Advertisement
০৫ মে ২০২৪
দুর্নীতির অভিযোগের পরে অচলাবস্থা

নেই প্রধান শিক্ষিকা, বিপাকে পরীক্ষার্থীরা

সামনে উচ্চ মাধ্যমিক। অথচ তার সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই স্কুলে আসছেন না প্রধান শিক্ষিকা। ফলে তাঁর সইবিহীন অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রীরা। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় মুশকিলে পড়েছে একাদশ শ্রেণির চার ছাত্রীও। বুধবার বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় কালনা শহরের শশীবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুল পরিচালন সমিতি অবশ্য দায় চাপিয়েছে প্রধান শিক্ষিকার উপরেই।

কালনার এই স্কুলেই সমস্যায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

কালনার এই স্কুলেই সমস্যায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৩
Share: Save:

সামনে উচ্চ মাধ্যমিক। অথচ তার সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই স্কুলে আসছেন না প্রধান শিক্ষিকা। ফলে তাঁর সইবিহীন অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছাত্রীরা। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় মুশকিলে পড়েছে একাদশ শ্রেণির চার ছাত্রীও। বুধবার বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় কালনা শহরের শশীবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। স্কুল পরিচালন সমিতি অবশ্য দায় চাপিয়েছে প্রধান শিক্ষিকার উপরেই।

ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য মাস পাঁচেক আগেই। স্কুল পরিচালন সমিতি ওই প্রধান শিক্ষিকা, স্নিগ্ধা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে জেলা সর্বশিক্ষা মিশনও। প্রধান শিক্ষিকা বিরুদ্ধে থানায় দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। এই ঘটনার পর বেশ কিছু দিন ছুটিতে ছিলেন স্নিগ্ধাদেবী। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি স্কুলে যোগ দেন। এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়। এ বার মিড-ডে মিলে কারচুপির অভিযোগ তুলে কালনা আদালতে ওই প্রধান শিক্ষিকা এবং স্কুলের দুই গ্রুপ ডি কর্মী রতন বিশ্বাস এবং গৌড়চন্দ্র মালাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে স্কুল পরিচালন সমিতি। আদালতের নির্দেশে কালনা থানা ৬ মার্চ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

স্কুল পরিচালন সমিতির দাবি, ৪ মার্চ থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন ওই তিন জন। ইতিমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড বিলি করা শুরু হয়। প্রধান শিক্ষিকা না থাকায় তাঁর সই ছাড়াই অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয় ছাত্রীদের। এ বছর নতুন সিলেবাসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১৩ মার্চ থেকে। পুরনো সিলেবাসে যারা পরীক্ষা দেবে তাদের শুরু আরও এক দিন আগে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ সিলেবাসে এ বার পরীক্ষা দিচ্ছে ৯৬ জন ছাত্রী। তাদের আসন পড়েছে কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ে। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রে অ্যাডমিট কার্ড দেখার সময়ে দেখা নেওয়া হয় যে প্রধান শিক্ষিকের সই রয়েছে কি না। বুধবার স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক চন্দন সরকার জানান, ৪ মার্চ থেকে প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে না আসায় আমরা তাঁর সই ছাড়াই অ্যাডমিট বিলি করি। তবে বুধবার এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বহু পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। এই অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে ঠিকটাক পরীক্ষা দেওয়া যাবে কি না, সে প্রশ্নও করেন তাঁরা। এরপরেই বিষয়টি জেলা স্কুল পরিদর্শকের নজরে আনা হয়। চন্দনবাবুর দাবি, “মেয়েদের এই বিপদে ফেলার জন্য দায়ী প্রধান শিক্ষিক।” এর সঙ্গে এক দৃষ্টিহীন ছাত্রীরও পুরনো সিলেবাসে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত তার অ্যাডমিট কার্ডই পৌঁছয় নি।

এ ছাড়া ওই স্কুলের ৮৬ জন ছাত্রীর এ বার একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বসার কথা। তাদেরও পরীক্ষা শুরু হবে ১৩ মার্চ থেকে। চন্দনবাবুর দাবি, এর মধ্যে এখনও চার ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন হয়নি। রেজিস্ট্রেশন না হলে নিয়ম মতো পরীক্ষায় বসতেও পারবে না তারা। এর পিছনেও প্রধান শিক্ষিকের গাফিলতি রয়েছে বলে পরিচালন সমিতির অভিযোগ। ওই চার ছাত্রীর বাদ পড়ে যাওয়ার কারণ জানতে গিয়ে জানা যায়, প্রথমে যখন রেজিস্ট্রেশন হয় তখন ওই ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন না। পরে স্কুলের তরফে বোর্ডের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কিছু নথিপত্র দ্রুত জমা দিতে বলা হয়। ছাত্রীরা সেই সব নথি স্কুলে জমা দিলেও দুর্ভাগ্যবশত সেই নথি পাঠানো হয় নি বলে তাদের দাবি। ফলে পরীক্ষায় বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গিয়েছে। যদিও তাদের পরিক্ষায় বসানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পরিচালন সমিতি। বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, এঁদেরই একজন সোমা বালা কাঁদছে। জিজ্ঞেস করায় বলে, “জানি না এ বার পরীক্ষা দিতে পারব কি না।”

শহরের অন্যতম মেয়েদের স্কুলটির সমস্যার কথা পৌঁছেছে মহকুমা প্রশাসনের কানেও। মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “অ্যাডমিট কার্ডে প্রধান শিক্ষকের সই না থাকা নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি জানিয়েছেন, যেখানে পরীক্ষার আসন পড়েছে সেই কেন্দ্রে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে দেবেন। বাকি সমস্যাগুলিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” মহকুমাশাসকের দাবি, “স্কুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি রয়েছে তার তদন্ত চলছে। প্রধান শিক্ষিককে বেশ কিছু নথি জমা দিতে বলেছি।” তবে স্নিগ্ধাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় নি।

জেলা স্কুল পরিদর্শক খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “অ্যাডমিট কার্ডে সই না করার বিষয়টি মোটামুটি মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। আর যে সমস্ত পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন হয় নি, সেই বিষয়টি উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলকে জানানো হয়েছে। আশা করছি তাঁরা পরীক্ষা দিতে পারবেন। আর ওই দৃষ্টিহীন ছাত্রীও যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalna kedarnath bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE