Advertisement
E-Paper

পরিচয়পত্র পেতে নাকাল জেলার বিড়ি শ্রমিকেরা

বিড়ি শ্রমিকদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া ও তা নবীকরণের কোনও কার্যালয় নেই জেলায়। ফলে পরিচয়পত্র পেতে মুশকিলে পড়ছেন বিড়ি শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, হয় নদিয়া নয় বাঁকুড়ায় গিয়ে আবেদন করতে হয় তাঁদের। ফলে একদিকে, যাতায়াতের হয়রানি অন্যদিকে খরচের বোঝা বইতে হয় তাঁদের। এছাড়া বিড়ি শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধে, যেমন চিকিত্‌সায় সুবিধে, বাড়ি তৈরির খরচ সে সবও নিয়মিত মেলে না বলে তাঁদের অভিযোগ।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৮
ঘরের কাজের ফাঁকে একসঙ্গে বসে বিড়ি বাঁধছেন মহিলারা। কালনার ডাঙাপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

ঘরের কাজের ফাঁকে একসঙ্গে বসে বিড়ি বাঁধছেন মহিলারা। কালনার ডাঙাপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিড়ি শ্রমিকদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া ও তা নবীকরণের কোনও কার্যালয় নেই জেলায়। ফলে পরিচয়পত্র পেতে মুশকিলে পড়ছেন বিড়ি শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, হয় নদিয়া নয় বাঁকুড়ায় গিয়ে আবেদন করতে হয় তাঁদের। ফলে একদিকে, যাতায়াতের হয়রানি অন্যদিকে খরচের বোঝা বইতে হয় তাঁদের। এছাড়া বিড়ি শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধে, যেমন চিকিত্‌সায় সুবিধে, বাড়ি তৈরির খরচ সে সবও নিয়মিত মেলে না বলে তাঁদের অভিযোগ।

শ্রম দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এ জেলায় প্রায় ৬০ হাজার বিড়ি শ্রমিক রয়েছে। তাঁদের কেউ সরাসরি মালিকের কারখানায় কাজ করেন। আবার কেউ কারখানা থেকে বিড়ির মশলা, পাতা, সুতো বাড়িতে এনে নিজের সুবিধে মতো বিড়ি বাঁধেন। এ ক্ষেত্রে হাজার বিড়ি পিছু টাকা পান তাঁরা। বর্ধমানের বহু গ্রামেই বাড়ির কাজের ফাঁকে বিড়ি বেঁধে দু’পয়সা বাড়তি রোজগার করেন মেয়ে-বউরা। অনেকে পুরোদস্তুর পেশা হিসেবেও ওই কাজ করেন। এককথায় গ্রামীণ বর্ধমানে বিড়ি বাঁধা বিকল্প রোজগারের একটা উপায়।

বিড়ি শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা কোন এলাকার বাসিন্দা, কত দিন ধরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত ইত্যাদি নথি-সহ লিখিত ভাবে আবেদন পেশ করার পরে পরিচয়পত্র পান তাঁরা। পরিচয়পত্র থাকলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধেও মেলে। যেমন, বিনামূল্যে বাড়িতে বিদ্যুত্‌ সংযোগ, নতুন ঘর তৈরির জন্য সরকারি অনুদান পেতে পারেন তাঁরা। এছাড়া কোনও মহিলা বিড়ি শ্রমিকের নিজের নামে বাড়ি, জমি থাকলে ব্যাঙ্ক ঋণে সুবিধাও পান তিনি। তাছাড়া বিড়ি শ্রমিকদের চিকিত্‌সা, তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য বেশ কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধাও মেলে। শ্রমিকদের দাবি, ২০০৮ সাল পর্যন্ত মহকুমা শ্রম দফতর থেকেই পরিচয়পত্র দেওয়া হত। তবে ২০০৯ থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন শ্রম ও কর্মনিয়োগ কার্যালয় থেকে পরিচয়পত্র মিলবে। এরপরেই শুরু হয় সমস্যা। জেলায় এ ধরণের কার্যালয় না থাকায় পরিচয়পত্র হাতে পেতে মুশকিলে পড়েন বিড়ি শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের দাবি, বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের জোনাল অফিস বাঁকুড়া এবং নদিয়া জেলায় দৌড়তে হয় তাঁদের। সাধারণত, কালনা ও কাটোয়া মহকুমার বিড়ি শ্রমিকেরা পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন জানান নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। আর জেলার বাকি অংশের শ্রমিকেরা এই কাজ করেন বাঁকুড়া জেলায় গিয়ে।

তবে ভিন জেলায় পরিচয়পত্র আনতে গিয়ে যথেষ্ট হয়রান হতে হয় বলে বিড়ি শ্রমিকদের দাবি। একদিকে সারাদিন চলে যায় যাতায়াতে, আবার মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ হয়। চলতি বছরে পরিচয়পত্র প্রতি বছর নবীকরণ করার নিয়ম চালু হওয়ায় এই সমস্যা আরও বেড়েছে বলেও ওই শ্রমিকদের দাবি। কালনার এক বিড়ি শ্রমিক পূর্ণিমা দেবনাথ জানান, স্বামী সব্জি বিক্রেতা। তাঁকে সাহায্য করে, বাড়ির কাজ সেরে দুপুর আর রাতে বিড়ি বাঁধার কিছুটা সময় পান তিনি। জেলায় কার্যালয় না থাকায় পরিচয়পত্র নবীকরণ করতে যেতে সমস্যায় পড়ছেন তিনি। পূর্বস্থলীর এক বিড়ি শ্রমিক কার্তিক দে বলেন, “জেলার মাঝামাঝি জায়গায় একটি সরকারি কার্যালয় হলে ভাল হয়।” তবে এ ব্যপারে বহু দিন ধরে আবেদন করেও কোনও ফল মেলেনি বলে জানান তিনি। কালনার ডাঙাপাড়া এলাকার বিড়ি শ্রমিক সালমা বিবি, মুনিয়া বিবি, চম্পা রাজবংশীদেরও অভিযোগ, সরকারি পরিচয়পত্রে তাঁদের জন্য যা যা সুবিধা রয়েছে তা ঠিকমতো পান না তাঁরা। যেমন, চিকিত্‌সা সংক্রান্ত সুবিধার কথা বলা হলেও জেলার কোনও হাসপাতালে সেই সুবিধে মেলে না। এমনকী স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে গেলেও কলকাতায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এছাড়া বাড়ি করার টাকা বরাদ্দ হলেও তা ধাপে ধাপে মেলায় সমস্যা হয় বলেও তাঁদের দাবি। তবে শুধু বিড়ি শ্রমিকরাই নন, বিড়ি কারখানার মালিকেরাও শ্রমিকদের জন্য এ জেলায় একটি সরকারি কার্যালয় চান। তাঁদের এক জন জয়ন্ত মজুমদারের কথায়, “জেলা থেকে কার্ড মিললে একটা কাজের দিন নষ্ট হবে না শ্রমিকদের।”

সম্প্রতি বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুনীল মণ্ডল কালনায় একটি অনুষ্ঠানে এলে তাকে বিড়ি শ্রমিকেরা হয়রানির কথা জানান। জেলায় একটি কার্যালয় খোলারও দাবি তোলেন। সাংসদের আশ্বাস, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। শ্রমিকদের সমস্যার কথা মেনেছে জেলা পরিষদও। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “বিড়ি শ্রমিকদের একটা বড় অংশকে পরিষেবার জন্য বাঁকুড়া জোনাল অফিসের উপর নির্ভর করতে হয়। তবে পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে।” কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, জেলায় কার্যালয় থাকলে সরকারি নানা বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়। বিড়ি শ্রমিকদের সমস্যার কথা প্রশাসনের উপর মহলে জানানো হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

kedarnath bhattacharya kalna biri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy