Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নেতারা ব্যস্ত কমিটি নিয়ে, ভর্তি মিটল শান্তিতে

সাংগঠনিক রদবদলের জন্য আসানসোল-দুর্গাপুরে দলের নানা কমিটি ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছোট-মেজো নেতারা। সেই ফাঁকে প্রায় শান্তিতে মিটল শিল্পাঞ্চলে কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া। শাসকদলের নেতাদের মনোযোগ অন্যত্র থাকায় এই প্রক্রিয়া এ বার কোনও গোলযোগ ছাড়া মিটল বলে মনে করছেন অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ। অন্যত্র যেখানে কাউন্সেলিং ঘিরে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠছে, সেখানে তুলনায় নির্বিঘ্নে ভর্তি সেরে স্বস্তিতে এখানকার নানা কলেজ কর্তৃপক্ষও।

সুব্রত সীট ও সুশান্ত বণিক
দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

সাংগঠনিক রদবদলের জন্য আসানসোল-দুর্গাপুরে দলের নানা কমিটি ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছোট-মেজো নেতারা। সেই ফাঁকে প্রায় শান্তিতে মিটল শিল্পাঞ্চলে কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া। শাসকদলের নেতাদের মনোযোগ অন্যত্র থাকায় এই প্রক্রিয়া এ বার কোনও গোলযোগ ছাড়া মিটল বলে মনে করছেন অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ। অন্যত্র যেখানে কাউন্সেলিং ঘিরে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠছে, সেখানে তুলনায় নির্বিঘ্নে ভর্তি সেরে স্বস্তিতে এখানকার নানা কলেজ কর্তৃপক্ষও।

দুর্গাপুরের তিনটি কলেজের মধ্যে মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজ এবং মহিলা কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া এখন প্রায় শেষ দিকে। ভর্তি চলাকালীন কোনও পক্ষের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ তাঁদের বিড়ম্বনায় ফেলেনি। দুর্গাপুর সরকারি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া হয়েছে অনলাইন পদ্ধতিতে। নির্দিষ্ট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা বেরিয়েছে। এই তিনটি কলেজেই ছাত্র সংসদ রয়েছে টিএমসিপি-র দখলে। রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের মুখে। অধ্যক্ষ নৃপঙ্কর হাজরা জানান, পাশ কোর্সের কয়েকটি আসনে ভর্তি বাকি রয়েছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি নিয়েছেন তাঁরা। ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা সরাসরি যোগ দেননি বলে জানান তিনি। তবে বাইরে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, “আমরা মেধা তালিকা প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম। কারচুপির কোনও জায়গা ছিল না। তাই কোনও সমস্যা হয়নি।’’ তাঁর দাবি, কোনও অন্যায় সুপারিশ ছাত্র সংসদের তরফে আসেনি।

আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, মেধা তালিকা কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই তালিকা উচ্চশিক্ষা দফতরেও পাঠিয়েছেন। প্রক্রিয়াটি তাঁরা ছাত্র সংসদকেও জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ছাত্র সংসদ এই বিষয়টিকে অভিনন্দন জানিয়ে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনও অশান্তি এ বার হয়নি।” অমলেশবাবু জানান, নিজেদের সিদ্ধান্ত মতো কাজ করেছেন তাঁরা। অশান্তি এড়াতে এ বার কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াই রাখেননি কুলটি কলেজের অধ্যক্ষ লক্ষ্মীনারায়ণ নিয়োগী। যদিও কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, “মেধা তালিকা নোটিস বোর্ডে ঝুলিয়ে দিয়েছি। কোনও রাখঢাক ছিল না। নিয়ম মেনেই ভর্তি হয়েছে। ছাত্র সংসদেরও কিছু বলার ছিল না।”

গত বছর দুর্গাপুর সরকারি কলেজ ও রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজে টিএমসিপি-র ছাত্র সংসদের তরফে ফর্ম বিলি করে টাকা তোলার অভিযোগ তুলেছিল এসএফআই। এ বার তেমন কোনও অভিযোগ কোনও কলেজে ওঠেনি শিল্পাঞ্চলে। রাজ্য জুড়ে এ বার যখন অশান্তির খবর, শিল্পাঞ্চলে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শান্তিতে মিটে যাওয়ার রহস্য কী? তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংগঠনিক রদবদল হবে বলে সম্প্রতি শিল্পাঞ্চলে দলের বিভিন্ন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে, এত দিন যাঁরা সেই সব কমিটির মাথায় ছিলেন তাঁরা নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা হারিয়েছেন। নতুন কমিটিতে তাঁদের জায়গা থাকবে কি না, তা নিয়েই এখন তাঁরা ব্যস্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্গাপুর শহরের এক টিএমসিপি নেতা জানান, ছাত্রনেতারা নিজেরা সে ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। সব সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই পা বাড়ান। কারণ, কোনও সমস্যা তৈরি হলে সেই নেতা প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রনেতাদের সমস্যামুক্ত করতে পারেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি তেমন ছিল না। ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন দলের বহু নেতাই ব্যস্ত ছিলেন দলে নিজের নিজের জায়গা কী ভাবে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে। ফলে, কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর ব্যাপারে তাঁরা উৎসাহী ছিলেন না। নেতারা আগ্রহ না দেখানোয় কলেজের ছাত্রনেতারাও বেশি উদ্যোগী হওয়ার সাহস পাননি। এর ফলে কলেজে-কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ছাত্রনেতাদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

টিএমসিপি অবশ্য প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করতে চায়নি। সংগঠনের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অশোক রুদ্র দাবি করেন, তাঁর দায়িত্বে জেলার ১৫টি কলেজ রয়েছে। সব কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন কলেজ কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকুক, সেটাই আমরা চাই। তাই কোনও রকম বিতণ্ডা ছাড়াই শিল্পাঞ্চলে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE