Advertisement
০২ মে ২০২৪

পাচার চলছেই, ধরা পড়ছে কয়লার লরি

রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশ-প্রশাসন বারবার দাবি করে এসেছে, অবৈধ কয়লা খনন ও পাচারে রাশ টানা গিয়েছে। ইসিএলের বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসার পিছনেও তা অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন শাসকদলের নেতারা। তবে প্রকাশ্য রাস্তায় গরুর গাড়ি বা সাইকেলে তো বটেই, গত কয়েক মাসে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়া কয়লা বোঝাই ট্রাক বা লরির হিসেব থেকেও পরিষ্কার, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় কয়লা কারবারে ছেদ এখনও দূর অস্ত।

রূপনারায়ণপুরে মোটরবাইকে করে চলছে কয়লা পাচার। ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

রূপনারায়ণপুরে মোটরবাইকে করে চলছে কয়লা পাচার। ছবিটি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশ-প্রশাসন বারবার দাবি করে এসেছে, অবৈধ কয়লা খনন ও পাচারে রাশ টানা গিয়েছে। ইসিএলের বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসার পিছনেও তা অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন শাসকদলের নেতারা। তবে প্রকাশ্য রাস্তায় গরুর গাড়ি বা সাইকেলে তো বটেই, গত কয়েক মাসে পুলিশি অভিযানে ধরা পড়া কয়লা বোঝাই ট্রাক বা লরির হিসেব থেকেও পরিষ্কার, আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় কয়লা কারবারে ছেদ এখনও দূর অস্ত।

খনি অঞ্চলে বেআইনি কয়লা খনন চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত তিন পদ্ধতিতে এই কয়লা চুরি চলে। প্রথমত, ইসিএল বা ব্যক্তি মালিকানার জমিতে অবৈধ খাদান তৈরি করে কয়লা তোলা হয়। দ্বিতীয়ত, ইসিএলের বন্ধ বা চালু খোলা মুখ খনিতে গভীর সুড়ঙ্গ (র্যাট হোল) বানিয়ে কয়লা তোলা হয়। তৃতীয়ত, ইসিএলের কয়লা ডম্পার বা রেলের পরিবহণের সময়ে কয়লা নামিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠনের পরে ইসিএল বা ব্যক্তি মালিকানার জমিতে খাদান তৈরি করে কয়লা তোলা কমেছে। কিন্তু অন্য সব পদ্ধতিতে এখনও চুরি চলছে।

পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন বারাবনি ও সালানপুরে কয়লা চুরির রমরমা সবচেয়ে বেশি। এর পরে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি ও আসানসোলের কিছু এলাকায় চলছে এই চুরি। সালানপুরের বনজেমাহারি, সংগ্রামগড়, ডাবর কোলিয়ারি লাগোয়া এলাকায় খাদান গড়ে কয়লা তুলছে চোরেরা। বনজেমাহারি রেল সাইডিং থেকেও কয়লা চুরি যাচ্ছে। বারাবনির রসুনপুর এলাকা থেকেও চোরেরা কয়লা কাটছে। সাইকেল, গরুর গাড়ি বা মোটরবাইকে চাপিয়ে এই কয়লা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া অবৈধ ডিপোয়। রূপনারায়ণপুরের দেশবন্ধু পার্ক লাগোয়া এলাকার কিছু বাসিন্দার অভিযোগ, চোরেরা অবৈধ কয়লা পুড়িয়ে তা বস্তাবন্দি করে জ্বালানির কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করে। সেই কয়লা পোড়ানোর জেরে দূষণে তাঁরা নাজেহাল হচ্ছেন বলে ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এই দূষণে শ্বাস নিতে পারি না। ঘরের দরজা-জানালা খোলা থাকলে হাঁফ ধরে যায়।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশকে অনেক বার বলেও কিছু হচ্ছে না।

বারাবনির জামগ্রাম, গৌরান্ডি, মদনপুর, সরিষাতলি এলাকাতেও অবৈধ কয়লার কারবার রমরম করে চলছে বলে এলাকা সূত্রে জানা যায়। যার জেরে মাঝে-মধ্যে ধসের ঘটনাও ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় দাবি করেন, বামেদের সময় থেকে চলে আসা এই অবৈধ কারবার চলছে এখন কিছুটা রোধ করা গেলেও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। পাপ্পু বলেন, “আমরা পুলিশের কাছে এই চুরি বন্ধের দাবি করেছি। তা না হলে এক দিন সবাই তলিয়ে যাব।” জামুড়িয়ার কাটাগড়িয়া জঙ্গল, পরিহারপুর, নন্ডি, কুলটির মিঠানি, বেজডিহি, দামাগড়িয়া, বড়িরা, আসানসোলের কালিপাহারি, নুনিয়াবুড়ি, গিরমিট, লালডাঙা এলাকাতেও কয়লা চুরি চলছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের দাবি।

বাসিন্দাদের দাবি যে ভুল নয়, তার প্রমাণ মিলেছে পুলিশি অভিযানে নিয়মিত অবৈধ কয়লার লরি আটক হওয়ার ঘটনায়। বারাবনির সরিষাতল, গৌরান্ডি, সালানপুরের বনজেমাহারি, জামুড়িয়ার চুরুলিয়া, কাটাগড়িয়া রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর, আমরাসোঁতা, রূপনারায়ণপুরের লোয়ার কেশিয়া, আসানসোলের কালিপাহাড়ি থেকে গত কয়েক মাসে নানা সময়ে কয়লার লরি ও ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফতারও হয়েছে বেশ কয়েক জন। ইসিএলের মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক রানা চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা গত আট মাসে বিভিন্ন থানায় একাধিক কয়লা চুরির অভিয়োগ দায়ের করেছেন।

বেআইনি কয়লা চুরি প্রসঙ্গে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বক্তব্য, “পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়। অবৈধ কয়লা বোঝাই লরি দেখলেই ধরা হয়।” তিনি আরও জানান, তাঁরা ইসিএল-কে জানিয়েছেন, স্থানীয় থানায় জানালেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। অবৈধ খাদান ভরাটেও তাঁরা সাহায্য করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sushanta banik coal trafficking ecl rupnarayanpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE