Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মখাজার স্বাদ কেড়েছে লেমন চপ

নতুন পোশাক ছাড়া যেমন পুজো হয় না, তেমনই মিষ্টি ছাড়া বিজয়ার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। শারদীয়া উৎসব শুরুর আগে এই হিসেবকে মাথায় রেখেই হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করতে শুরু করেছে কালনার বিভিন্ন বড় মিষ্টির দোকান। একুশ শতকের গোড়াতেও এই মহকুমার অনেক বনেদি বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাড়িতে ভিয়েন বসানো হত।

রকমারি মিষ্টি সাজাতে ব্যস্ত দোকানি। নিজস্ব চিত্র।

রকমারি মিষ্টি সাজাতে ব্যস্ত দোকানি। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

নতুন পোশাক ছাড়া যেমন পুজো হয় না, তেমনই মিষ্টি ছাড়া বিজয়ার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। শারদীয়া উৎসব শুরুর আগে এই হিসেবকে মাথায় রেখেই হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করতে শুরু করেছে কালনার বিভিন্ন বড় মিষ্টির দোকান।

একুশ শতকের গোড়াতেও এই মহকুমার অনেক বনেদি বাড়িতে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাড়িতে ভিয়েন বসানো হত। সেখানে রাত জেগে তৈরি করা হত মিষ্টি। পুজোর দিনগুলিতে অনেক বাড়িতেই নিমন্ত্রণ থাকত গোটা গ্রামের। সেখানে অন্যতম আকর্ষন ছিল মিষ্টি। এখন বনেদি পরিবারগুলির জৌলুষ কমেছে। তবে কালনাবাসীর দুর্গাপুজোর পাতে মিষ্টির কদর কমেনি একটুও।

শক্তিগড়ে যেমন ল্যাংচা, কালনায় তেমনই মাখা সন্দেশ এবং নোরা পানতুয়া। কালনা শহর এবং তার আশপাশের এলাকায় প্রায় ৫০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। প্রায় সারা বছরই এই দোকানগুলি থেকে দেদার মিষ্টি বিক্রি হয়। ছানা ও দুধের পর্যাপ্ত জোগান থাকায় মিষ্টি তৈরিতেও কোনও সমস্যা হয় না। পুজোর মরসুম এলেই মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বিক্রি অনেকটাই বেড়ে যায়।

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর আগেও উৎসবের মরসুমগুলিতে মোটা রসের রসগোল্লা, পানতুয়া এবং ল্যাংচার চাহিদা বেশি ছিল। দেদার বিক্রি হত পদ্ম খাজার মত মিষ্টি। এখন ক্রেতাদের চাহিদা অনেকটাই বদলেছে। বেশির ভাগ ক্রেতাই দোকানে এসে ‘সুগার ফ্রী’ মিষ্টির খোঁজ করেন। সে কথা মাথায় রেখেই এ বার তৈরি হচ্ছে দুধ এবং ক্ষীরের হরেক রকমের মিষ্টি। কালনা শহরে ঢোকার মুখে নিভুজি বাজার মোড়ের একটি ঝাঁ চকচকে মিষ্টির দোকানে এবার পুজোর দিনগুলিতে থাকছে কেশর কালাকাঁদ, স্পেশাল গোলাপ জামুন, বাবু সন্দেশ, পিঠা পুলিক্ষীরের সিঙারা, সরের সিঙারা-সহ বেশ কিছু লোভনীয় মিষ্টি। ওই মিষ্টির দোকানের মালিক দেবরাজ বারুই জানান, মিষ্টির সঙ্গেই আমৃত্তি নামে এক ধরনের জিলিপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কলাইয়ের ডাল বেঁটে তৈরি হয় এই জিলিপি। ষষ্ঠীর দিন থেকেই তৈরি হবে এই জিলিপি। যাঁরা নোনতা খাবার পছন্দ করেন তাঁদেরও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। পুজোর দিনগুলিতে সাবেকি মিষ্টির সঙ্গেই দেখা মিলবে চাইনিজ সিঙারা, নিমকির, এমনই জানাচ্ছেন দেবরাজবাবু।

এখনও শীত পড়েনি। তার আগেই পুজোর মধ্যেই নলেন গুড়ের স্বাদ দিতে কালনা শহরের সাউ সরকার মোড়ের কাছে একটি মিষ্টির দোকানের মালিক নদিয়ার পলাশি থেকে স্পেশাল গুড় আনিয়েছে। এই দোকানের পুজোর মেনুতে থাকছে বাটার রোল, ক্ষীররোল, সরপুরিয়া, ক্যাডবেরি সন্দেশ, স্টবেরি বরফি, সাগরিকা, ক্ষীরের ফুড পায়েস। অষ্টমীর দিন তৈরি করা হবে স্পেশাল রাবরি। ওই মিষ্টির দোকানের মালিক দেবাশিস সাহা বলেন, “বর্তমানে ছানা, ময়দা, চিনি-সহ মিষ্টি তৈরির উপকরণের দাম চড়া। তবে নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই উৎসবের মরসুমে মিষ্টির দাম রাখা হয়েছে নাগালের মধ্যে।” বৈদ্যপুর মোড়ের একটি মিষ্টির দোকানের মালিক বিকাশ ঘোষের দাবি, “ভাইফোঁটা পর্যন্ত প্রায় ৬০ রকমের মিষ্টি মিলবে আমাদের দোকানে। এর মধ্যে রয়েছে চন্দ্রপুলি, ক্ষীরচপ, লেমন চপ, চাপ সন্দেশ, সরপুরিয়া, রসমাধুরি, খাস সন্দেশ, চাপ সন্দেশ, বাটা সন্দেশ ও ক্যাডবেরি সন্দেশ। কালনার নিভূজি মোড়ের মিষ্টির দোকানের মালিক দেবরাজ বারুইয়ের কথায়, “নতুন ধরনের মিষ্টির প্রতি কালনার মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। ক্রেতাদের কথা ভেবে বহু দোকানই হরেক রকমের মিষ্টি নিয়ে এনেছে।”

হরেক মিষ্টির আমেজে মজে শারদোৎসবকে আরও মিঠে করে তুলতে চায় কালনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kadernath bhattacharya kalna pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE