Advertisement
E-Paper

পাটে ঘোড়াপোকা, চিন্তায় চাষিরা

পাট জমিতে ক্ষতিকারক ঘোড়া পোকা এবং মাকড়ের আক্রমণে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে কালনা মহকুমার চাষিদের। এই দুই পোকার হামলা ক্রমশ বাড়তে থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। চাষিদের দাবি, পোকার হামলায় বেশিরভাগ জমিতে গাছের উপরি ভাগের নরম ডগা কাটা পড়ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০১:০৬
ভেঙে যাচ্ছে পাটগাছের ডগা।—নিজস্ব চিত্র।

ভেঙে যাচ্ছে পাটগাছের ডগা।—নিজস্ব চিত্র।

পাট জমিতে ক্ষতিকারক ঘোড়া পোকা এবং মাকড়ের আক্রমণে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে কালনা মহকুমার চাষিদের। এই দুই পোকার হামলা ক্রমশ বাড়তে থাকায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। চাষিদের দাবি, পোকার হামলায় বেশিরভাগ জমিতে গাছের উপরি ভাগের নরম ডগা কাটা পড়ছে। পোকার গাছের পাতা খেয়ে নেওয়ার ফলে পাটের স্বাভাবিক ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কালনা মহকুমায় এবার পাটের চাষ হয়েছিল এলাকা জুড়ে। এবার এলাকায় পাট চাষ হয় ৭৫০০ হেক্টর জমিতে। মহকুমার যে পূর্বস্থলী-১ এবং ২ ব্লক ‘জুট জোন’ হিসাবে চিহ্ণিত, সেই এলাকাতেই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে আষঙ্কা করা হচ্ছে। পাট চাষ হয়েছে এমন জমি পূর্বস্থলী-২ ব্লকেই রয়েছে ৪১০০ হেক্টর এবং পূর্বস্থলী-১ ব্লকে ২৩০০ হেক্টর। এছাড়া, কালনা ১ ব্লকে ৪০০ হেক্টর, কালনা- ২ ব্লকে ৪৮০ হেক্টর এবং মন্তেশ্বরে ১০ হেক্টর পাট চাষ হয়েছে এবার। আর বেশিরভাগ জমিতে ফুট খানেকের উচ্চতায় গাছ মাথা তুলতে না তুলতেই শুরু হয়েছে বিপত্তি। চাষিদের দাবি, সবুজ পাট চারার পাতা খেয়ে নিচ্ছে ক্ষতিকারক ঘোড়া পোকারা।

চাষিদের কথায়, পোকার দাপটে গাছের পাতার অসংখ্য জায়গায় দেখা দিচ্ছে ছোট ছোট ফুটো। লাফিয়ে লাফিয়ে চলা ঘোড়া পোকা কেটে দিচ্ছে গাছের কচি ডগাও। কৃষি বিজ্ঞানে এই পোকাকে বলা হয়, ‘সেমিলুপার’। অত্যধিক গরমের সময়, এরা পাটের গোড়ায় লুকিয়ে থাকে। অন্য দিকে মাকড় থাকে পাতার তলায়। পূর্বস্থলী-২ ব্লকের পাট চাষি সাহেব সেখ পোকার আক্রমণে আতঙ্কিত হয়ে বলেন, জমিতে হঠাত্‌ করেই পোকার সংখ্যা বাড়তে দেখায়, খুব চিন্তায় আছি। জানি না, আদৌও ঘরে পাট তুলতে পারব কি না। কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকার দল তাড়ানো যাচ্ছে না! আরেক চাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, পোকার হামলায় চারা গাছের উপরের অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে, গাছের অন্য জায়গা থেকে শাখা-প্রশাখা বের হচ্ছে। এছাড়া শুয়োপোকার উপদ্রবও বেড়েছে পাট ক্ষেতে এবার। রোদের তাপে এমনিতেই ফুল শুকিয়ে ঝরে যাওয়ায় অনেক গাছের বৃদ্ধি থমকে রয়েছে, তার উপর এই পোকার প্রকোপ। স্বাভাবিক ভাবেই পোকার হামলা দীর্ঘস্থায়ী হলে পাট গাছ লম্বা হবে না। আর সঠিক উচ্চতায় গাছ লম্বা না হলে, পরিমাণ মতো ফলনও মিলবে না। সেক্ষেত্রে পাট তন্তুর পরিমাণ নিয়েও পাট চাষিদের মধ্য শুরু হয়েছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা।

পাট জমিতে ক্ষতিকারক দুই পোকার হামলার কথা স্বীকার করেছে মহকুমা কৃষি দফতর। দফতর সূত্রে খবর, সাম্প্রতিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং আদ্রতার কারণে ঘোড়াপোকা ও মাকড়ের বাড়বাড়ন্ত। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে, চাষিদের কীটনাশক কাজ করেনি পাট জমিতে। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা, পার্থ ঘোষ বলেন, এই হারে পোকার হামলা বাড়তে থাকলে পাট চাষে ক্ষতির চরম আশঙ্কা রয়েছে এবার। এখনই হাল না ছেড়ে সচেতন ভাবে চাষিদের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। কিছুটা ভারি বৃষ্টি হলে, চাষিদের পক্ষে পোকার দমন হয়তো সহজ হত। কিন্তু বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে, পোকার প্রকোপ থেকে পাট বাঁচাবার উপায় খুঁজতে হবে। দুই পোকা দমনে কি ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করবেন চাষিরা, কি বলছে কৃষি দফতর?

পার্থবাবু জানান, পোকা তাড়াতে নিম জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও প্রোফেনোফস জাতীয় কীটনাশকও ব্যবহার করা যেতে পারে। দুটি ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিলে, প্রতি লিটার জলে ২ এম এল মিশিয়ে সকাল এবং বিকালে স্প্রে করতে হবে। দুপুরের রোদে স্প্রে করলে, কার্যকারিতা কম হয় কীটনাশকের। এছাড়া স্প্রে করার সময় পর্যাপ্ত আঠা মেশাতে হবে। যাতে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় কীটনাশক।

jute cultivation horse-pest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy