Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলে তৃণমূলের মিছিল পালিটায়

খুনে অভিযুক্তদের ধরার নামে বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ, ঘটনার পরে মাস ঘুরতে চলার মুখে এই অভিযোগ তুলে কেতুগ্রামের পালিটায় মিছিল করল তৃণমূল। ‘পুলিশি অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী, মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন থেকে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুই অভিযুক্তের স্ত্রী। পুলিশের অবশ্য দাবি, এই সব অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

খুনে অভিযুক্তদের ধরার নামে বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ, ঘটনার পরে মাস ঘুরতে চলার মুখে এই অভিযোগ তুলে কেতুগ্রামের পালিটায় মিছিল করল তৃণমূল। ‘পুলিশি অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী, মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন থেকে জেলার পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুই অভিযুক্তের স্ত্রী। পুলিশের অবশ্য দাবি, এই সব অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই।

গত ৩১ মে কেতুগ্রামের বাঁশরার তৃণমূল কর্মী সুনীল মাঝি বোমায় নিহত হন। তাঁর স্ত্রী কল্যাণী মাঝি পুলিশে অভিযোগ করেন, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের থেকে জোর করে টাকা আদায় করেন। গ্রামের কয়েক জন তার প্রতিবাদ করায় তৃণমূলের ওই সব লোকজন বাইরে থেকে লোক এনে গ্রামে বোমাবাজি করে। তাতেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয় বলে কল্যাণীদেবীর অভিযোগ। তিনি তৃণমূলের পালিটা অঞ্চল সভাপতি নান্টু খোন্দেকার, পালিটা পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী তারা খোন্দেকার, কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রেশমা বেগমের স্বামী লালন চৌধুরী-সহ ৩৫ জনের নামে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাত জনকে গ্রেফতার করে।

পালিটার বাসিন্দা, খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা লালন চৌধুরীর স্ত্রী রেশমা বেগম প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগ করেন, গত ৩১ মে রাত সাড়ে ৮টার সময়ে বৃদ্ধা শাশুড়ি আরিফা বিবি ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন। সেই সময়ে এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ বাড়িতে ঢোকে। পুলিশ লাঠি দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। প্রতিবাদ করলে তাঁকে ও তাঁর শাশুড়িকে মারধর করা হয় বলে তাঁর অভিযোগ। চিঠিতে তিনি আরও দাবি করেছেন, পুলিশ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগে তাঁদের হুমকি দিয়ে গিয়েছে। কোনও মহিলাকর্মী ছাড়াই সে দিন বাড়িতে ঢুকেছিলেন এসডিপিও। পুলিশের মারে আহত হওয়ার পরে তাঁরা চিকিৎসাও করান বলে ওই চিঠিতে লিখেছেন রেশমা বেগম।

আর এক অভিযুক্ত, তৃণমূলের পালিটা পঞ্চায়েতের সভাপতি নান্টু খোন্দেকারের স্ত্রী পারভিন বেগমও পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ করেছেন। পুলিশি অত্যাচারের প্রমাণ হিসেবে দাবি করে ক্যামেরাবন্দি করা কিছু দৃশ্যের সিডি-ও অভিযোগপত্রের সঙ্গে পাঠিয়েছেন তিনি। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ ওই দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘুরে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে এসডিপিও (কাটোয়া) এবং কেতুগ্রামের আইসি-র সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু এসডিপিও দাবি করেন, এই সব অভিযোগ সত্য নয়।

এ দিন সকালে পালিটা পঞ্চায়েত প্রধানের নেতৃত্বে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ‘পুলিশি অত্যাচার’ বন্ধের দাবিতে গ্রামে মিছিল করেন। ঘটনার এক মাস পরে এই মিছিলের কারণ কী? সিপিএমের ভাগরথী অজয়-জোনাল কমিটির সদস্য তপন কাজির মতে, “অভিযুক্তদের আড়াল করার জন্যই পুলিশের উপরে চাপ তৈরি করছে তৃণমূল।” বিজেপি-র জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অনিল দত্তের দাবি, “পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখাই তৃণমুলের প্রধান কাজ। কেতুগ্রামেও সেটাই করছে।”

এ দিন পালিটা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সামসাদ বেগমের অবশ্য বক্তব্য, “পুলিশ অভিযুক্তদের ধরুক আপত্তি নেই। কিন্তু অভিযুক্তদের ধরার নামে বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার, আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হবে কেন?” তাঁর স্বামীও দলের কর্মী খুনে অভিযুক্ত। অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়ে কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়কের দাবি, “পুলিশের সবাই জানে নান্টুরা জড়িত নয়। ঘটনার দিন তাঁরা কাটোয়ায় ছিল। তা সত্ত্বেও পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। অভিযুক্তদের কী ভাবে আদালতে আত্মসর্ম্পণ করানো যায়, সে ব্যাপারে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি।”

বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “অভিযোগ সম্পর্কিত বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

torture of police rally of tmc katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE