দলের সদস্যদের ভোটে দলেরই প্রধান পরাজিত হলে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তাঁর নির্দেশেই সুলতানপুর ‘অপারেশনে’ নামেন কিষাণ তৃণমূলের জেলা সভাপতি রাজকুমার পাণ্ডে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে কয়েকদিন সুলতানপুরে থাকেনও তিনি।

দলীয় সূত্রে খবর, অনাস্থা রুখতে দফায় দফায় আলোচনা বসে। সাদেক শেখকে সরে আসার কথাও বলা হয়। তিনি প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ায় তাঁকে জানানো হয়, দল প্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। চার সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি সাদেক শেখকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, সুলতানপুর পঞ্চায়েতের বর্তমান সভাপতি অসুস্থ। সেক্ষেত্রে তাঁকে পঞ্চায়েত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া দেওয়া হতে পারে। জেলার এক মন্ত্রীর সঙ্গে হেমায়েতপুরের কার্যালয়ে এ নিয়ে সাদেক শেখের দীর্ঘ কথাবার্তা হয় বলেও জানা গিয়েছে। তবে অনড় থাকেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার কর্মাধক্ষ্য। পাল্টা চাপ দিতে সাদেক শেখের বিরুদ্ধে ওই সদস্যদের অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। সঙ্গে বোঝানোর কাজও চলতে থাকে বলে দলের খবর। রবিবার বিকেলে সাদেক শেখ বলেন, “দলের কয়েকজনের কথায় প্রথমে ওই দশ সদস্যের পাশে ছিলাম। তবে দলের কথা ভেবেই শনিবার থেকে সরে এসেছি। অপহরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তাঁর দাবি, “যাঁরা এলাকার বাইরে রয়েছেন তাঁরা স্বেচ্ছায় গিয়েছেন। আমায় সে কথা এসএমএসে জানিয়েছেন তাঁরা। প্রয়োজনে প্রশাসনকে তা দেখাতেও পারব।” তাঁর দাবি, যে সদস্যরা বাইরে রয়েছেন তাঁরা ভয়ে এলাকাছাড়া। আর প্রধান সুকুর শেখের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছেন। ২৩ তারিখ একটি মিছিল করা হবে। সেখানেই তা ফের প্রমাণ হয়ে যাবে।”

আর রাজকুমারবাবুর প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি একান্তই দলের। যা জানানোর দলীয় নেতৃত্বকেই জানাব।” কালনা ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহরায় বলেন, “যাঁরা দলবিরোধী কাজ করছেন তাঁদের শাস্তি পেতে হবে।” সদস্যেরা এলাকাছাড়া কেন জানতে চাইলে উমাশঙ্করবাবুর জবাব, “কেউ যদি সমুদ্রে বেড়াতে যায় আমাদের কি বলার আছে?” কিন্তু সিপিএমের ওই সদস্যও বাইরে কেন? দলের কালনা ১ দক্ষিণ লোকাল কমিটির এক নেতা বলেন, “বিষয়টির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। উনি ফিরলে কথা বলা হবে।”

কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “পুলিশের রিপোর্টে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। পুজোর মরসুমে পর্যাপ্ত পুলিশও দেওয়া যাবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাই ওই প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।”

kalna sultanpur no-confidence motion tmc candidates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy