ফাটল জমিতে। —ফাইল চিত্র।
সমস্যা চার দশকের পুরনো। কিন্তু সমাধান নেই এখনও। প্রতিশ্রুতি, পরিকল্পনাসবই হয়েছে। কাজের কাজ হয়নি। ফলে, কখনও মাটি ফাটার শব্দে ঘুম ভাঙে রাতে। কখনও ফাটল ধরে বাড়ির দেওয়ালে। কখনও আবার জ্বলন্ত গহ্বরে তলিয়ে যায় কিশোরী। আর খনি অঞ্চলের এই ধসের সমস্যাকে ভোটের সময়ে হাতিয়ার করে সব পক্ষ। বরাবরের মতো এ বারও প্রচারে তাকেই অন্যতম অস্ত্র করেছে দলগুলি।
কর্মিসভা, রোড-শো বা ঘরে ঘরে প্রচার আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস ও মাটির তলার আগুনের কথা সর্বত্র তুলছেন সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরী ও তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন, দু’জনেই। কেন এই সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না। কেনই বা অনুমোদনের পরেও পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না, সে সব নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরস্পরকে দোষারোপ করছে দু’পক্ষই।
কয়লা খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে বেশি লাভের আশায় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যেখানে-সেখানে কুয়ো খাদ তৈরি করে কয়লা কাটা হত। অথচ, ভূগর্ভের ফাকা অংশ বালি দিয়ে ভরাট করা হত না। আবার, মাটির উপরের অংশ ধরে রাখার জন্য খনিগর্ভে শালকাঠের খুঁটিও নিয়মমাফিক লাগানো হয়নি। খনি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যায়, এই অবস্থায় বহু এলাকা কার্যত শূন্যে ঝুলে রয়েছে। ফলে, মাঝে-মধ্যেই নানা জায়গায় ধসে নামে। ঘর-বাড়িতে ফাটল, এমনকী ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
সমস্যা বাড়িয়েছে অবৈধ কয়লা খনন। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কয়লা মাফিয়ারা মর্জিমাফিক যত্রতত্র খাদান তৈরি করে কয়লা তুলছে। ফলে, ধসের পাশাপাশি মাটির তলায় আগুনও ধরে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। তাঁদের মতে, ভূগর্ভে সঞ্চিত কয়লার স্তরে প্রচুর মিথেন আছে। অবৈধ কুয়ো খাদানগুলি দিয়ে অক্সিজেন কয়লার স্তরে পৌঁছে যায়। সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগুন ধরে তা ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। কখনও মাটি ফেটে বেরিয়ে আসছে সেই আগুন। কখনও ঘর-বাড়ি, এমনকী মানুষও তাতে পুড়ে যাচ্ছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সাঁকতোড়িয়ায় মাটি ফেটে জ্বলন্ত ভূগর্ভে তলিয়ে যান হেনা পারভিন নামের এক কিশোরী। এই ধস ও আগুন সমস্যায় বিপন্ন প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা।
ধস আগুন কবলিত প্রায় ১৪১টি এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়। আদালতের নির্দেশেই কয়লা মন্ত্রক ২০০৯ সালের জুনে ২৬২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট তা পাশও করে। ঠিক ছিল, পুনর্বাসনের পুরো প্রক্রিয়াটি রাজ্য সরকারের তরফে সম্পন্ন করবে এডিডিএ। টাকা ও কারিগরি সহায়তা দেবে ইসিএল। প্রাথমিক ভাবে ইসিএল প্রায় ১৫০ কোটি টাকা এডিডিএ-কে দেয়। সিদ্ধান্ত হয়, প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি গ্রামসামডিহি, কেন্দা, জামুড়িয়ার বাঙালপাড়া, হরিশপুর ও ডিসেরগড়ে এলাকার জনবিন্যাসের কাজ করে পুনর্বাসনের কাজ দ্রুত এগোবে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
খনি এলাকায় প্রচারে এ নিয়েই বেধেছে কাজিয়া। সিপিএম প্রার্থী বংশোগোপালবাবুর অভিযোগ, “আমরা এই দাবি বহু দিন ধরেই করছি। আমরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে ধস কবলিত এলাকার মানুষের পুনর্বাসনের জন্য জমি চিহ্নিত করেছি। জনবিন্যাসের কাজও অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত আড়াই বছর ধরে কিছুই হয়নি।” এই কাজ না হওয়ার জন্য আবার সিপিএমকেই তুলোধুনো করছেন তৃণমূল প্রার্থী দোলা। তাঁর দাবি, “সিপিএম এই ক’বছরে কিছুই করে যায়নি। আমরা আসার পরে প্রায় ২০টি জায়গা পুনর্বাসনের জন্য জমি দেখে রেখেছি। লোকসভা ভোটের পরেই সে কাজ দ্রুততার সঙ্গে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy