Advertisement
E-Paper

নেতার কাজে ক্ষোভ সিন্ডিকেটের অন্দরেও

যাঁর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক, সেই নেতার ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগ সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাংশেরও। খোকন রুইদাস নামে দুর্গাপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল সভাপতি সিন্ডিকেটের রোজগার আত্মসাত্‌ করেছেন বলে দাবি করেছেন ওই সদস্যেরা।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৫
সগড়ভাঙায় এই সব কারখানায় সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

সগড়ভাঙায় এই সব কারখানায় সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

যাঁর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক, সেই নেতার ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগ সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাংশেরও। খোকন রুইদাস নামে দুর্গাপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল সভাপতি সিন্ডিকেটের রোজগার আত্মসাত্‌ করেছেন বলে দাবি করেছেন ওই সদস্যেরা। খোকনবাবু অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাঁর আর কোনও সম্পর্কই নেই।

দুর্গাপুরের মুচিপাড়ায় আইটিআইয়ের কাছে রয়েছে ‘কুসুমতলা মুচিপাড়া সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র কার্যালয়। সদস্যেরা জানান, খোকনবাবুর নেতৃত্বে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করার জন্য ২০১২ সালে ৮৪ জন সদস্য নিয়ে এই সোসাইটি কাজ শুরু করে। প্রত্যেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে ৪৩ জন রোজগারের উদ্দেশ্যে ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ শুরু করেন। এলাকায় বেসরকারি নির্মাণের পাশাপাশি আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) স্থানীয় একটি শিল্পতালুকেও নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হতে থাকে এই গোষ্ঠীর তরফে।

শিল্পতালুকের একাধিক শিল্পোদ্যোগী অভিযোগ করেন, যে কোনও নির্মাণ কাজে ওই সিন্ডিকেট থেকেই সামগ্রী নেওয়া বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। সামগ্রীর গুণমান বা দাম নিয়ে কথা বলার কোনও প্রশ্ন নেই। নামপ্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন শিল্পোদ্যোগী বলেন, “নির্মাণ সামগ্রীর দাম বহু গুণ বেশি নেওয়া হয় এমন নয়। কিন্তু সামগ্রীর গুণমান আশানুরূপ হয় না অনেক সময়। তা ছাড়া পাইকারি হারে বাইরে থেকে কম দামে নির্মাণ সামগ্রী কেনার সুযোগ নেই। এমনকী, সময়ে সামগ্রী মেলে না অনেক সময়। সব মিলিয়ে নির্মাণের খরচ বেড়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আপাতত কোনও রকম সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

কয়েকটি সংস্থা কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পরে দুর্গাপুরের বিধায়ক তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় সপ্তাহখানেক আগে খোকনবাবুর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের কাছে। তবে চিঠিতে খোকনবাবুর রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করেননি তিনি। তাঁর দাবি, খোকনবাবুর তোলাবাজির জেরে অতিষ্ঠ ওই শিল্পতালুকের কারখানা মালিকেরা এবং মুচিপাড়ার ব্যবসায়ীরা। তাঁর আরও অভিযোগ, খোকনবাবু এডিডিএ-র জায়গায় তাঁর আত্মীয়ের নামে অবৈধ ভাবে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন বলে জেনেছেন। নিখিলবাবু বলেন, “তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় এবং আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই জানান, সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্রব না রাখার ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশ সবাইকেই মানতে হবে।

এ দিকে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাংশ আবার খোকনবাবুর বিরুদ্ধে সোসাইটির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সোসাইটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি নিজের হাতে রেখেছেন খোকনবাবু। প্রথম থেকে মাত্র এক বার ‘অডিট’ হয়েছিল। তার পর থেকে আর কোনও অডিট হয়নি। সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভাও হয় না। সোসাইটি থেকে নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষকে সরিয়ে নিজের পছন্দের এক জনকে সেখানে রেখেছেন তিনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সদস্যের দাবি, শাসকদলের নেতা হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন খোকনবাবু। প্রতিবাদ করলে ধমক শুনতে হয়।

খোকনবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এলাকার বেকার যুবকদের রোজগারের সুযোগ করে দিতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের যৌথ ব্যবসা চালু করে দিয়েছিলাম। পরে আমি সরে আসি।” তাঁর আরও দাবি, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয় বাজার দর অনুযায়ী। কোনও জবরদস্তি করা হয় না। সদস্যদের একাংশের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এমন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সোসাইটির সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই।”

syndicate tmcleader subratasheet durgapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy